ঘুমপাড়ানি গল্প-রূপকথা আর বাচ্চাদের জন্য নয়, বুড়োদের জন্যও
ছোটবেলায় মা-দাদি-নানিদের মুখ থেকে আমরা অনেক রূপকথার গল্প শুনেছি। তবে রূপকথার দৌড় এখন আর শুধু শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মহামারিকালে বিভিন্ন মেডিটেশন অ্যাপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে রূপকথার গল্প। এখানেই শেষ নয়। ইন্টারনেট ভর্তি হয়ে গেছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রূপকথার গল্পে। বড়দের মধ্যে রূপকথার গল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
গবেষক ড. ক্রিস্টিন ওউন বলেন, 'রূপকথার গল্প আমাদের মন থেকে নানা দুশ্চিন্তা সরিয়ে রাখে।'
এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের বেশ কয়েকজন জানান, ঘুমানোর সময় বাচ্চাদের গল্প শুনলে তাদের বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা সুশৃঙ্খল হয়। প্রতি রাতে ঘুম না আসার আগ পর্যন্ত তারা অডিও গল্প শোনেন।
শিশুদের গল্প শোনাদের দলে আছেন ৫৯ বছর বয়সি কনসালট্যান্ট পল ব্যারেট। মহামারির সময় তিনি বিক্ষিপ্ত মন শান্ত করার জন্য বাচ্চাদের গল্প শুনতে আরম্ভ করেন।
ব্যারেট জানান, 'আমার শুরুটা ক্লাসিক গল্প দিয়ে। ...এখন অবশ্য দূরত্ব-বিষয়ক গল্প বেশি শুনি।'
বাচ্চাদের গল্পের মাঝে ভ্রমণকাহিনিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে ট্রেনভ্রমণের গল্প জনপ্রিয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ঘুমপাড়ানির গল্প শোনানো এখন ক্রমবিকাশমান শিল্প। বিভিন্ন দেশে অ্যাপের মাধ্যমে বয়স্কদের গল্প শুনিয়ে দারুণ ব্যবসা করছে বিভিন্ন কোম্পানি। গল্প ঘুমাতে যাওয়ার আগে গল্প শোনার অ্যাপ 'কাম'। এতে বাচ্চাদের গল্প শোনা হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন বারের বেশি। 'ব্রিথ' অ্যাপে এরকম গল্প আছে ১০০টির বেশি। রোজই তাদের বাচ্চাদের গল্পের চাহিদা বাড়ছে।
বাচ্চাদের গানে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন মন্ট্রিলের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সি ন্যান্সি শেরনফও। তিনি জানান, এসব গল্প তার মানসিক চাপ কমিয়ে বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
এসব অ্যাপ ও পডকাস্টে হরেক রকমের ঘুমপাড়ানি গল্প শোনা যায়। এই বৈচিত্র্যের কারণে উপকৃত হন শ্রোতারা। কারণ একেক শ্রোতার জন্য একেক গল্প উপযোগী। তাই বৈচিত্র্য থাকলে সবাই যার যার পছন্দসই গল্প বেছে নিতে পারেন।
শুনতে সহজ মনে হলেও বয়স্কদের জন্য ঘুমপাড়ানি গল্প তৈরি কিন্তু অত্যন্ত জটিল শিল্পকর্ম।
যারা প্রথম কোনো গল্প শুনবেন, তাদের কাছে গল্পটা কৌতূহল জাগানিয়া হতে হবে। গল্পের চরিত্রগুলো খুব জটিল হওয়া যাবে না। নানা দৃশ্যের বর্ণনা থাকতে হবে যথেষ্ট পরিমাণে, যাতে শ্রোতারা কল্পনার চোখে সেসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।
আর ঘুমপাড়ানি গল্পের আদর্শ দৈর্ঘ্য হলো ১৫ থেকে ৩০ মিনিট। সেইসঙ্গে থাকতে হবে উপযুক্ত আবহ সংগীত।
এসব গল্পের আরেকটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে কণ্ঠ। গল্প যিনি শোনাবেন তিনি একটা গল্পকে যেমন দারুণ আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন, তেমনি পারেন একটা গল্পকে নষ্ট করে দিতেও।
গল্প বলার সুর, সুরের মূর্ছনা, ধারাভাষ্যকারের প্রাণশক্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রোতারা ঘুমপাড়ানি গল্প বারবার শুনতে পছন্দ করেন। কাজেই গল্পটা বলতে হবে খুব সুরেলাভাবে, দারুণ প্রাণশক্তি নিয়ে। এ কারণেই সম্ভবত ক্লাসিক গল্পগুলোর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। গত অক্টোবরে ব্রিথ অ্যাপের সবচেয়ে বেশি শোনা গল্প ছিল 'সিন্ডারেলা'। হ্যাচ নামে আরেক অ্যাপ 'পিটার প্যান' পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা।
কখনও কখনও গল্প বলিয়ে স্রেফ তার বর্ণনার গুণেই শ্রোতাদের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে ফেলেন।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানী রেবেকা রবিনস বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘুমপাড়ানি গল্প অত্যন্ত কার্যকর ও অর্থবহ। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের শান্ত করার কৌশল ব্যবহার করে বড়রাও উপকৃত হতে পারেন।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস