বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের কুশীলবেরা
১৯৮৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর মেলার কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে মেলাপ্রাঙ্গণ বিস্তৃত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ২০১৭ সালে উদ্যানের আরও বড় জায়গা মেলার অধীনে আসে। এ বছর বইমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন সংখ্যা ৬৩৫টি। অনেক স্টল, বিশেষ করে প্যাভিলিয়নগুলো নান্দনিকভাবে সেজে উঠে মেলার শোভাবৃদ্ধি করছে। নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠানকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড মেলা ঘুরে এরকম নান্দনিক ৬টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন বেছে নিয়েছে, কথা বলেছে এ স্থাপত্যশিল্পের পর্দার আড়ালের কুশীলবদের সঙ্গে।
রবীন আহসান, কর্ণধার ও নকশাকার
শ্রাবণ প্রকাশনী, স্টল ৪৬৩–৬৫, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
টিনের একটি চালাঘর। দরজা আছে। জানালা আছে দুরকম। একটি গরাদ দেওয়া অন্যটি দোকানের ঝাঁপ ধরনের। প্রথম জানালায় উঁকি দিয়ে ভেতরে সাজানো বইগুলো দেখে নেওয়া যায়। ঝাঁপের দিকে টেবিল বসানো, বই দেখার পাশাপাশি কেনাকাটাও করা যায়। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলে বইয়ের তাক সারি সারি। ভেতর বসার জায়গাও আছে। বড়রা ও শিশুরা চাইলে বসে বসে বই দেখতে পারে, কিছুটা পড়েও নিতে পারে।
রবীন আহসান নিজেই স্টলটি নকশা করেছেন। তিনি বইমেলাকে বাজার হিসাবে দেখতে চান না। এখানে লেখকের সঙ্গে পাঠক মিলবেন, লেখকেরা গল্প করবেন, নতুন প্রজন্ম দেশ চিনবে, সংস্কৃতি জানবে এবং একাত্ম হবে। তাই কেবল বই বিক্রি নয় বরং বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি স্টল সাজিয়েছেন। মেলায় শ্রাবণ প্রকাশনী বাঘবিধবা নামক একটি বই আনছে, স্টলের বহিরঙ্গ তাই বাঘকে উপজীব্য করে সাজানো হয়েছে।
রবিন আহসান বলছিলেন, 'শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ গুণী কবি-সাহিত্যিক বইমেলার জন্য বছরভর অপেক্ষা করতেন। আড্ডা দিতেন পাঠকের সঙ্গেও। এখন কিন্তু সে পরিবেশ নেই। অনেকেই অভিযোগ করেন, ভালো বই আসে না মেলায়। অভিযোগ সত্যি কিন্তু কারণটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আসলে ভালো বই পড়ার মানুষও নেই অনেক। তরুণেরা বইমেলায় আসছে সেলফি তুলতে আর শেষে কফি খেয়ে চলে যাচ্ছে। বই হাতে নিয়ে যারা সেলফি তুলছেন তারা ছবি তোলার পর বইটাকে আগের জায়গাতে রেখে দিচ্ছেন। বইয়ের নামটাও তারা পড়ে দেখেন না। আমরা চাই, নতুনেরা বই পড়ুন, বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ুন।'
শ্যামল পাল, কর্ণধার ও পরিকল্পনাকারী
পুঁথিনিলয়, প্যাভিলিয়ন ৩৪, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
বই দিয়েই ছাদ, তাক, স্তম্ভ। নামের সঙ্গে গড়নে মিল আছে পুঁথিনিলয় প্যাভিলিয়নের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলির বুকপকেট সংস্করণ প্রকাশ করেছে পুঁথিনিলয়। ছাদটি সে আদলে, স্তম্ভ ও তাকগুলো অন্যান্য বইয়ের আদলে গড়া হয়েছে। শ্যামল বলছিলেন, 'বইকেই ফোকাস করতে চেয়েছিলাম। নকশাকার ও কারিগরেরা তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলেই মনে হয়।'
প্লাইউড এবং প্লাস্টিক বোর্ড ব্যবহার করে মোটমাট ৩৬টি বই তৈরি করা হয়েছে। বইয়ের মূল আকারকে কয়েকগুণে বর্ধিত করা হয়েছে প্যাভিলিয়নের প্রয়োজনে। পাঠকের সুবিধা বিবেচনায় চারদিক খোলামেলা রাখা হয়েছে; পাঠক যে দিকেই দাঁড়াবেন, কেবল বই দেখতে পাবেন। সজ্জায় স্নিগ্ধ রং ব্যবহার করা হয়েছে যেন চোখের আরাম হয়।
প্যাভিলিয়নটিতে কয়েকরকমের আলোর ব্যবহার দেখা যায়। কিছু আলো প্লাইউডের বইয়ের ওপর আর কিছু ডিসপ্লের বইতে ফেলা হয়েছে। শ্যামল বলেন, 'সজ্জা দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় পাঠককে আকৃষ্ট করা গেছে, বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টলটি দেখেই পাঠক বুঝতে পারেন রবীন্দ্রনাথের বই আমাদের এখানে সহজলভ্য।'
আনিসুজ্জামান সোহেল, শিল্পী ও সহপ্রতিষ্ঠাতা
নিমফিয়া, স্টল ১২৯–৩০, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
ছোট্ট কিন্তু পরিপাটি নিমফিয়া। অল্পের মধ্যে এতটাই আকর্ষণীয় যে, সেলফিশিকারীদের ভিড়ে পাশের স্টলের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। নিমফিয়ার দুই ধার খোলা। সামনে কিছুটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে ঘাসের গালিচা বসানো হয়েছে। কালো রঙের প্রাধান্য স্টলজুড়ে, কাউন্টারটি লম্বায় ঘরের তিনভাগের একভাগ। ভেতরে ৬টি তাকে আরও কিছু বই সাজানো। সবমিলিয়ে বই সংখ্যা খুব বেশি নয়। নিমফিয়া মূলত গবেষণাধর্মী ছবিবহুল বই প্রকাশ করে বছরে দু–চারটি।
সাত বছর আগে প্রথম যে বইটি প্রকাশ করেছিল তার নাম ফেস্টিভালস অব বাংলাদেশ। কোনো বিষয়বস্তু নির্বাচনের পর তারা একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠন করে। তারপর এক বা একাধিক আলোকচিত্রীকে ছবি তোলার দায়িত্ব দেয়। কোনো কোনো বই প্রকাশে তাদের দুই–তিন বছরও লেগে যায়। এভাবে রিকশা পেইন্টিং, বাংলাদেশের মসজিদ, বাংলাদেশের গির্জা, নকশিকাঁথা নিয়ে তারা বই প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন তাদের লক্ষ্য।
নির্দিষ্ট বছরে নির্দিষ্ট বইকে থিম করে নিমফিয়া স্টল সাজায়। এবারের থিম জামদানি। আনিসুজ্জামান সোহেল বলেন, 'প্রথমে ভেবেছিলাম সাদা রংকে প্রাধান্য দেব, কম্পিউটারে ত্রিমাত্রিক মডেলও সে অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু ধুলাবালিতে রং নষ্ট হয়ে যাবে বিবেচনায় সাদার বদলে কালো রংকে বেছে নেওয়া হয়েছে।' স্টলটির পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে কালো ফ্রেমের মাঝে হলুদ রংয়ের জামদানি মোটিফ (ফুল, লতা, পাতা) ব্যবহার করা হয়েছে। দক্ষিণ দিকের দেয়ালের একাংশে একটি খোপের মধ্যে ট্রাডিশনাল জামদানি নামক বইটির প্রচ্ছদ দেখা যাচ্ছে।
এসএম তাজবীর, স্থপতি
অন্যপ্রকাশ, প্যাভিলিয়ন ১০, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলামের পরিকল্পনায় প্যাভিলিয়নটির নকশা করেছেন স্থপতি এসএম তাজবীর। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য নিয়ে পড়েছেন তাজবীর। পুরোদমে স্থাপনা নকশা করছেন ২০১৬ সাল থেকে। রাজশাহীতে 'অংশু' নামক একটি লাইব্রেরির নকশা করে সাড়া জাগিয়েছিলেন। তিনি এমন স্থাপনা গড়তে চান যেটি মায়ায় জড়ায়। অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নটিও দর্শককে যেমন আকৃষ্ট করে, মায়ায়ও জড়ায়।
মাজহারুল ইসলাম দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে আগ্রহী। আগের মেলাগুলোয় তিনি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, কার্জন হল, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধকে উপজীব্য করে প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছিলেন। এবার বেছে নিয়েছেন রিকশা পেইন্টিং। হুমায়ূন আহমেদ ও রিকশা পেইন্টিং একসঙ্গে মেলানো কঠিন ছিল। তাজবীর বলেন, 'ভাবতে থাকলাম হুমায়ূন স্যারের কোন চরিত্র রিকশার সঙ্গে যায়। হিমুর কথা মনে পড়ল এক সময়। ভাবলাম প্যাভিলিয়নের চারধারে যে চারটি স্তম্ভ হবে তার গায়ে হিমু আঁকা হবে আর রিকশা থাকবে প্লাটফর্মে। হিমু হবে রংহীন আর রিকশা রঙিন। হুমায়ূন স্যারকে রাখা হবে এসবের ওপরে।'
বর্গাকার প্যাভিলিয়নটির দুই দিকে দুটি রিকশার হুড যোগ করা হয়েছে। আলোকসজ্জায় বইয়ের ওপর যেন বেশি আলো পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। প্যাভিলিয়নের মূল কাঠামোয় স্টিল ও বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্রেম দেওয়া হয়েছে প্লাইউডের। তাজবীর বলেন, '৫০ বাই ৬০ জায়গা হলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা যায়, আমরা পেয়েছি ২৪ বাই ২৪ ফুট। একারণে প্যাভিলিয়নের ভেতরে গোটা রিকশা রাখা যায়নি। ভেবেছিলাম সিটটি ব্যবহার করব বইয়ের তাক হিসেবে। স্থানস্বল্পতার কারণেই মূলত গোটা নকশার মাত্র ২০ ভাগ দৃশ্যমান করা গেছে। খুশির ব্যাপার হলো, এটুকুতেই পাঠক-দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন।'
আলমগীর শিকদার লোটন, কর্ণধার ও নকশাকার
আকাশ, প্যাভিলিয়ন ১৯, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
লোকসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী বলে আকাশ প্রকাশনীর মালিক আলমগীর শিকদার গ্রামীণ উপকরণ যেমন কুঁড়েঘর, বাবুই পাখির বাসা, গাছ-গাছালিকে বিষয়বস্তু করেন। এবারের প্যাভিলিয়নটি গড়েছেন বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘরের মতো করে।
প্যাভিলিয়নটির উপকরণ শিলকড়ই ও লোহা কাঠ। বই প্রদর্শন করেছেন কাঠের তৈরি আলনায়। ছাদে দিয়েছেন টিন। প্যাভিলিয়নের তিনপাশে ৩টি দরজা রেখেছেন, পাঠক-দর্শক যেকোনো দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারেন। বাতাস ও আলো চলাচলের জন্য রেখেছেন একাধিক জানালা। জানালায় লোহার গরাদও আছে।
পুরো প্যাভিলিয়নটা এমনভাবে গড়া হয়েছে যেন পাঠক ভাবেন এটা তার নিজেরই ঘর। তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এর জন্য, আবার যেন ব্যবহার করা যায় সে কথাও মাথায় রেখেছেন। লোটন বলেন, 'মেলাশেষে সব খুলে গ্রামে নিয়ে যাব, নিজের থাকার ঘর হিসাবে ব্যবহার করব।'
সাইফুল হক স্থপতি, স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), প্যাভিলিয়ন ৪, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
প্যাভিলিয়ন অর্থ তাঁবু, শিবির বা মণ্ডপ। স্থপতি মণ্ডপ অর্থটি গ্রহণ করেছেন। মণ্ডপ হলো স্তম্ভযুক্ত দরদালান। সোজা কথায় খুঁটির ওপর ছাউনি দেওয়া বেড়া ছাড়া বড়সড় খোলামেলা ঘর। বইমেলায় ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড বা ইউপিএলের প্যাভিলিয়নটি মণ্ডপ আকৃতিতে নকশা করেছে সাইফ উল হক স্থপতি নামক স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান।
মণ্ডপের মূল চরিত্র অক্ষুণ্ণ রেখে প্যাভিলিয়নটিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বা মডিফাই করা হয়েছে। ছাউনিকে ভাগ করা হয়েছে চার ভাগে, ৪টি আলাদা ঘর জোড়া দিলে যেমন হয়। টিন দিয়ে তৈরি ছাউনিগুলো পরস্পরের দিকে এমনভাবে মুখ করা যেন বইয়ের মাঝখানের খোলা পাতা। ছাউনির ঠিক নীচে প্লাইউড দিয়ে তৈরি একটি বর্গাকার ও দুটি ত্রিকোণাকার প্যানেল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ভেতরে (আলোকসজ্জার জন্য) তো বটেই, বাইরেও (সাইনেজ লাগানোর জন্য) সুবিধা পাওয়া গেছে।
কেন মণ্ডপের আকার (ফর্ম) বাছাই করলেন স্থপতি? কারণ চারদিক খোলা রাখা যায়। মেঝের চতুর্দিকেও কাউন্টার বা টেবিল বসানো গেছে। ফলে অনেক বেশি বই দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক বই সাজানোও সহজ হয়েছে। যারা তালিকা নিয়ে বই কিনতে আসেন না, প্রচ্ছদ ও বিষয় দেখে হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে বই বাছাই করেন তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর। উপরন্তু আলো-বাতাস পাওয়া যাচ্ছে উপরি, সন্ধ্যা নামার আগেই বাতি জ্বালাতে হচ্ছে না। বিক্রয়কর্মীরাও খোলামেলা পরিবেশে কাজ করতে পারছেন।
ইউপিএল গবেষণাধর্মী, শিক্ষামূলক, ইতিহাসভিত্তিক, প্রবন্ধের বই, বিষয়ভিত্তিক বা নির্বাচিত বই বেশি প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটির এ বিশেষত্ব প্যাভিলিয়নের নকশায় প্রকাশ করতে স্থপতি প্যাভিলিয়নটি সরল, অনাড়ম্বর এবং একইসঙ্গে আকর্ষণীয় করতে চেয়েছেন বলে জানালেন। একইসঙ্গে সমদর্শনের (কোনো লেখকই কম গুরুত্বপূর্ণ নন) দৃষ্টিভঙ্গিটাও বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে প্যাভিলিয়নটিতে।
স্থপতির ভাবনা
স্থপতি সাইফ উল হক ভেবেছিলেন, বারবার ব্যবহার করা যায় এমন উপকরণ দিয়ে প্যাভিলিয়ন বানাবেন। জ্বালানি খরচ না করে, প্রকৃতির ওপর চাপ না তৈরি করে নতুন কিছু করা মুশকিল। সে অর্থে নতুন কিছু মানে নতুন কার্বন নিঃসরণ এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ানো। তাই বারবার ব্যবহার করা যায় এমন উপকরণ লোহা, ইস্পাত, প্লাইউড বেছে নিলেন।
ইউপিএলের গতবারের প্যাভিলিয়নের লোহা–ইস্পাতের ৯০ ভাগ এবং লাইট, সুইচ, সকেটের ৮০ ভাগ এবারও ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে বাঙালিয়ানা মুখ্য, সেখানে ইস্পাত, লোহার ব্যবহার কি শোভন? প্রশ্নটি স্থপতি সাইফুল হককে না করে পারলাম না। 'বাঁশ-বেত সহজে প্রকৃতিতে মিশে যায় সত্যি কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এগুলোর সমস্যাও আছে। লোহা বা ইস্পাত দিয়ে খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করা সম্ভব। ঠিক যেখানে যতটা কোণ তৈরি করতে চাইবেন, ততটাই পারবেন। আর প্লাইউড একটি বিস্ময়কর উপকরণ, বিশেষ করে নমনীয়তার দিক থেকে; আর সাশ্রয়ীও বটে,' বললেন তিনি।
বইমেলার একটি প্যাভিলিয়ন নকশা করতে গিয়ে কোন কোন বিষয় ভাবনার কেন্দ্রে ছিল? স্থপতি সাইফ উল হক বললেন, 'দুটি বিষয় মুখ্য — কত বেশি বই দেখানো যায় এবং কতটা সহজভাবে। অনেক ভালো বই আপনার আছে কিন্তু জায়গাটি স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক নয়; পাঠক বেশিক্ষণ থাকবেন না। আবার খুব স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক কিন্তু বই বেশি দেখার সুযোগ নেই, তখনও উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূরণ হয় না।'
বইমেলার সবগুলো স্টল বা প্যাভিলিয়ন কি এভাবে সেজে উঠলে ভালো হয়? সেক্ষেত্রে কি বইয়ের বদলে অবকাঠামোর ওপর মনোযোগ বেশি চলে যাবে? এ স্থপতি মনে করেন, বইয়ের রাজ্যটা সুন্দর দেখালে বইয়ের গুরুত্ব কমবে না। 'মেলাযাত্রীরা একইসঙ্গে দেখার, ছোঁয়ার এবং অনুভবের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরলে ভালোই হয়। লেখক বা প্রকাশক ছাড়া অন্য যারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদেরকেও দৃশ্যমান করার সুযোগ রয়েছে এবং স্টল বা প্যাভিলিয়ন নকশায়,' বলেন স্থপতি সাইফুল।