মাস্ক-জাকারবার্গের ‘খাঁচাবন্দি লড়াই’ স্রেফ কৌতুক হিসেবে না থেকে বাস্তবেই ঘটতে পারে
গত মাসে ইলন মাস্ক মার্ক জাকারবার্গকে 'খাঁচাবন্দি লড়াইয়ে' আমন্ত্রণ জানানোর পর আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউএফসি)-এর প্রেসিডেন্ট ডানা হোয়াইট মেটা'র সিইও থেকে একটি খুদেবার্তা পান।
ওই খুদেবার্তায় জাকারবার্গ হোয়াইটের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সত্যিই ইলন মাস্ক লড়াই করতে ইচ্ছুক কি না।
তখন ডানা হোয়াইট টেসলা, টুইটার ও স্পেসএক্স-এর সিইও মাস্ককে ফোন করেন। মাস্ক তাকে নিশ্চিত করেন, তিনি সত্যিই লড়াই করতে প্রস্তুত। এ তথ্য জাকারবার্গকে জানান হোয়াইট। তখন জাকারবার্গ ইনস্টাগ্রাম-এ একটি পোস্ট করে লেখেন: 'আমাকে ঠিকানা পাঠান।'
ডানা হোয়াইটের দাবি, এরপর থেকে তিনি এ দুই প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারের সঙ্গে প্রতিরাতে আলাপ করছেন লড়াইটির আয়োজন নিয়ে। 'তারা দুজনেই লড়তে চায়,' ডানা জানান।
অনেকে হয়তো ভেবেছেন, বিশ্বের অন্যতম দুই শীর্ষ ধনীর মধ্যকার খাঁচাবদ্ধ এ লড়াই কেবলই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা — তাদেরকে হয়তো এবার একটু নড়েচড়ে বসতে হবে।
ডানা হোয়াইটের বরাতে জানা গেছে, মাস্ক আর জাকারবার্গ দুইজনই গত দিন দশেক ধরে বিভিন্ন উপদেষ্টার কথা শুনছেন, পর্দার আড়ালে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তার মতে এ দুই বিলিয়নিয়ার ক্রমশ ময়দানে লড়াইয়ের দিকেই এগোচ্ছেন।
তবে সত্যিই যে মাস্ক-জাকারবার্গকে লড়তে দেখা যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা এখনো কেউ দিতে পারছে না। তবে ডানা হোয়াইট এবং এ লড়াই নিয়ে সার্বিক আলোচনার বিষয়ে ধারণা রাখা জনা তিনেক ব্যক্তি বলেছেন, একটা কিছু ঘটার পূর্বলক্ষণ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডানা হোয়াইট জানিয়েছেন, যদি সত্যিই লড়াই হয় দুজনের মধ্যে, সেক্ষেত্রে ইউএফসি'র আনুষ্ঠানিকতা ও চুক্তির বাইরে রাখা হবে এ ম্যাচটিকে। এটি হবে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ। জাকারবার্গ ও মাস্ক দুজনেই এ খেলায় একটি দাতব্য অনুষঙ্গ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
লড়াই লাস ভেগাসে হতে পারে। তার জন্য নেভাদা অ্যাথলেটিক কমিশনের অনুমোদন লাগবে। তবে বৃহস্পতিবার ইলন মাস্ক এক টুইটে বলেছেন, এ খেলা রোমান কলোসিয়ামেও হতে পারে।
জাকারবার্গের ঘনিষ্ঠ দুই সূত্র জানিয়েছে, তার উপদেষ্টা ও বন্ধুরা এ ম্যাচের পক্ষে সায় দিয়েছেন। তবে তারা মনে করছেন, এটি মার্কের সময়ের স্রেফ একপ্রকার অপচয়।
৫২ বছর বয়সী মার্ক জাকারবার্গ ও ৩৯ বছর বয়সী ইলন মাস্কের মতো দুই প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারের মধ্যে সত্যি এ ধরনের কোনো লড়াই হলে তা প্রকৃতঅর্থেই একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার হবে। মেটা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে মাস্কের কাছে এটি নিয়ে জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মার্ক জাকারবার্গ ও ইলন মাস্কের মধ্যে আগে থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। অতীতে তারা একে অপরের অনেক সমালোচনা করেছেন। অতি সম্প্রতি জাকারবার্গ টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য একদল কর্মী নিয়োগ করেছেন। তার এ প্রকল্পের সাংকেতিক নাম প্রজেক্ট ৯২।
এদিকে ডানা হোয়াইট এ দুজনের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য নিয়েও চিন্তায় আছেন। দুইজনের বয়সের ফারাক ১৩ বছরের। ধারণা করা হচ্ছে, জাকারবার্গ ইলন মাস্কের চেয়ে কম করে সাড়ে ৩১ কেজি বেশি ভারী। সাধারণত, মিক্সড মার্শাল আর্টের আনুষ্ঠানিক খেলায় দুইজন খেলোয়াড়ের ওজনই সমান সমান থাকে।
'তারা দুজন এর আগে কখনোই পেশাদারভাবে খেলেননি। এটি হবে কমব্যাট স্পোর্টসের জগতে সবচেয়ে বড় লড়াই,' বলেন হোয়াইট।
মার্ক জাকারবার্গ অবশ্য ইউএফসির দুনিয়া নিয়ে খোঁজখবর রাখেন। গত ১৮ মাস ধরে তিনি ব্রাজিলিয়ান জিউ-জিৎসুর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এ মার্শাল আর্ট ইউএফসি'র খেলায়ও ব্যবহার করা হয়।
ডেভ ক্যামারিলো, জেমস টেরি ও খাই উ-এর মতো মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নিয়েছেন জাকারবার্গ। গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কোনো মার্শাল আর্ট টুর্নামেন্টে অংশ নেন তিনি। সেখানে তিনি সোনা ও রূপার মেডেল জিতেছিলেন।
ডানা হোয়াইটও জানিয়েছেন, মার্ক জাকারবার্গ এ খেলার বিষয়ে দারুণ আগ্রহী একজন মানুষ। গত প্রায় দুই বছর তিনি জাকারবার্গের সঙ্গে কথা বলছেন, কিন্তু জাকারবার্গ তাদের আলাপচারিতায় কখনো কোনো কৌতুক করেননি, হাসেননি। 'সবসময় মারাত্মক গম্ভীর হয়ে থাকতেন তিনি,' হোয়াইটের মতে।
জাকারবার্গ নিয়মতি ব্যায়াম করেন। তার অংশ হিসেবে তিনি দৈনিক দৌড়ান, এবং শুধু দৌড়েই ক্ষান্ত হন না, বন্ধু-সহকর্মীদের চ্যালেঞ্জও জানান দৌড়ে তাকে হারিয়ে দিতে। অর্থাৎ, জাকারবার্গ শারীরিকভাবে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
অন্যদিকে টুইটারে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন, তিনি 'একদমই' ব্যায়াম করেন না। একবার এক সুমো কুস্তিগীরের সঙ্গে লড়তে গিয়ে পিঠে আঘাত পেয়েছিলেন, পরে তার জন্য অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করতে হয়েছিল।
তবে গত মাসে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন, তিনি জুডো ও কিয়োকুশিন নামক দুটো জাপানি মার্শাল আর্ট শিখছেন। ডানা হোয়াইটকে লড়াই প্রসঙ্গে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: 'আমরা কি লড়াই করব নাকি করব না?'
এছাড়া গত সপ্তাহে লেক্স ফ্রিডম্যান নামক একজন পডকাস্টার মাস্কের সঙ্গে জুডো প্রশিক্ষণ নেওয়ার ছবি প্রকাশ করেছেন। ফ্রিডম্যান এর আগে জাকারবার্গের সঙ্গেও জিউ-জিৎসুর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। তবে তিনিও বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
অনেকেই হয়তো সাগ্রহে অপেক্ষা করছেন বদ্ধ খাঁচায় বিশ্বের দুই প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারকে একে অপরের ওপর হাত-পা ছুঁড়ে মারা দেখতে, কিন্তু একজন ব্যক্তি এ লড়াইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে একেবারেই খুশি নন।
তিনি হচ্ছেন মায়ে মাস্ক — ইলন মাস্কের মা। সম্প্রতি এক টু্ইটে তিনি লিখেছেন: 'এ লড়াই নিয়ে উৎসাহ জোগাবেন না।'