যারা একসঙ্গে একাধিক টাইমলাইনে বাস করে!
তৃতীয়বার যখন আমার ৪০ বছর বয়স পূর্ণ হলো তখন আমার সন্দেহ হতে শুরু করে।
প্রথমবার যখন আমার বয়স ৪০ বছর হয়, তখন আমি বেশ অপ্রস্তুত ছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম আমার বয়স মাত্র ৩৮। কয়েক মাস পর আমি আবার ৪০ বছর পূর্ণ করি। আমি কোনো কালেই গণিতে ভালো ছিলাম না। কিন্তু তারপরও আমি বেশ কয়েকবার ৪১ বছর পূর্ণ করি। তারপর আরও একবার ৪০ বছর বয়সী হয়ে গেলাম। নাহ, সময়ের হিসাবটা ঠিক আমার ধাতে আসে না।
পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতেই মানুষ একসঙ্গে একাধিক বছরের হিসাব রাখেন। কদিন আগেই বিশ্বের সব জায়গায় ২০২৩ সাল শুরু হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারে এখন ১৩৮৪ সাল, থাইল্যান্ড আপনাকে নিয়ে যাবে ২৫৬৬ সালে! মরোক্কানরা ১৪৪৪ সাল অনুযায়ী প্রার্থনা করলেও কৃষিকাজ করছে ২৯৭২ সাল অনুযায়ী। ইথিওপিয়ানরাও পড়ে রয়েছে ২০১৫ সালে—তাদের বছর শেষ হয় ১৩ মাসে। এদিকে যেখানে আমি থাকি, সেই দক্ষিণ কোরিয়ার নববর্ষ মানে এই দেশের সবার জন্মদিন। এই বিশাল ধোঁয়াশাই ব্যাখ্যা করে আমি কীভাবে তিনবার ৪০ বছর পূর্ণ করেছি।
দক্ষিণ কোরিয়ানদের জন্মগ্রহণের সময়ই তাদের বয়স 'এক' হিসেবে ধরা হয় এবং সেদিন থেকে যেকোনো বয়স পর্যন্ত দুই থেকে তিনটি অফিসিয়াল বয়স থাকে: দেশীয়, আন্তর্জাতিক (শূন্য থেকে গণনা), এবং একটি অতিরিক্ত বছর, যখন পুরো দেশের সবার বয়স ১ জানুয়ারিতে একসঙ্গে এক বেড়ে যায়। তাছাড়া, কোরিয়ানরা তাদের ব্যক্তিগত জন্মদিন গ্রেগরিয়ান বা ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রীয় ক্যালেন্ডারে উদযাপন করবে কি না, তা-ও বেছে নিতে পারে। হিসাব কষলে দেখা যায়, আমি আমার ৪০তম জন্মদিন ছয়বার উদযাপন করতে পারতাম। কিন্তু ৪০ দেখে কে এতবার খুশি হয়?
তারিখ বা সময় আমাদের জীবনেরই পটভূমি, এবং এটি এমন এক জিনিস যেটি সবসময় বিদ্যমান। তবে অবশ্যই যেকোনো তারিখই (উদাহরণ: ১ জানুয়ারি ২০২৩) একটি নির্দিষ্ট সময়ের হিসাব রাখার ব্যবস্থার গঠন। এক্ষেত্রে সেটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
আইএসও-অনুমোদিত গ্লোবাল-স্ট্যান্ডার্ড ক্যালেন্ডার হিসেবে বিমান চালনা থেকে রাজনীতি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সেক্টরজুড়ে বাধ্যতামূলক এই ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাকে যে-কেউ গ্রেগরিয়ানকে সঠিক ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা হিসেবে ধরে নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এই ক্যালেন্ডার সিস্টেমের উত্থানের পেছনের কারণ সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় সঠিক সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতির বিস্তার।
ধর্মীয় মতবাদ এবং রেনেসাঁ বিজ্ঞানের একটি ফসল এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার এবং প্রকৃত সৌর বছরের মধ্যকার বিশাল ব্যবধান সংশোধন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারটি আসল সৌর বছরের তুলনায় ১১ মিনিট এবং ১৪ সেকেন্ড পিছিয়ে ছিল, যেটি খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ অব্দে প্রবর্তিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এটি সংস্কারের নির্দেশ দেন, যখন আসল মৌসুম থেকে ক্যালেন্ডারের সময়ের পার্থক্য প্রায় ১০ দিন ছিল।
গ্রেগরির ক্যালেন্ডার আসল সৌর বছরের তুলনায় মাত্র ২৬ সেকেন্ড পিছিয়ে আছে। তবুও ১৫৮২ সালে এর প্রবর্তন তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল: প্রোটেস্ট্যান্ট বা অর্থোডক্স খ্রিস্টান কেউই একজন ক্যাথলিক পোপের নির্দেশ অনুযায়ী সময়ের ধারণা পুনর্বিবেচনা মেনে নিতে পারেনি।
তাই শুধু ইউরোপের ক্যাথলিক অঞ্চলগুলো ১৬০০ সালে নতুন ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে অন্যান্য অঞ্চলগুলোও যুক্ত হয়: প্রোটেস্ট্যান্ট জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস ১৭০০ সালের মধ্যে, ইংল্যান্ড এবং এর উপনিবেশগুলো ১৮০০ সালের মধ্যে। ১৯০০ সালের মধ্যে এর প্রভাব এতটাই বিস্তার লাভ করে যে জাপান এবং মিশরের মতো অ-খ্রিস্টান দেশগুলোও একে তাদের সময় ব্যবস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তবে রোমানিয়া, রাশিয়া এবং গ্রিসের মতো অর্থোডক্স খ্রিস্টান দেশগুলো এগুলো প্রবর্তন করতে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সময় নিয়ে নেয়। ২০০০ সালেই প্রথমবারের মতো পুরো ইউরোপ একটি নতুন শতাব্দীকে একসাথে স্বাগত জানায়।
যা-ই হোক, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই গ্রেগরিয়ান সময় বেছে নিয়েছিল, যখন ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা পৃথিবীর ৮০ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল নিজেদের অধীনে নিয়ে আসে। ওই সময়ে ইউরোপ-আমেরিকাকেন্দ্রিক বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, ফলে পুরো বিশ্বকে একত্রীকরণের জন্য একটি সর্বজনীন বৈশ্বিক ক্যালেন্ডারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই সেই ভূমিকা পেয়ে যায়।
যেসব অঞ্চল ইউরোপ জয় করেনি সেখানে ক্যালেন্ডারটি অন্য উপায়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসবিদ ভ্যানেসা ওগলে তার বই 'দ্য গ্লোবাল ট্রান্সফরমেশন অফ টাইম'-এ দেখিয়েছেন কীভাবে পুঁজিবাদ, ধর্মপ্রচার, এবং অভিন্নতার দিকে ধেয়ে যাওয়ার প্রবণতা যেকোনো সাম্রাজ্যবাদী নীতির চেয়ে সময়কে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে ঠিক করতে কাজ করেছে। ঔপনিবেশিকতা একমাত্র বা অপরিহার্য কারণ ছিল না। বৈরুত অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে অটোমান শাসনের অধীনে ছিল। তখন সেখানে গ্রেগরিয়ান নিয়ম প্রচলিত হয়। জাপান কখনোই কোনো দেশের উপনিবেশ ছিল না, তারপরও ১৮৭২ সালে সেখানে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গৃহীত হয়।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আসার আগে হাজার হাজার বছর ধরে একাধিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন মিশরীয় ও মায়ানরা দুটো ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত—একটি ধর্মীয় কারণে, অন্যটি প্রশাসনিক কাজে। কোরিয়ার রাজা সেজং তার ১৪৩০-এর দশকে ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য দুটি নিয়ম চালু করেছিলেন—একটি চীনা ক্যালেন্ডার থেকে এসেছে, অপরটি আরবি ক্যালেন্ডার থেকে। ১৮৮০-এর দশকে লেবাননের বৈরুতে, গ্রেগরিয়ান ছিল দৈনন্দিন ব্যবহারের চারটি ক্যালেন্ডারের একটি। এমনকি জাপানও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করার পরও তাদের রাজকীয় ক্যালেন্ডার সিস্টেম এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ২৪ সেক্কি ক্যালেন্ডারও এখনো ব্যবহার করে।
সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ ক্লেয়ার অক্সবি, যিনি সাহেল এবং সাহারার ক্যালেন্ডার ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছেন, একাধিক ক্যালেন্ডার সিস্টেমের এই সহাবস্থানকে ব্যাখ্যা করার জন্য 'ক্যালেন্ডার বহুত্ববাদ' শব্দটি তৈরি করেছেন। একটি সমাজে যেমন একাধিক আইন থাকে, সেরকম একাধিক ক্যালেন্ডারও থাকতে পারে। এটি বিভ্রান্তিমূলক মনে হলেও একাধিক ক্যালেন্ডার ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। উত্তর আফ্রিকার ইমাজিগেন, তুয়ারেগ এবং অন্যান্য বার্বারভাষী সম্প্রদায়গুলো একইসাথে তিন বা তিনটি ক্যালেন্ডার সিস্টেম ব্যবহার করে: সৌর ক্যালেন্ডারগুলো কৃষির জন্য ঋতু চিহ্নিত করে; ইসলামিক চন্দ্র ক্যালেন্ডার ধর্মীয় উৎসব ও আচারের নির্দেশনা দেয়; গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে সেই দেশের সরকারের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। একাধিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা তথা একাধিক সময়রেখায় বাস করার এই নিয়ম বিভিন্ন অস্থায়ী চাহিদাকে এক করার একটি ব্যবহারিক উপায় হতে পারে।
ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতেও এটি কোনো অপরিচিত ধারণা নয়—যেমন: বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হওয়ার সময় বা আর্থিক বছর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে ভিন্ন। এটি কেবল আপনি কোথা থেকে গণনা শুরু করবেন, তা-ই নির্দেশ করে।
অক্সবি জানান, 'একাধিক ক্যালেন্ডারের সমান্তরাল ব্যবহার আমাদের বর্তমান বিশ্বে আমরা যা ভাবি, তার চেয়েও অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু বহুত্ববাদ যখন একটি ঐতিহাসিক ধ্রুবক ছিল, তখন ক্যালেন্ডার সবসময় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই যেত। আজকে যারা একটি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছেন, কয়েক দশক পর আলাদা ক্যালেন্ডারও দেখতে পারেন। আপনি হয়তো একাধিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করবেন, এবং সম্পূর্ণ আলাদা ক্যালেন্ডারও ব্যবহার করতে পারেন। মানব সংস্কৃতি ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে।'
একটি চলমান সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হলো ডিজিটাল জগতে আমাদের সম্প্রসারণ। ফাইবার-অপটিক কেব্লগুলো পুরনো বাণিজ্য রুটের জায়গা নিয়েছে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার এর ফলে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে ঔপনিবেশিকতা পৌঁছাতে পারেনি। এবং এর ফলে এই সংযোগ একটি নতুন ধরনের ক্যালেন্ডার বহুত্ববাদ তৈরি করেছে।
নেপাল হাতেগোনা কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার কোনো জাতীয় ক্যালেন্ডার নয়, সরকারিভাবে নেপালে দুটি ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিক্রম সম্বত অনুযায়ী ২০৭৯ সাল এবং নেওয়ারি নেপাল সম্বত অনুযায়ী ১১৪৩ সাল। একইসাথে নেপাল স্ট্যান্ডার্ড টাইম জোনের সাথে ১৫ মিনিট বাইরে। এটি এমন এক দেশ, যার নিজস্ব টাইম জোন রয়েছে।
তা সত্ত্বেও, সঞ্জীব দাহালের মতো নেপালিদের একাধিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করার কোনো কারণ নেই।
দাহাল জানান, 'আমি কেবল বিক্রম সম্বত ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি। আমি আমার জীবনে কখনো নেপাল সম্বত ব্যবহার করিনি।' এর কারণও রয়েছে। সৌর বছর অনুযায়ী চলা বিক্রম সম্বতে ১২টি চান্দ্র মাস এবং ছয়টি ঋতুর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সময় রক্ষার বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যেটি কাঠমান্ডুতে বাস করা একজন সাধারণ হিন্দুর জন্য ধর্মীয় কাজ থেকে বেতন পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ মেনে চলতে সাহায্য করে।
যদিও নেপালের ভেতরে দাহালের একটি ক্যালেন্ডার দিয়েই কাজ চলে যায়, তিনি বোস্টন কলেজেরও একজন দূরবর্তী পিএইচডি ছাত্র, যিনি নেপালি অভিবাসীদের নিয়ে গবেষণা করছেন। এর অর্থ হলো তিনি অন্য একটি সংস্কৃতির ক্যালেন্ডারের সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে জড়িত: ডিজিটাল সংস্কৃতি, যা উনিশ শতকের সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের মতো একচেটিয়াভাবে গ্রেগরিয়ান।
দাহাল জানান, 'আমি দুটি জায়গা এবং সময়ে বাস করি।' তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করেছেন। তার ল্যাপটপ ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০২৩ সালে ঠিক করা, এবং তার স্মার্টফোন বিক্রম সম্বত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০৭৯ সালে ঠিক করা। একটি অ্যাপ তাকে এই সময়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
দাহাল ক্যালেন্ডার ব্যবহারের একটি প্রজন্মগত পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন: তার বাবা-মায়েদের প্রজন্মের জন্য কখনোই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার বন্ধুদের মধ্যে একটি পার্থক্য দেখা যায়, যেখানে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবসার কাজে এবং বিক্রম সম্বত সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আধিপত্য বিস্তার করলেও (যেমন: যখন তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়), এগুলো ছাড়া নেপালি সংস্কৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন শুভ দিন নির্ধারণ কিংবা চন্দ্রচক্র নির্ধারণের জন্য গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার কাজ করে না। তাই দাহাল শীঘ্রই গ্রেগরিয়ানকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওার আশা দেখছেন না।
তবে ইতিহাস বৃত্তাকারে চলতে চায়। উনিশ শতকের শেষদিকে বিশ্ব ক্যালেন্ডার আন্দোলনের মতো একবিংশ শতাব্দীতেও অর্থনৈতিক কারণে ক্যালেন্ডার একই নিয়মে করার একটি প্রবণতা দেখা যায়। ২০১৬ সালে সৌদি আরব সরকার কর্মীদের বেতনের সময়সূচিকে ইসলামি নিয়ম থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে স্থানান্তর করে, যাকে মূলত খরচ কমানোর একটি ব্যবস্থা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়াও বহু-বয়স ব্যবস্থা অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর বলে একে বিলোপ করে প্রথাগত বয়সকেই একমাত্র বয়স হিসেবে কার্যকর করতে একটি বিল পাস করে।
কিন্তু এই একীভূত ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে কী লাভ বা ক্ষতি হবে, যখন একেকটি সংস্কৃতির জন্য একেকটি ক্যালেন্ডার মানানসই?
অক্সবি জানান, 'কেন্দ্রীয় সরকারগুলো একটি নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার চাপিয়ে দিয়ে জাতীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে পারে। কিন্তু এর ফলে সেই জাতিটি তাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং বৈচিত্র্য হারাতে পারে। জনগণ যদি সংখ্যালঘু আঞ্চলিক সংস্কৃতির অংশ হয়, তবে তারা জাতীয় পর্যায়ে অবমূল্যায়ন বোধ করতে পারে।'
কিন্তু তারপরেও কথা থেকে যায়—১৫০ বছরের বিশ্বায়নও বহুত্ববাদকে একেবারে হুমকির মুখে ফেলে দেয়নি। ক্যালেন্ডার আসবে, যাবে এবং পরিবর্তন হবে। মানুষ যদি একটি জিনিস ভালো পারে, সেটি হলো পরিবর্তন করা। আর সেটি খুব দ্রুত থেমে যাবে না।
- বিবিসি ফিউচার থেকে অনূদিত