এক হাত বনাম এক পা-এর ক্রিকেটযুদ্ধ
১৮৬১ সালে ইংরেজ লেখক ও সমালোচক চার্লস ডিকেন্স তার সাময়িকী 'অল দ্য ইয়ার রাউন্ড'এ একটি বিশেষ ধরনের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে প্রতিবেদন লিখেন। ম্যাচে অংশগ্রহণকারী দুটি দলের মধ্যে এক দলের খেলোয়াড়দের ছিল না এক হাত, আরেক দলের খেলোয়াড়দের ছিল না এক পা। পেকহাম রাই-তে রোজমেরি ব্রাঞ্চ ট্যাভার্নের মাঠে খেলা হয় ম্যাচটি।
ডিকেন্স তার প্রতিবেদনে লিখেন, "এক পায়ের খেলোয়াড়েরা ব্যাট হাতে বেশ ভালোই পারফর্ম করে। ছিল, কিন্তু ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মার খেয়েছে তারা। তাদের খেলা দেখাও ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি। একদিকে তারা ক্রাচ এবং কাঠের পায়ের সাহায্যে দৌড়ে বল করছিলো, অন্যদিকে বাকিরা হুক এবং স্টাম্পের সাহায্যে এক উইকেট থেকে আরেক উইকেটে ১ ও ২ রানের জন্য দৌড়াচ্ছিল।"
এ খেলায় জয়ী হন এক-হাতের খেলোয়াড়েরা। খেলার দৃশ্যটিকে 'বেদনাদায়কভাবে বিস্ময়কর এবং হাস্যকরভাবে ভয়ঙ্কর' হিসাবে বর্ণনা করলেও তিনি বলেন, খেলোয়াড়দের শারীরিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও দর্শকেরা বেশ আগ্রহের সাথে খেলা দেখতে আসেন।
ডিকেন্স যে ম্যাচ নিয়ে প্রতিবেদন করেন, সেটি আদতে গ্রিনউইচ পেনশনপ্রাপ্তদের সুবিধার জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রয়্যাল নেভি থেকে পেনশনপ্রাপ্ত নাবিক এবং গ্রিনউইচের রয়্যাল হসপিটাল ফর সিমেনের বাসিন্দা ছিলেন খেলায় অংশগ্রহণকারীরা। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারান এই নাবিকরা।
তবে, এ ধরনের ম্যাচ এর আগেও অনুষ্ঠিত হয়। ১৭৬৬ সালে ব্ল্যাকহিথে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ম্যাচ খেলেন খেলোয়াড়েরা।
এরপর ১৭৯৬ সালে ওয়ালওয়ার্থের আরামস নিউ গ্রাউন্ডে একই ধাঁচের আরেকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেই ম্যাচের বিজয়ীদের জন্য তৎকালীন এক হাজার গিনির পুরস্কার বরাদ্দ ছিল। এমনকি সেই ম্যাচের বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল।
ঐ ম্যাচে এক পায়ের খেলোয়াড়দের দলটি প্রথমে ব্যাট করে ৯৩ রান করে। এরপর এক-হাতি দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৪৩ রান করে। সেসময়ই দর্শকদের মধ্যে প্রচণ্ড হট্টগোল শুরু হয়। কেউ কেউ গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।
পরবর্তী ইনিংসে এক-পায়ের দল মাঠে নেমে ছয় উইকেট হারিয়ে আরও ৬০ রান করে। মোট ১৫৩ রান করে দলটি। সেই ম্যাচে ১১১ রানের ব্যবধানে জিতে যায় এক-পায়ের খেলোয়াড়রা।
১৮১১ সালে ওয়ালওয়ার্থে আরও একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেই ম্যাচেও বিজয়ীদের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ হাজার গিনির পুরস্কার। পরবর্তীতে ১৮৪১ থেকে ১৮৬৮ পর্যন্ত এরকম আরও ৫ট ম্যাচের বর্ণনা পাওয়া যায়।
- সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট