নাদিম্বো ট্রায়ো: বাংলাদেশে ল্যাটিন নৃত্যের প্রবর্তক যিনি!
একটা প্রশ্ন দিয়েই বরং শুরু করি। নাচতে যারা ভালোবাসেন, তারা কেন নৃত্যকলার চর্চা করেন? কেবল মনের খোরাক মেটানোর জন্য? নাকি নাচ আপনাদের কাছে চিত্তশুদ্ধির উপায়? উত্তর যাই হোক না কেন, আজ আপনাদের এমন একজনের গল্প শোনাব, যিনি কিনা দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নাচকে ব্যবহার করেন সুস্থ জীবনযাপনের কৌশল হিসেবে।
নাচের মাধ্যমে উপস্থাপিত করেন দৈনন্দিন জীবনের শৃঙ্খলা; পরিস্ফুটিত করেন জীবন দর্শন- যা মূলত 'লাইফ স্টাইল এডুকেশন' হিসেবে পরিচিত।
এতক্ষণ ধরে বলছিলাম- শিল্পী কামরুল ইসলাম নাদিম (ট্রায়ো নাদিম্বো), 'নাদিম্বো ওয়ার্ল্ড' এর প্রতিষ্ঠাতার কথা। নান্দনিকতার সম্মিলনে যিনি বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষকে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে পাশ্চাত্য নৃত্য শেখানোর কাজ করে যাচ্ছেন।
বলাই বাহুল্য, নব্বইয়ের দশকে তার হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পাশ্চাত্য নৃত্যের চর্চা তথা- ল্যাটিন বা বলরুম বা স্ট্রিট ড্যান্সের চর্চা।
এক্ষেত্রে তিনি বেছে নিয়েছেন শিল্পের শুদ্ধ ও সঠিক রূপ-ইতিহাস। ভিজ্যুয়াল আর্ট, সঙ্গীত ও ল্যাটিন নৃত্য তিনটির মেলবন্ধনে তৈরি করেছেন নিজ প্রতিষ্ঠান- নাম দিয়েছেন 'নাদিম্বো ওয়ার্ল্ড'। এই তিনটি শিল্পের চর্চা যেহেতু কামরুল ইসলাম নাদিম নিজেই করান- তাই তিনি 'নাদিম্বো ট্রায়ো' হিসেবেই পরিচিত।
উপমহাদেশের ধ্রুপদী নৃত্য বললেই চোখের সামনে ভেসে আসে কত্থক, ভারতনাট্যম কিংবা কুচিপুড়ির কথা। তার উপর উপমহাদেশীয় নৃত্য হওয়ায় সেগুলোর জনপ্রিয়তাও অপেক্ষাকৃত বেশি। সেই জায়গা থেকে একেবারে ভিন্ন স্রোতে গা ভাসিয়েছেন নাদিম্বো ট্রায়ো। যত্ন করে শেখাচ্ছেন স্পোর্টড্যান্স বা ক্রীড়ানৃত্য; আর সেখানেই ঠাঁই পেয়েছে– বল, ওয়াল্টজ, সালসা, ট্যাঙ্গো, চা চা চা, বাচাতার মতো নাচ। আর এই শেখানোর কাজটি তিনি করে থাকেন 'নাদিম্বো স্পোর্ট ড্যান্স ইন্সটিটিউট' এর মাধ্যমে। নাদিম ফাউন্ডেশনের অধীনে এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে।
তাহলে স্পোর্টড্যান্স কী!
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে স্পোর্টড্যান্স কী? স্পোর্টড্যান্স হলো এমন একটি ক্রিয়াকলাপ, যেখানে নৃত্যের সাথে যুক্ত থাকে নানাবিধ শারীরিক কসরত। সুস্থ জীবনধারা চর্চায় স্পোর্টড্যান্সের জুড়ি মেলা ভার। এটি শারীরিক এবং মানসিক উভয় সুস্থতা নিশ্চিতে কাজ করে।
বাংলাদেশে ব্যাপক পরিসরে স্পোর্টড্যান্সের প্রচার না থাকলেও বৈশ্বিকভাবে এর কদর অনেক বেশি। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই স্পোর্টড্যান্সকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী আয়োজন করা হতো নানারকমের প্রতিযোগিতা। ১৯০১ সালে প্রথমবারের মতো বলরুম নাচের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল প্যারিসে। ১৯০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্পোর্টড্যান্স ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্পোর্টড্যান্সের পরিসর আরো বেড়ে যায়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড প্রমুখ দেশে এর চর্চা অনেক বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৭ সালে প্রথম বলরুম নাচের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সোভিয়েত অঞ্চলে। ১৯৬০ সালে স্পোর্টড্যান্স প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়, যা অগণিত দর্শকের মন কেড়ে নেয়।
স্পোর্টড্যান্স সরাসরি অলিম্পিকের অংশ না হলেও, আসন্ন ২০২৪ সালের অলিম্পিকের ব্রেকিংড্যান্স স্থান দখল করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৯০ সাল থেকে স্পোর্টড্যান্স শেখানোর কাজ করছেন নাদিম্বো ট্রায়ো।
ব্যক্তিত্ব গঠনে স্পোর্টড্যান্স!
কামরুল ইসলাম নাদিমের (নাদিম্বো ট্রায়ো) মতে, ল্যাটিন নৃত্যের সঠিক রূপ যখন মানুষ শিখতে পারে, তখন সেটি তার জীবনধারার মধ্যে ইতিবাচকভাবে প্রকাশ পায়। ব্যক্তিত্ব গঠনে কাজ করে এটি, যা তাকে রাজকীয়ভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন-ও এই নৃত্যের অন্যতম আধার হিসেবে কাজ করে। নাদিম বলেন, 'এই নাচ মানুষের মনের মধ্যে বিশুদ্ধতা এনে দেয়। চোখের পর্দা তৈরি করতে সাহায্য করে।' এছাড়াও ব্যক্তির মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস তৈরি করে তার মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এই শিল্প।
কামরুল ইসলাম নাদিমের (নাদিম্বো ট্রায়ো) ভাষ্যমতে, বলরুম অথবা ল্যাটিন নাচের ঘরানার মধ্যে যত-রকমের নাচ আছে, সেগুলো বিশ্বব্যাপী ভীষণ জনপ্রিয়। তাই নানাবিধ মুদ্রাসমৃদ্ধ এই নৃত্যগুলো করতে হলে কেবল নির্দিষ্ট কিছু মুদ্রা শিখলেই চলে না, বরং এগুলোর জন্য বিশেষ মন, মানসিক ভাবনার প্রয়োজন হয়। যদি কিছু শৃঙ্খলার মাধ্যমে এই নৃত্যের চর্চা সম্ভব হয়, তাহলেই ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে শিল্পের সঠিক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারবে।
ইনস্টিটিউট'কে সেরকম প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করার ইচ্ছা কামরুল ইসলাম নাদিম ওরফে নাদিম্বো ট্রায়োর। আর সম্পূর্ণ কাজটিই তিনি করতে চান– শিল্পের মাধ্যমে।
এ ছাড়া এই নৃত্যের ধরন চিকিৎসার উপায় হিসেবেও কাজ করে বলে মনে করেন নাদিম। তার দাবি, 'নিয়মিত ল্যাটিন নাচ চর্চা করলে ব্রেনস্ট্রোকের মতো কঠিন রোগও প্রতিরোধ সম্ভব। শুধু তাই নয়, এই নৃত্যগুলো বিষণ্ণতা দূর করে আত্মহত্যা রোধ করতেও অনেক কার্যকরী। এমনকি জীবনকে আত্মবিশ্বাসের সাথে নতুন করে সাজাতেও ল্যাটিন নৃত্য ব্যাপকভাবে সাহায্য করে'।
শিল্প মানুষের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে; কিন্তু তা যখন পরিপূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করে তখনই শিল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয়। আর এই পরিপূর্ণতার কাজই করে থাকেন নাদিম্বো ট্রায়ো।
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে দীর্ঘ ত্রিশ বছরের গবেষণা। এদেশে বসবাসকারী দেশি-বিদেশি নাগরিকের কল্যাণে যা ব্যবহৃত হচ্ছে।
শুরুর নেপথ্য গল্প
কামরুল ইসলাম নাদিম ওরফে নাদিম্বো ট্রায়োর শিল্প কিংবা সংস্কৃতির প্রতি দর্শন তৈরি হয়–ভারতের দিল্লিতে থাকাকালীন। বাংলাদেশ দূতাবাসে বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই দিল্লিতেই ছিল তার বেড়ে ওঠা। দিল্লির সাংস্কৃতিক পরিবেশ তাকেও সংস্কৃতিমনা করে তোলে। ফলাফল হিসেবে পাশ্চাত্যের সঙ্গীত ও নৃত্যের সাথে সখ্যতাও তৈরি হয় ছোটবেলাতেই।
বাল্যকালে স্কুলে সৃজনশীল চর্চা তাকে দূরদর্শী হতে সাহায্য করেছে। সঙ্গীতের প্রতি টান থাকায় সেসময়ই আয়নার সামনে গানের তালে নানাবিধ অঙ্গভঙ্গি করতেন। পাশ্চাত্যের নাচের উপযোগী শারীরিক গঠন হওয়ায় তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। নাচের প্রতি এভাবেই শুরু হয়েছিল– তার ভালো লাগা।
পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ থাকায়– দিল্লির পাট চুকিয়ে দেশে ফেরার পর করেছিলেন সঙ্গীতের কোর্স। কেডিআইবি প্রজেক্টের অধীনে, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক স্কুল থেকে শিখেছেন পাশ্চাত্যের সঙ্গীত। ল্যাটিন নৃত্যের প্রায় ২০-২৫ ধরনের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি শিখেছেন মনোযোগ দিয়ে। এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেছিল, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের কালচারাল সেন্টার। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী হওয়ায়– নান্দনিকতার মননও তৈরি হয়েছিল সেসময়।
নাদিম্বো ওয়ার্ল্ডের চিন্তাভাবনা ও কাজ শুরু হয় ৩২ বছর আগে, ১৯৯০ সালে। তখন তিনি সবে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার বাসনা মনের মধ্যে ছিল। তাই কালক্ষেপণ না করেই লেগে পড়েছিলেন কাজে। প্রথম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল– নাদিম ইউরোএশিয়া সিইডিও। সিইডিও এর পূর্ণরূপ ছিলো 'কালচারাল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন'।
পরবর্তী সময়ে নাদিম ইউরোএশিয়া সিইডিও নামের পরিবর্তে নতুন নাম হয়- নাদিম ইউরোএশিয়া সিইডিস অরগানাইজেশন। নতুনভাবে সিইডিস এর পূর্ণরূপ দাঁড়ায় 'কালচারাল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি'। কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ার পর নতুন নাম দাঁড়ায় 'নাদিম ফাউন্ডেশন'।
২০১৭ সালে চতুর্থ ধাপে নাম বদলায়, নতুন নাম হয় 'নাদিম্বো ওয়ার্ল্ড'। এখন নাদিম্বো ওয়ার্ল্ডের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে 'নাদিম্বো ড্যান্স অ্যান্ড স্পোর্টস ইন্সটিটিউট' এর মাধ্যমে ল্যাটিন নাচ শেখানোর কাজ চলছে।
নব্বই দশকের যাত্রা
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাত্রার সূচনা করেছিলেন তিনি।
২০০২ সালের পর শুরু হয় একক পদযাত্রা; শেখাতে শুরু করেন সালসা, ম্যারিঙ্গে প্রভৃতি ধরনের নাচ। তবে শুরু থেকেই ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল, তাই নিয়মিত শিক্ষার্থীরাও শিখতে আসতেন তার কাছে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ হাইকমিশন ক্লাবে, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে, নর্ডিক ক্লাবে, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজে শেখাতেন। ২০০৩ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শেখাচ্ছেন।
বর্তমানে নাদিম্বো ট্রায়োর কাছে ১০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ল্যাটিন নাচ শেখেন। প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় এক চুলও ছাড় দেন না। তবে যারা তার কাছে নাচ শিখতে আসেন, তাদেরকে প্রথমে নৃত্যের সঠিক ইতিহাস ও নৃত্যের মাধ্যমে জীবনধারায় কীভাবে পরিবর্তন আসে– সেটির বিষয়ে কাউন্সিলিং করানো হয়। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানের অধীনে তাদেরকে শেখানো হয়।
শিক্ষার্থীদের শেখানোর ক্ষেত্রেও থাকে নাদিম্বো ট্রায়োর পূর্ণ নজর। প্রত্যেকটি বিষয় হাতে ধরে শেখান। প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে মনোযোগী হয়ে শেখে, সেদিকে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন।
সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও নাদিম্বো ট্রায়োর শিক্ষার্থীর তালিকায় বিদেশি দূতাবাসের বিভিন্ন কূটনীতিকও রয়েছেন। বর্তমানে ১০-১২ জন কূটনীতিককে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ল্যাটিন নৃত্যের উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আমেরিকান এম্ব্যাসি এমপ্লয়িজ এ্যাসোসিয়েশন যেটি সংক্ষেপে আমেরিকান ক্লাব নামে পরিচিত– সেখানে সালসা নাচের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
ল্যাটিন নাচের রকম-সকম!
বর্তমানে নাদিম্বো স্পোর্টস ড্যান্স ইন্সটিটিউটে (এনএসডিআই) চারটিভাগে স্পোর্টড্যান্স বা ক্রীড়ানৃত্য শেখানো হচ্ছে। এগুলো হলো- বলরুম, ল্যাটিন রিদম, স্ট্রিট ফর্ম ও অন্যান্য।
বলরুম অংশে রয়েছে- ওয়াল্টজ, ফক্স ট্রট, কুইকস্টেপ; ল্যাটিন রিদম অংশে রয়েছে- সালসা, ট্যাঙ্গো, চা চা চা, বাচাতা, ম্যারিঙ্গে, লাম্বাডা। স্ট্রিটফর্মের মধ্যে রয়েছে- ব্রেকড্যান্স, হিপহপ, হ্যামার প্রভৃতি। অন্যান্য অংশে রয়েছে- জুম্বা, টুইস্ট, বেলি ড্যান্স, ফ্ল্যামিঙ্কো, ট্যাপড্যান্স প্রভৃতি।
নাদিম্বো স্পোর্টস ড্যান্স ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন মেয়াদের কোর্স চালু রয়েছে। প্রাথমিকভাবে চার মাসের মেয়াদি কোর্স এক সেমিস্টার হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে চার মাসের কোর্সের সময়সীমা ৪০ ঘন্টা।
এছাড়াও রয়েছে ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর মেয়াদি কোর্স। ছয় মাস মেয়াদি কোর্সকে বলা হয় মিডিয়া কমার্শিয়াল কোর্স; এক বছর মেয়াদি কোর্সকে বলা হয় শর্ট টার্ম ডিপ্লোমা; দুই বছর মেয়াদি কোর্স ফাউন্ডেশন সার্টিফিকেট কোর্স হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি কোর্স শেষে এখানে শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হয়।
বয়সের ক্ষেত্রে এখানে ভর্তি হতে কোনো বাধা নেই। যেকোনো বয়সের মানুষই এখানে এসে শিখতে পারবে।
তৈরি করতে চান ইনস্টিটিউশনাল পার্ক
প্রচারবিমুখ স্বভাবের নাদিম্বো ট্রায়ো আপনমনেই নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালে নাদিম্বো ট্রায়োর পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। তিনি বলেন, 'সামনের বছর আমি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে হয়তো পদার্পণ করবো। যারা শেখেন তাদের মধ্যে বিদেশি সদস্য ৫০%, আর বাকি ৫০% বাংলাদেশি সদস্য। দেশের ভেতরেই আমি ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষকে যখন সিলেবাসের আওতায় আনতে পেরেছি, এতে আমার গবেষণা সঠিক পথে যাচ্ছে।'
নাদিম্বো ওয়ার্ল্ডকে ওয়েলবিং ইন্সটিটিউশনাল পার্ক হিসেবে তৈরি করতে চান এর কর্ণধার। নাদিম্বো ট্রায়ো জানান, 'এর ভেতরে বিভিন্ন সৃজনশীল বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি থাকবে, যেমন- অনার্স, ডিপ্লোমা ডিগ্রি, সংক্ষিপ্ত কোর্স, কর্মশালা ইত্যাদি।'
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে এখান থেকে যারা শিখে বের হচ্ছেন তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনাও নাদিম্বোর আছে। তার মতে, আন্তর্জাতিক শিল্পকে মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনে নিয়ে আসার জন্য এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।
২০১৭ সাল থেকে বিষয়ভিত্তিক নৃত্য, অর্কেস্ট্রেশন ও সঙ্গীতের সমন্বয়ে বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তিনি বেছে নিয়েছেন পাশ্চাত্য ও দেশীয় যন্ত্রসঙ্গীত; পাশাপাশি ল্যাটিন নৃত্যকে যুক্ত করেছেন। এই পুরো বিষয়টি নাদিম্বো ওয়ার্ল্ডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান 'নাদিম্বো অ্যান্ড ব্যান্ড' এর ব্যানারে প্রকাশিত হবে।
বর্তমানে নাদিম্বো ড্যান্স অ্যান্ড স্পোর্টস ইন্সটিটিউটে ১০ জন কর্মরত আছে। নাদিম্বো ড্যান্স অ্যান্ড স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে কেউ শিখতে চাইলে তাকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে বলে জানিয়েছেন এর কর্ণধার।
আশেপাশ থেকে অনেকসময় বাধা আসলেও হার মানেননি নাদিম্বো। যখন তিনি শুরু করেছিলেন, তখনও যেমন কিছু মানুষের মধ্যে রক্ষণশীল মনোভাব ছিল- এখনও আছে। তা সত্ত্বেও নিজ তাগিদে অবিচলভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।