দেখে নিন কীভাবে এই ৪ বিরক্তিকর সহকর্মীকে মোকাবেলা করবেন
যৌথভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা হতে পারে দারুণ। সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করলে সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। প্রতিষ্ঠানে একইসঙ্গে দুজনেরই দ্রুত ভালো একটি অবস্থানে পৌঁছে যাওয়াও সহজ হয়ে ওঠে।
তবে সবার সঙ্গে কাজ করা সহজ নয় এটাও সত্যি। অনেকেই কাজে সহায়তার বদলে উল্টো বিরক্তির উদ্রেক ঘটান।
কাজ করার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের বিকল্প নেই। এই পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে আপনার কর্মজীবনেই পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। আর তাই সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ গড়ে নিয়ে বিরক্তিকর ব্যক্তিদের হাত থেকে বাঁচতে কৌশলী হওয়া প্রয়োজন।
দেখে নিন কোন কোন কৌশলে অফিসের এই ৪ বিরক্তিকর সহকর্মীকে সামলাবেন।
১। ফাঁকিবাজ সহকর্মী
অফিসে এমন অনেক ব্যক্তিই থাকেন যারা কম কাজ করেই কাটিয়ে দেন। তাদের কাজ যে পড়ে থাকে এমন নয়। দলের অন্য কোনো দক্ষ বা খুব সচেতন কর্মী হয়তো সেই বাড়তি কাজটুকু করে ফেলেন। আর এভাবেই ফাঁকি দেওয়া কর্মীরা বারবার পার পেয়ে যান।
দুঃখজনক হলেও অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানই এই ফাঁকিবাজ কর্মীদের নিয়োগ করে থাকে। কিন্তু দলের অন্য সদস্যরা যে তার ওপর বিরক্ত থাকে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। স্রেফ এবারের মতো তাদের কাজগুলো করে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানান তারা।
এরকম ফাঁকিবাজ কর্মী বা সহকর্মীর সঙ্গে তাহলে কী করবেন? প্রথমেই বলি কী করবেন না। সরাসরি কখনোই তার সামনে দোষ ধরবেন না বা খোঁচা দিয়ে কথা বলবেন না। এরকম করলে অফিসেই হুলস্থূল কাণ্ড বেঁধে যেতে পারে। আর তাই সবার সামনে তামাশা করার পরিবর্তে তার প্রশংসা করুন।
হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। এই প্রশংসা তাদের কেবল কাজের জন্য উজ্জীবীত করে তুলতেই সাহায্য করবে না, পাশাপাশি নিজের দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিনি লজ্জিতও বোধ করবেন।
২। বারবার কাজের অগ্রগতি জানতে চেয়ে বিরক্ত করা সহকর্মী
আরেক ধরনের বিরক্তি উদ্রেককারী সহকর্মীরা আপনার কাজ নিয়ে নিয়মিত আপনার সঙ্গে ঘ্যানঘ্যান করে যাবে। এ ধরনের ব্যক্তিরা সন্দেহপ্রবণ। তাদের মনে হবে আপনি কোনো না কোনোভাবে কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। যৌথ কোনো প্রজেক্টে কাজ করলে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু সময় পরপরই তারা হয়তো আপনার কাছে এসে কাজের অগ্রগতি জানতে চাইবেন।
এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন? প্রথম কথা হলো কখনোই বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। তাদের কোনো কঠিন কথা শুনানোর চিন্তাও বাদ দিন। তিনি কাজের জন্য খোঁজ নিচ্ছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানান। এরপর একটি সমাধানে আসার প্রস্তাব রাখুন। তাকে বলুন ২০ মিনিটে কাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। পরিবর্তে তাকে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময়ের কথাও জানান।
বড় কোনো কাজ হলে, কখন কতটুকু শেষ করবেন তাও জানিয়ে দিন। এমনকি আপনি নিজে থেকেই কাজের অগ্রগতি বা সমস্যা হলে সেসব কথা জানাবেন বলেও আশ্বস্ত করুন।
৩। গলাবাজি করে বেড়ানো সহকর্মী
আরেক ধরনের বিরক্তি সৃষ্টিকারী সহকর্মী হলো যারা কথায় কথায় অফিসের অন্যদের থামিয়ে দেন। এই ব্যক্তিরা গলার জোরে সব জায়গায় আগ বাড়িয়ে কথা বলেন।
আপনাকে বুঝতে এই ধরনের মানুষ সাধারণত দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ভালোবাসেন। খুব ভালো কাজ করেন বা ভালো ভালো আইডিয়া দেন এমন কর্মীদের কাজও তাদের গলার জোরে চাপা পড়ে যায়। বিশেষ করে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষরাই এদের কারণে বেশি ভুগেন।
আর তাই অফিসে অন্য কেউ নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার সময় এই গলাবাজি করতে আসা ব্যক্তিকে সুযোগ না দিয়ে আরেকজন যেন তার কথা শেষ করতে পারে তা নিশ্চিত করুন।
৪। বসের কাছে আড়ালে কথা লাগানো সহকর্মী
সবার শেষে আসে অফিসের সবচেয়ে বিরক্তিকর সেই ব্যক্তিটি যিনি বিরক্তিকর হলেও বসের প্রিয় পাত্র। এই ব্যক্তিটি আপনার আড়ালে আপনার বিরুদ্ধেই উল্টাপাল্টা কথা ছড়িয়ে বেড়ায়। কিন্তু আপনি যে তার বিরুদ্ধে গিয়ে বসের কাছে নালিশ করবেন সেই সুযোগও নেই। এমন কিছু করলে উল্টো নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো কাজ হবে।
এক্ষেত্রে আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে। আপনার পরিচিত মহলের বাইরেও একটু খোঁজ-খবর রাখুন। এই ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গেও একই আচরণ করেন কি না সন্ধান করুন। আপনার মতো যারা ভুক্তভোগী তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। যদি এই কাজ না করেন, তবে আপনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন আর বসও ভাববে দোষ সম্ভবত আপনার একারই।
পরিশেষে আপনি যদি এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন যেখানে অধিকাংশ সহকর্মীদের নিয়েই আপনি সন্তুষ্ট তাহলে এই কৌশলগুলো আপনাকে বিরক্তিকর সহকর্মীদের হাত থেকে অনেকটাই বাঁচাতে পারবে।
তবে আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি এই বিরক্তিকর মানুষগুলোই পদোন্নতি পান কিংবা নিয়মিত প্রশংসা কুড়িয়ে থাকেন তাহলে এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়াই ভালো। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করুন যেখানে যোগ্য ব্যক্তিরাই যথাযথ মর্যাদা পান।
- সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ অবলম্বনে