ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম ও প্রজ্ঞানের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না
ভারতের হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার 'বিক্রম' ও রোভার 'প্রজ্ঞান'-এর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইসরো জানায়, নতুন চন্দ্র দিবস শুরুর সাথে সাথে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেগুলো থেকে ফিরতি কোনো সংকেত পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট মহাকাশে দীর্ঘ এক মাস নয় দিনের যাত্রা শেষে রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছিল চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের গৌরব অর্জন করে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের দিক থেকে তারাই হল প্রথম দেশ।
ল্যান্ডার বিক্রম উচ্চতায় ২ মিটারের মতো আর ওজন এক হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভার প্রজ্ঞানের ওজন ২৬ কেজি মাত্র।
চাঁদের একেকটি দিন পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিনের সমান আর একেকটি রাত ১৪ রাতের সমান। চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে প্রায় দুই সপ্তাহ জুড়ে নানা তথ্য ও ছবি সংগ্রহ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়েছিল রোভারটি। এরপর গত ৪ সেপ্টেম্বর চন্দ্রপৃষ্ঠে রাত নেমে এলে বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে 'স্লিপ মোডে' রাখা হয়।
ইসরোর পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছিল যে, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদে সূর্যোদয় হলে ব্যাটারি রিচার্জের মাধ্যমে ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান স্লিপিং মুড থেকে জেগে উঠতে পারে। তবে আপাতত সে আশা হয়তো আর বাস্তবে পরিণত হচ্ছে না।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে দিন কাটানোর পরে নেমে আসা ১৪ দিনের সমান রাতটি অতিশীতল। এ সময় সূর্যরশ্মির একটি কণাও প্রবেশ করে না চাঁদের দক্ষিণমেরুতে। তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। আর তাতেই চন্দ্রযান-৩-এর ব্যাটারি কিংবা অন্যান্য যন্ত্রপাতির বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
যদিও বিক্রম আর প্রজ্ঞানের নতুন করে প্রাণপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা একেবারে নেই বলে উড়িয়ে দেয়নি ইসরো। কেননা চীনের চ্যাং'ই৪ ল্যান্ডার ও ইউটু২ রোভার সূর্যোদয়ের পর বেশ কয়েকবার জেগে উঠেছিল।
তবে ইসরোর সাবেক প্রধান এস কিরন কুমার বিবিসিকে জানান, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রাতের তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে মাইনাস ২০০ থেকে মাইনাস ২৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। চন্দ্রযানের ব্যাটারিগুলো এতটা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার মতো করে ডিজাইন করা হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা।
এদিকে গতকাল (শুক্রবার) ইসরোর পক্ষ থেকে এক্স-এ (প্রাক্তন টুইটার) পোস্ট করে বলা হয় যে, "ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রাজ্ঞনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।"
অবতরণের পর অবশ্য বেশ সফলভাবেই সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে চন্দ্রযান-৩। তাই ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিক্রম ও প্রাজ্ঞন যদি সংকেত নাও পাঠায় তবে সমস্যা নেই। এগুলো চাঁদের বুকে ভারতের 'লুনার এম্বাসেডর' হিসেবে থাকবে।