১৮৬৪ সাল, কলকাতা কৃষি প্রদর্শনীর সেরা ঢাকাই ষাঁড়!
১৮৬৪ সালের জানুয়ারি। কলকাতায় এক আয়োজনে সাড়া পড়ল চারদিকে। তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ সরকার ছিলেন এ কৃষি প্রদর্শনীর আয়োজক। এ আয়োজনে গবাদিপশু বিভাগে ঢাকা থেকে প্রথম পুরষ্কার জিতেছিল সংকর প্রজাতির একটি ষাঁড়। ইউরোপিয় এবং ভারতীয় উভয় জাতির লোকজন এতে অংশ নেয়। ঢাকা বিভাগীয় সেরা পুরষ্কারটি জেতেন এক ইউরোপিয়।
বিচারকরা প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, প্রদর্শনীতে আসা ষাঁড় ও গরুগুলো ছিল খুব ভালো। যেমন খাজা আব্দুল গনি তাঁর সংকর গরুর জন্য প্রথম পুরস্কার পান। মিস্টার থমাস বিভাগীয় পর্যায়ে তার ষাঁড়ের জন্য প্রথম পুরস্কার হিসাবে ৫০ রুপি পেয়েছেন।
প্রদর্শনীর প্রধান তিন দ্রষ্টব্য ছিল- গবাদিপশু, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদিত পণ্য। উদ্দেশ্য ভারতের সব অঞ্চলের স্থানীয় উপকরণসমূহের নমুনা যাচাই। অংশগ্রহণকারীরা বেশ একটা বিভ্রান্তিতে পড়েছিল। ভাবছিল, আসলে কী দেখানোর আছে, এ তো নিত্যদিনের গৃহস্থালি বিষয়। তারা ধরে নেন, সম্ভবত ব্যতিক্রম মানে অদ্ভুত কিছু দেখাতে বলছে আয়োজকরা।
আয়োজক কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় বড় শিংওয়ালা প্রচুর লোমশ প্রাণী হাজির করা হয়েছিল। একটি পুরুষ ছাগল দেখিয়ে বলা হচ্ছিল, সেটি বাঘের সঙ্গে লড়াই করেছে! একজন নারী একটি পশু হাজির করেছিলেন, যার পা ছিল তিনটি।
এসব মজার ঘটনার মধ্যে দিয়েই প্রদর্শনী দারুণ জমেছিল। সে সময় প্রায় ৭০ হাজার লোক এটি দেখতে আসে।
সিলেটের আমিরউল্লাহ ২০ রুপি পুরস্কার পান পোকা ধরার খাঁচা বানিয়ে। নতুন এক আঁশ তৈরি করে তিনি ১৬ রুপি পুরস্কারও জেতেন।
সুগন্ধি তামাক প্রস্তুত করে সৈয়দ আব্দুল মজিদ ৪ রুপি পুরস্কার পান। প্রদর্শনীতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়েই এক্সিবিট উপস্থাপন করতে পারত। পশমের তৈরি পোশাকের জন্য ঢাকা গার্লস স্কুল দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে আর ঢাকা জেল পুরস্কার পায় কাগজ প্রস্তুত করে।
ফুল আর শাকসবজি দেখিয়েও পুরস্কার জেতার সুযোগ ছিল। যেমন বর্ধমানের প্রদর্শনীতে মহারাজা প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন জেরানিয়াম ফুলের জন্য আর দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন গোলাপের জন্য। শস্য বিভাগে সাদা আখের জন্য হুগলির হরু মোহন মুখার্জি প্রথম পুরস্কার জেতেন ৩০ রুপি এবং ইউরোপিয়দের মধ্যে বর্ধমানবাসী মিসেস অ্যাটকিনসন মরিচের জন্য পান ১৫ রুপির পুরস্কার। শারদা প্রসাদ রায় জেতেন ৫ রুপি বাঁধাকপির জন্য।
ওই প্রদর্শনীর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে একই বছর ও পরের বছর বাংলা ও উড়িষ্যায় বেশ কয়েকটি কৃষি প্রদর্শনী হয়েছিল।