রিয়ানন অ্যাডাম: মহাকাশ ভ্রমণে অনেক প্রথমের সাক্ষী হতে চলা ফটোগ্রাফার
'৭০ বছর আগে যখন পোলারয়েড ক্যামেরা উদ্ভাবিত হয়েছিল, তখন এটি কাউকে মহাকাশে পাঠানোর মতো বিষয় ছিল। যেন একধরনের জাদু।' ফটোগ্রাফারদের কাজ করার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা এই ডিভাইসটিকে এভাবেই বর্ণনা করেন রিয়ানন অ্যাডাম। তিনি নিজেও একসময় অ্যানালগ ক্যামেরা ব্যবহার করে বিশ্বের নানা প্রান্তের ছবি তুলেছেন। এখন মহাকাশে সাধারণ নাগরিকদের প্রথম ভ্রমণেও তার বিশ্বস্ত পোলারয়েডকে সঙ্গে নিয়েই যাবেন অ্যাডাম।
আইরিশ বংশোদ্ভুত, লন্ডন-ভিত্তিক এই ফটোগ্রাফার মহাকাশ অভিযান 'ডেয়ারমুন' এর ক্রুদের একজন। জনসাধারণের প্রথম মহাকাশ ভ্রমণে তার সঙ্গে থাকবেন আরো সাতজন শিল্পী। ডেয়ারমুন-এ তাদেরকে চাঁদের কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া হবে।
২০১৮ সালে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্টারশিপের একটি মহাকাশ মিশনের সবকটি আসনের টিকেট কিনে নেন জাপানের ধনকুবের ইউসাকু মায়েজাওয়া, যিনি এমজেড হিসেবেও পরিচিত। তিনি নিজেকে শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী হিসেবে বর্ণনা করেন।
এই কারণেই তিনি শিল্পী এবং সৃজনশীল ব্যক্তিদের তার সফরসঙ্গী হতে আবেদন করার আহ্বান জানান। প্রায় এক সপ্তাহ তারা মহাকাশে অবস্থান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
অনেক প্রথমের সাক্ষী হবে এই মিশন। প্রথমবারের মতো শিল্পীরা স্ট্রাটোস্ফিয়ার অতিক্রম করবে, প্রথমবার অ্যানালগ ক্যামেরা মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের সফরসূচি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে তিনিই সম্ভবত প্রথম আইরিশ নারী, প্রথম আত্মস্বীকৃত সমকামী হিসেবে মহাকাশে ভ্রমণ করতে চলেছেন।
নিজের মহাকাশ সফর প্রসঙ্গে এল পাইসকে তিনি বলেন, আপনি যদি একজন নারী এবং সমকামী হন তাহলে বিশ্বের অনেক দেশে আপনার অধিকার লঙ্ঘিত হবে। এই সফর এটা দেখানোর সুযোগ যে, মানুষ কেবলই মানুষ; তারা কোন জায়গা থেকে এসেছে বা তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি তা বিষয় নয়।
এই ভ্রমণে অংশ নেওয়ার জন্য ১২৯ দেশের প্রায় ১০ লাখ লোক আবেদন করে। কাছের এক বন্ধু থেকে প্রথম এমন ভ্রমণের সুযোগের কথা শুনে অ্যাডামের মনে হয়েছিল, মনে হয় এটা কোনো কৌতুক। পরে খোঁজখবর নিয়ে আবেদন করেন তিনি। কয়েকটি ফর্ম পূরণ, কয়েকবার ব্যক্তিগত ও গ্রুপ ইন্টারভিউ, কয়েক ধাপের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হোস্টনে জাপানি ব্যবসায়ী এমজেডের সাথে সাক্ষাতের পর তার নাম চূড়ান্ত হয়।
প্রথমদিকে তাকে সবকিছু গোপন রাখতে বলা হয়েছিল। মা-কে ছাড়া আর কাউকে মহাকাশ ভ্রমণের কথা জানাননি তিনি। প্রথমবার বন্ধুদেরকে বলার সময় তারা অতটা অবাক হয়নি বলে জানান অ্যাডাম। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল এই সফরের জন্য অ্যাডামই যোগ্য।
ব্যক্তিগত জীবন থেকে পেশাদার জগত; সব জায়গাতেই অ্যাডাম ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের জন্য পরিচিত। তার শৈশব কেটেছে নৌকায়। অ্যাডাম বলেন, আমাদের কোনো বাড়ি ছিল না। এটা কোন গ্রীষ্মের ছুটির মতো বিষয় ছিল না। আমাদের কেবল এই এক নৌকাই ছিল, আমাদের একমাত্র বাড়ি। আট বছর তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন বলেও জানান অ্যাডাম। এই অভিজ্ঞতা তাকে অনন্য কিছু দক্ষতা অর্জনে এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করেছে। তার বিশ্বাস, এসব বিষয় তাকে মহাকাশ মিশনে আসন পেতে সাহায্য করেছে।
যাত্রার দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে স্টারশিপের রকেট নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। কারণ রকেট উৎক্ষেপণের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তাই আরো কয়েকবার পরীক্ষার পরই তাদের মহাকাশ যাত্রা নিশ্চিত হবে। তার আগে ক্রুদের শারিরীক প্রস্তুতি সেরে নিতে হবে।
তাদেরকে নতুন খাদ্যাভ্যাস, পোশাক এবং আশেপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। তবে সবকিছুর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দিকটিকেই বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন অ্যাডাম।
অ্যাডামের প্রধান দায়িত্ব হবে মহাকাশে প্রথম অ্যানালগ পদ্ধতিতে ছবি তোলা। যে বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অ্যাডাম বলেন, এমন হতে পারে যে, ছবি তুলে নিলাম কিন্তু পৃথিবীতে এসে দেখলাম ফিল্ম খালি, কিছুই নেই। তাই ছবি তোলা এবং শুকানো সব প্রক্রিয়া রকেটেই করতে হবে।
আর মাধাকর্ষণ নেই এমন জায়গায় অ্যানালগ ছবি তোলা কষ্টসাধ্য হওয়ার কথা। সবকিছু যখন ভাসমান তখন ক্যামেরার শাটার প্রেস করা, ফিল্মগুলোকে পকেটে রাখা, ভেলক্রো বা ক্লিপ দিয়ে পোশাকের সাথে সংযুক্ত করা এবং এসব নিয়ে চলাফেরা করা;সবকিছুই নতুন উপায়ে করতে হবে। আর ছবি শুকানোর ক্ষেত্রে ভেজা কিছু, এমনকি ধুলাও ক্ষতির কারণ হবে। এক ফোঁটা পানিও খুব ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
তবে সব চ্যালেঞ্জের জন্যই তিনি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অ্যাডাম।