ড্রাকুলা বাস্তবে কেমন ছিলেন? সাড়ে পাঁচশ বছর পুরনো চিঠি থেকে বের করা হচ্ছে তার ব্যক্তিগত চরিত্র
মে মাসের এক অন্ধকার আর ঝড়ো দিনে, ঠিক ১২৫ বছর আগের যেরকম এক দিনে ব্রাম স্টোকার তার ড্রাকুলা উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিলেন, ট্রানসিলভানিয়ার এক পুরনো রুমে দুজন ব্যক্তি ৫০০ বছরেরও বেশি আগের এক ডকুমেন্ট নিয়ে পড়ে আছেন, যার নিচে স্বাক্ষর রয়েছে স্বয়ং ড্রাকুলার।
গ্লেব আর সভেতলানা জিলবারস্টাইনের উদ্দেশ্য? ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলার জন্য যার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, সেই ভ্লাদ ড্রাকুলার লেখা চিঠি থেকে তার ঘাম, আঙুলের ছাপ আর লালার মতো জেনেটিক উপাদান খুঁজে বের করা।
আর এর মাধ্যমে এই দুই 'প্রোটিন ডিটেকটিভ', যারা নিজেদেরকে 'ঐতিহাসিক রসায়নবিদ' হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, ভ্যালাকিয়ান রাজা ভ্লাদ 'দ্য ইমপেলার'-এর মুখের চেহারা কেমন ছিল তা তো বের করতে পারবেনই, একইসাথে তিনি কেমন পরিবেশ বাস করতেন তা-ও বের করা সম্ভব হবে।
"এটা অদ্ভুত যে ১২৫ বছর আগের ঠিক যেদিন ব্রাম স্টোকার তার ড্রাকুলা উপন্যাস প্রকাশ করেছিলন ঠিক সেদিনই আমরা ড্রাকুলার জেনেটিক উপাদান বের করছি," গ্লেব জিলবারস্টাইন জানালেন। "আমরা এই তারিখ আগে থেকেই নির্ধারণ করে আসিনি। সারারাত ধরে আমরা যখন ঘরে কাজ করছিলাম, তখন বাইরে একাধারে বৃষ্টি পড়ছে, কুকুর ডাকছে আর থেকে থেকে বাজ পড়ছে। এটা খুবই রহস্যময় এক পরিবেশ। কাউন্ট ড্রাকুলা রোমানিয়ান আর্কাইভ থেকে বের হওয়ার জন্য এরকমই এক রাত বেছে নিয়েছেন।"
জিলবারস্টাইনদ্বয়ের মতে, "আমাদের কাজ হলো ঐতিহাসিক বস্তুটি তৈরি করার সময় থেকে বা সেটি কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তি দ্বারা ব্যবহার করার সময় থেকে যে জৈব রাসায়নিক চিহ্নগুলো অবশিষ্ট আছে তা খুঁজে বের করা। যখন কোনো ঐতিহাসিক জৈব রাসায়নিক পাওয়া যায়, আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করা শুরু করি, যার মধ্যে রয়েছে এই রাসায়নিকগুলর বয়স কত এবং এগুলো কী দিয়ে তৈরি। আমরা মূলত প্রোটিন আর মেটাবলাইটগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। কারণ এই অণুগুলো ডিএনএ-র তুলনায় বেশি স্থায়ী এবং যে ঐতিহাসিক ব্যক্তির জৈব রাসায়নিক খুঁজে বের করা হবে তার স্বাস্থ্য, জীবনধারা, তার দেহের পুষ্টি এবং তিনি যে পরিবেশে বাস করেন তা সম্পর্কে বেশি তথ্য দিয়ে থাকে।
জিলবারস্টাইন দম্পতি কাজাখস্থানে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং গত ২৬ বছর ধরে তারা ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে কাজ করছেন। ইউনিভার্সিটি অফ মিলানের প্রফেসর পিয়ের জর্জিও রিঘেটির সাথে তারা আবিষ্কার করেছেন এমন এক বিশ্লেষণী পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কয়েক শতক আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির ব্যবহার করা বস্তু থেকে প্রোটিন বের করে আনা সম্ভব। তাদের প্রথম এক্সপেরিন্টমেকৃত বস্তু ছিল সোভিয়েত লেখক মিখাইল বুলগাকভের লেখা 'দ্য মাস্টার অ্যান্ড মার্গারিটা'র আসল পাণ্ডুলিপি।
গ্লেব জিলবারস্টাইন জানান,"আমরা বুলগাকভের পাণ্ডুলিপি থেকে মরফিনের ট্রেস খুঁজে পেয়েছি একইসাথে কিডনির ব্যথা নিরাময়ের জন্য প্রোটিন খুঁজে পেয়েছি। এখান থেকে বোঝা যায় তিনি কিডনির ব্যথায় ভুগছিলেন এবং তা থেকে মুক্তির জন্য নেওয়া মাদকের ঘোরে তিনি এটি লিখেছিলেন।"
"বুলগাকভের পর আমরা আন্তন চেখভের মৃত্যুর সময় তার পরিহিত শার্ট এবং তার লেখা শেষ চিঠি বিশ্লেষণ করি। চেখভ যক্ষায় ভুগছিলেন এবং ব্যথা কমানোর জন্য বেশ কিছু ওষুধ খেতেন। তবে তিনি মারা গিয়েছিলেন স্ট্রোক করে। চেখভের পর আমরা জর্জ অরওয়েলের মস্কোতে লেখা চিঠিও বিশ্লেষণ করে যক্ষার প্রমাণ খুঁজে পাই, সেটি স্পেনে থাকাকালীন তার শরিড়ে প্রবেশ করেছিল।"
ভ্লাদ ড্রাকুলার ক্ষেত্রে তারা সিবিউয়ের জনগণের প্রতি ভ্লাদ ড্রাকুলার একটি চিঠির ওপর কাজ করছেন, যেটী বর্তমানে রোমানিয়ার অধীনে। তারিখ ১৪৭৫ সালের ৪ আগস্ট। চিঠিতে মূলত লেখা রয়েছে তিনি খুব দ্রুতই তাদের শহরে এসে বসবাস শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
জিলবারস্টাইন জানালেন, "আমাদের বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা ভ্লাদ ড্রাকুলার একটি জৈব-রাসায়নিক প্রোফাইল দাঁড় করাতে পারবো, যখন তিনি এই চিঠিটি লিখেছিলেন। যার মধ্যে রয়েছে তার স্বাস্থ্য, তিনি কী খেতেন এবং তার আশেপাশের পরিবেশ কেমন ছিল।"