বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যারা
১৯ ডিসেম্বর। সান্তিয়াগোর পথে পথে সেদিন লাখো মানুষ আনন্দে নেচে উঠেছিল। কারণ তাঁদের প্রিয় নেতা গাব্রিয়েল বোরিক প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তিনি একজন বামপন্থী। প্রতিপক্ষ ছিলেন চরম ডানপন্থী হোসে আন্তনিও কাস্ট। বোরিক চিলির সবচেয়ে কমবয়সী প্রেসিডেন্ট। এই উপলক্ষে এএফপি কমবয়সী নেতাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল-
গিয়াকো সিমোনচিনি: পৃথিবীর আর কোনো দেশ স্যান ম্যারিনোর মতো নয়। এখানকার রাষ্ট্রপ্রধানের তকমাও প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী নয়। এখানে একই সঙ্গে দুজন রাষ্ট্রপ্রধান হন মোটে ছয় মাসের জন্য। তাঁদেরকে ডাকা হয় ক্যাপ্টেন। গেল অক্টোবরে গিয়াকো সান মারিনোর একজন ক্যাপ্টেন হন। তাঁর জন্ম ১৯৯৪ সালে। তাহলে ছাব্বিশ পেরোচ্ছে তাঁর বয়স। তিনি মাত্রই ১৮ বছর বয়সে সামারিনেজ সোস্যালিস্ট পার্টিতে নাম লেখান। পরের বছরই তিনি নির্বাহী বোর্ডের সদস্য হন। উল্লেখ্য স্যান ম্যারিনো উত্তর মধ্য ইতালি ঘেরা একটি পাহাড়ি রাষ্ট্র।
সানা মারিন: ২০১৯ সালে ৩৪ বছর বয়সে মারিন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। ঝড় তোলেন গত সপ্তাহে ডিসকোতে গিয়ে। কারণ তার আগেই তিনি এমন একজনকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন যিনি কোভিড টেস্টে পজিটিভ। মারিন পরে অবশ্য এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মারিন ২০১৫ সালে প্রথম সাংসদ হন। ২০১৯ সালে স্বল্পমেয়াদে পরিবহন মন্ত্রীও ছিলেন। হেলসিংকিতে মারিন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৫ সালে। তাঁর পিতা-মাতা আলাদা হয়ে যান, তখন তিনি খুবই ছোট। এরপর তাঁরা অভাবে পড়েন। মাদকাসক্ত বাবার সঙ্গে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না, তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ১৯ বছর বয়সে মারিন গ্রাজুয়েট হন। পড়ার সময়ই তিনি একটি বেকারিতে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির অঙ্গসংগঠন সোস্যাল ডেমোক্রেটিক ইয়থে তিনি যুক্ত হন ২০ বছর বয়সে।
প্রশাসনবিজ্ঞান বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর হন টাম্পেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। টাম্পেরা সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে জয়ী হন ২০১২ সালে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি সিটি কাউন্সিলের চেয়ারপারসন ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি মারিনকে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা নির্বাচন করে। তাঁর মন্ত্রীসভায় ১৯ জনের মধ্যে ১২ জনই নারী। মারিন ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তাঁর প্রেমিক মার্কাস রাইকোনেনকে বিয়ে করেন। এমা নামে তাঁদের একটি কন্যাও আছে।
ভিয়োসা ওসমানি: গেল এপ্রিলে ভিয়োসা কসোভোর প্রেসিডেন্ট হন ৩৮ বছর বয়সে। ১৯৮২ সালে তাঁর জন্ম তখনকার যুগোস্লাভিয়ায়। তিনি আইন বিষয়ে পড়েছেন প্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল'তে। কসোভোর সাবেক রাষ্ট্রপতি ফাতমির সেজদিউর উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বিধানসভার (অ্যাসেম্বলি) স্পিকার ছিলেন। তিনি কসোভোর পঞ্চম রাষ্ট্রপতি।
ইরাকলি গারিবাসভিলি: ফেব্রুয়ারিতে জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন ইরাকলি গারিবাসভিলি। তখন তাঁর বয়স ছিল ওই ৩৮। ২০১৩ সালেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ ছিল দুই বছর। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন তাঁর দীর্ঘদিনের ব্যবসাসঙ্গী বিদজিনা ইভানিশভিলির মাধ্যমে। বিদজিনা একজন বিলিয়নেয়ার এবং ২০১২ সাল থেকে পরের এক বছর জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিদজিনা মারফত ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে রাজনীতিতে যুক্ত হন ইরাকলি। বিদজিনার আমলে ইরাকলি ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী হন। তিবলিসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। পড়েছেন প্যারিসের প্যানথিয়ন সরবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও ।
নায়িব বুকেলে: বয়স এখন ৪০। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের রাষ্ট্রপতি। যখন নায়িব নির্বাচিত হন তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৭। বুকেলে ২০১২ সালে নুয়েভ কাসকাতলানের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্যান সালভাদরের মেয়রও ছিলেন তিনি ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি মধ্য-দক্ষিণপন্থী গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স ফর ন্যাশনাল ইউনিটি নামের জোটের নেতা নির্বাচিত হন। তাঁর নিজের দলের নুয়েভ আইডিয়াস (নতুন চিন্তা!)। খবরে প্রকাশ বুকেলের আমলে খুনোখুনির হার দারুণভাবে কমেছে। তবে তিনি সমালোচিত তাঁর কর্তৃত্ববাদী সরকার পরিচালনার জন্য। বুকেলে ১৯৮১ সালে জন্মেছেন সান সালভাদরে। দি টাইমস অব ইজরায়েল জানাচ্ছে, বুকেলের পিতার দিকের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান। আর মায়ের দিকের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ক্যাথলিক এবং গ্রিক অর্থডক্স। বুকেলের পিতা আরমান্দো বুকেলে পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। বুকেলে সেন্ট্রাল আমেরিকান বিশ^বিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়ন করেছেন। তিনি নিজের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ডিজিটাল সংবাদপত্র এল ফারো জানাচ্ছে বুকেলে ইয়ামাহা মোটরস এল সালভাদরের মালিক।
জেসিন্ডা আরর্ডার্ন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। যখন শপথ নিয়েছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৭। লেবার পার্টির নেতা জেসিন্ডা প্রথম দলের মনোনীত সাংসদ (লিস্ট এমপি) হন ২০০৮ সালে। তারপর ২০১৭ সালে মাউন্ট অ্যালবার্ট অঞ্চলের সাংসদ হন ২০১৭ সালে। ২০০১ সালে তিনি গ্রাজুয়েট হন তারপর প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের কার্যালয়ে গবেষক হিসাবে যোগ দেন। তিনি লন্ডনে একজন উপদেষ্টা হিসাবে কেবিনেট অফিসেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোস্যাল ইয়থের প্রেসিডেন্ট হন। একই বছর তিনি সাধারণ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন আর ওই বছরই কি না তাঁর দল ক্ষমতা হারায়। তারপর ২০১৭ সালে তিনি মাউন্ট অ্যালবার্ট ইলেকটরেট নির্বাচিত। ওই বছরের মার্চে তিনি লেবার পার্টির উপ নেতা হন। পাঁচ মাস পরেই তিনি প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন।
এএফপির তালিকায় কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট কার্লোস আলভারাদো আছেন। ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৮। তিনি সাংবাদিকতা করতেন। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভরদকারও আছেন। ২০১৭ সালে নির্বাচিত হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৮। এছাড়া ফ্রান্সের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার এমানুয়েল ম্যাঁখো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় ৩৯ বছর বয়সী ছিলেন। ভূটানের রাজা জিগমে নামগিয়েল ওয়াংচুক ২০০৬ সালে সিংহাসনে বসার সময় মাত্র ২৬ বছর বয়সী ছিলেন।