‘সারাদিন চলত পেস্তার শরবত, তখন মিলমোহাব্বত ছিল বেশি, ঈদের মিছিলও হতো জমজমাট’
ঢাকার বাইশ পঞ্চায়েতের একজন ছিলেন মাওলা বখশ সরদার। ফরাশগঞ্জ-সূত্রাপুরের সরদার ছিলেন তিনি। ছিলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার। মারা যান ১৯৮৭ সালে। তাঁর ছেলে আজিম বখশ গড়ে তুলেছেন মাওলা বখশ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ট্রাস্টের অঙ্গ-সংগঠন ঢাকা কেন্দ্র যেটি সংরক্ষণ করছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। টিবিএস প্রতিবেদক সালেহ শফিককে আজিম বখশ বলেছেন তাদের ছোটবেলার ঈদের বর্ণাঢ্য গল্প...
'সারাদিন চলত পেস্তার শরবত, তখন মিলমোহাব্বত ছিল বেশি, ঈদের মিছিলও হতো জমজমাট'
আমার তিপ্পান্ন সাল থেকেই সব কিছু মনে আছে। আমার বাবা মাওলা বখশ সরদার সেবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। দেশ ভাগের পর ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম নির্বাচন ছিল সেটা। ৭টি ওয়ার্ডে ভাগ করা ছিল ঢাকা। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে তিনজন করে কমিশনার হতো। আমাদের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছিল পোস্তগোলা থেকে রায়সাহেব বাজারের চৌরাস্তা পর্যন্ত। পুরোনো সংবাদপত্রের ওপর কালি দিয়ে পোস্টার লেখা হতো। আর টিনের স্টেনসিলে ব্রাশ করে দেয়ালে ছাপ দেওয়া হতো। সেবার পৌর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন কাজী বশীর আহমেদ (হুমায়ুন সাহেব)। বশীর সাহেব ছিলেন রোজ গার্ডেনের মালিক। তাঁর নামে মেয়র মোহাম্মদ হানিফের উদ্যোগে গুলিস্তান পার্কের মিলনায়তনটার নাম কাজী বশীর রাখা হয়েছে। আমরা ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করেছিলাম, রাজধানী মার্কেটের কিছুটা উত্তর মানে টিকাটুলির অভয় দাস লেন থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তাটির নাম বশীর সাহেবের নামে রাখার জন্য। যাহোক আমাদের ছোটবেলার ঈদ ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ।
শবে বরাত থেকেই আমেজ তৈরি হতো
শবে বরাত আসত ঈদুল ফিতরের বার্তা নিয়ে। শবে বরাতে আমরা সারা রাত জাগতাম। সাইকেল নিয়ে হাইকোর্ট মাজার, কেউ কেউ তো শাহ আলী মাজারও যেত। তবে যাওয়ার পথে ভয় লাগত। তখন ঢাকায় মানুষ কমই ছিল। সব রাস্তায় আলোও জ্বলত না। একটা ঘটনা বলি। নারিন্দার যে খ্রিস্টান কবরস্থান আছে, সেটার দেয়ালটা কিন্তু আগে ততো উঁচু ছিল না। শ্বেতপাথরের একটা নারী মূর্তি আছে কবরস্থানের দিকে মুখ করা। লোকে বলত, রাতের বেলা মূর্তিটির মুখ রাস্তার দিকে ঘুরে যায়। শবে বরাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাই আমাদের বুক ঢিপ ঢিপ করত।
তখনকার ফরাশগঞ্জের কথাই ধরা যাক, কেউ ভাবতেও পারবে না কত সুন্দর ছিল ফরাশগঞ্জ। বাঁকল্যান্ড বাঁধটা শ্যামবাজার থেকে শুরু হয়ে বাদামতলীতে গিয়ে শেষ হয়েছিল। বাঁধ তৈরি হয়েছিল লন্ডনের টেমস নদীর পাড়ের অনুকরণে। মাঝে মাঝে কারুকার্যময় লোহার চেয়ার ছিল, পরে মোজাইক করা চেয়ারও করা হয়েছিল অনেক। এখন যেখানে সদরঘাটের ভিআইপি টার্মিনাল সেখানে বাধা থাকত গয়না নৌকা, তারপর ছিল ঘাসের বাজার। ঘোড়ার জন্য, গরুর জন্য ঘাসের এ বাজার বসত।
নবাব বাড়ির দিকটায় নৌ কর্তৃপক্ষের ইন্সপেকশন বোট ভেসে থাকত। ফরাশগঞ্জে তখন কেবলমাত্র প্রসন্ন পোদ্দারেরই গদী ছিল। একটা বড় হাফ চৌকির ওপর ধপধপে সাদা কাপড় বিছানো থাকত আর কাপড়ের ওপর ছিল মহাজনী ক্যাশ বাক্স। আর কোনো গদী এখানে ছিল না। তবে রাত বারোটা থেকে শাকসবজির পাইকারি হাট বসত, সেটা আবার সকাল সাতটাতেই শেষ হয়ে যেত। তার পরপরই গরুর গাড়ি চলে আসত পানির ট্যাংক নিয়ে, ধুয়ে সব সাফ করে দিত। মডার্ন ফার্নিচারের চার তলা শো রুম ছিল ফরাশগঞ্জে ভাবা যায়?
আর তারও আগে টার্নার গ্রাহাম, বার্মা ইস্টার্ন, ইন্ডিয়ান ইন্সুরেন্স, স্পেন্সার অ্যান্ড কোম্পানি- ইত্যাদি অনেক প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল। গ্রাহাম টার্নার আর ইন্ডিয়ান ইন্সুরেন্সের অফিস ছিল রুপলাল হাউজের ভিতরে (উনিশ শতকের শ্যামবাজারের খ্যাতনামা একটি দ্বিতল ভবন)। আর স্পেনসারের অফিস ছিল বিবি কা রওজার (১৬০০ সালে নির্মিত ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো ইমামবাড়া) কাছে। আমি নিজে রনদা প্রসাদ সাহাকে হাফপ্যান্ট, টিশার্ট আর কেডস পরে স্পেনসার অফিসে আসতে দেখেছি। তিনি সম্ভবত তাঁর স্কুল বা এতিমখানার জন্য চকলেট, বিস্কুট নিতে আসতেন। স্পেনসার কোম্পানি বিখ্যাত এবি বিস্কুটসহ আরো চকলেট ইত্যাদি আমদানি করত।
আসলে সদরঘাটই ছিল প্রাণকেন্দ্র
মতিঝিল গড়ে উঠতে থাকল আর ফরাশগঞ্জ থেকে একটা একটা করে অফিস উঠে যেতে থাকল, পরে বসল ফার্নিচারের শোরুম। এখানে হলুদ-মরিচের আড়তের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো না কিন্তু।
তখনকার ঈদ যে খুব জমকালো ছিল তা নয় কিন্তু দারুণ আনন্দদায়ক ছিল। তখন বনেদী টেইলার হাউজ ছিল ইসলামপুরে দু'চারটা-শরীফ অ্যান্ড সন্স বা এম রহমান। এই শরীফ সাহেব ছিলেন ঢাকার সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের সন্তান। রিভার ভিউ নামের একটি অভিজাত হোটেল তাঁর ছিল সদরঘাটে। সাধারণত সেখানকার কাস্টমাররা কাঁটাচামচ দিয়ে খাবার খেত। সাত-আটটি টেবিল ছিল, সাদা টেবিলক্লথ দিয়ে ঢাকা। কোনের দিকের একটা টেবিলে চুপচাপ বসে থাকতেন শরীফ সাহেব। তিনি ছিলেন চেইন স্মোকার। টেবিলের ওপর থাকত তাঁর টিনের কৌটা। পাসিং শো, ফাইভ ফিফটি ফাইভ তখনকার নামী সিগারেট। কৌটা গোল হতো, চার কোণাকারও হতো।
তবে আমার মনে হয়, ঢাকার প্রথম ইংলিশ রেস্টুরেন্ট ছিল জজ কোর্টের উল্টোদিকে। নাম ছিল ওকে রেস্টুরেন্ট। তারপর হাত বদল হয়ে মিসেস ডরোথির মালিকানায় আসে। শুনেছিলাম, তাদের বাড়ি ছিল শিলং। একসময় হোটেলটির নাম হয় আলেকজান্ডার। আমার বাবার সঙ্গে মিসেস ডরোথির খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। ডরোথির ওখানে ফ্রিজ ছিল যেটা কেরোসিন তেলে চলত। যখন চলত তখন মনে হতো আটার মেশিন চলছে। ক্রাম চপ আর কাটলেট ওদের ওখানেই ভালো হতো। বাঙালি খ্রিস্টান কারিগররা ভালো পারত এগুলো। ওদের ওখানকার কারিগর এসেই সম্ভবত ক্যাফে কর্নারে ক্রাম চপ বানানো শুরু করেছে।
সদরঘাটে বিকিকিনি তখন জমে উঠত ২০ রমজানের পর থেকেই। সারা রাত খোলা থাকত দোকানগুলো, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত চলত। সবশেষে ঈদ বাজার করত দোকানীরা নিজেরাই। সদরঘাটে করোনেশন পার্কে (রাজা পঞ্চম জর্জের অভিষেক উপলক্ষে স্থাপিত) কাচের একটি স্তম্ভ ছিল, অনেকটা আইফেল টাওয়ারের মতো। তার পাশে ছিল লেডিজ পার্ক। এখন সে জায়গায় হয়েছে হকার্স মার্কেট বা লেডিজ মার্কেট। আরেকটা রেস্তোরাঁ ছিল সদরঘাটে, সেটা রুপমহল সিনেমা হলের কাছে, নাম ছিল সিনেমা কেবিন। তুলনামূলক সস্তা খাবার পাওয়া যেত সেখানে। তবে বাংলোমতো সুন্দর ছিল দেখতে।
আসলে সে আমলে সদরঘাট এলাকাই ছিল প্রাণকেন্দ্র। আমি উইমেন্স কলেজের প্রিন্সিপাল আমাতুল খালিকের স্মৃতিকথায় পড়েছি, রুপলাল হাউজ মাঠে উইমেন্স স্পোর্টসের আয়োজন করা হয়েছিল, সে আমলে মেয়েদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কি উল্লেখ করার মতো ব্যাপার নয়?
রুপলাল হাউজের পিছন মানে বাকল্যান্ড বাঁধে একাত্তরের আগ পর্যন্ত সাধু-সন্ন্যাসীদের ভিড় ছিল। তারা এখানে যজ্ঞ করত। ভাওয়ালের সন্ন্যাসী রাজাকে তো প্রথম এখানেই দেখা যায়। রূপলাল হাউজে সম্ভবত ভাওয়ালের কোনো মেয়ে বউ হয়ে এসে থাকবেন, তিনিই প্রথম রাজাকে নজর করেন। কিন্তু রাজা আর প্রাসাদে ফিরতেই চাননি, একরকম জোর করেই তাকে বাঁধের ওপর বসিয়ে ছবি তোলা হয়েছিল, নবাবপুরের ওরিয়েন্ট স্টুডিও থেকে ক্যামেরা আনানো হয়েছিল। এই কথাগুলো এ কারণেই বললাম যে, গত শতকের ঢাকা আসলে সদরঘাট কেন্দ্রীকই ছিল।
ছিল খলিফাবাড়ি
আগেই বলেছি টেইলার হাউজ ছিল না সেরকম, ছিল দরজিবাড়ি বা খলিফাবাড়ি। ঈদের পনের দিন বাকী থাকতেই খলিফারা আমাদের বাড়িতে এসে মাপ নিয়ে যেত। আর তারপর থেকে আমরা প্রায়ই তাদের বাড়ি গিয়ে তাগাদা দিয়ে আসতাম। আমাদের অত্যাচারে বেচারাদের ঘুমই হারাম হয়ে যেত। তখন ছিল থান কাপড়ের যুগ-ডিপ গ্রিন, ডিপ ব্লু রঙের থান কাপড় মিলত। বি কে দাস রোডে চিত্তরঞ্জন কটন মিলসের একটা শো রুম ছিল।
তবে সেকালে জুতোয় একমেবাদ্বিতীয়ম ছিল- বাটা। ওদের নটি বয় নামের একটা জুতা ছিল, জীবনেও ছিঁড়ত না। ঈদের জামাত কিন্তু মাঠে-ময়দানে পড়ার বেশি চল তখন ছিল না, আমরা মসজিদেই পড়তাম। আগের রাতে মসজিদ ধোয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল মহল্লাবাসীর। তখন তো এত পানির ব্যবস্থা ছিল না, কুয়ো থাকত মসজিদসংলগ্ন। একা মুয়াজ্জিন সাহেবের পক্ষে পুরো মসজিদ ধোয়াও ছিল কঠিন। তাই মহল্লার কিশোর-যুবকেরা সবাই মিলে মসজিদ ধোয়ার কাজ করত। তার আগে ঈদের চাঁদ দেখা ছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। উঁচু গাছে চড়ে, উঁচু মিনারে চড়ে, বাড়ির ছাদে উঠে মানে যে যেখান থেকে পারত, চাঁদ দেখার চেষ্টা করত। চাঁদ দেখতে পেলে সে যে কী উল্লাস। মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হতো, কাল ঈদ। ঈদের জামাতের সময়ও বলে দেওয়া হতো।
আর ইফতারের সময় ঘোষণা করে বাজানো হতো সাইরেন। সূত্রাপুর থানা, মিল ব্যারাক, ঢাকা জুট মিলে সাইরেন ছিল। সেহরির শেষ সময়েও বাজত সাইরেন। সেহেরির আগে কাসিদা গেয়ে লোক জাগানোর প্রচলন ছিল। নাজিরাবাজার বাংলাদুয়ার এলাকায় বিখ্যাত কাসিদা গায়ক ছিলেন সোনামিয়া। ছন্দময় বাক্য ব্যবহার করে তিনি রোজাদারদের জাগাতেন, যেমন:
রোজদারু, দীনদারু, আল্লাহকা পেয়ারু
রাত দো বাজ গায়া, সেহরী খাও রোজা রাখখো
ঈদের দিন
আমরা ঢাকাইয়ারা ঈদ নামাজে যাওয়ার আগে সেমাই খেতাম। তখন বাড়ি বাড়ি হাতে হাতে সেমাই বানানো হতো। চুটকি আর চই সেমাই ছিল বিখ্যাত। লাচ্ছা সেমাইয়ের বয়স কিন্তু বেশি না। আর নামাজ থেকে ফিরে খেতাম খিচুরি আর গরুর গোশত। পোলাও কোর্মার আয়োজন হতো দুপুর ও রাতে। নামাজ শেষে কোলাকুলি করতাম, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে নিয়ে আসতাম। আমাদের বাড়িতে পেস্তার শরবত চলত সকাল থেকেই। কাচের সোরাহীতে রাখা জাফরান মেশানো এ শরবত পরিবেশন করা হতো ছোট ছোট গ্লাসে। ঈদের সারা দিনে ১০-১৫ লিটার পেস্তার শরবত তৈরি করা হতো।
ঢাকাই খাওয়াদাওয়া কিন্তু সময় সময়ই বদলেছে। যেমন দেশ ভাগের পর ওপাড় থেকে যারা এসেছিলেন তারা কিছু খাবার আমদানি করেছিলেন, মালাই চা তার একটি। এতে চা পাওয়া ভার বরং ঘন দুধ আর নানান মশলা এর পাত্র-পাত্রী। আমি একে বলি লিকুইড পায়েশ। নবাবপুরে আমজাদিয়া, আমানিয়া হোটেল এটা চালু করেছে।
ঈদী বা ঈদের সালামী তো ঈদের আরেকটি বড় ব্যাপার। যেখানে বেশি ঈদী সেখানে যত আগে পৌছানো যায় সেটাই ছিল সব বাচ্চাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। বাংলাবাজারের আদি প্রকাশনীগুলোর অন্যতম স্টুডেন্ট ওয়েজের মালিক ছিল আমার খালাতো বোনের হাজব্যান্ড। তাদের আদি বাড়ি ছিল মৌলভীবাজারে। পরে তারা বাংলাবাজারে চলে আসে। আমার ওই খালাতো বোন ঈদী দিত পাঁচ টাকা। সে সময় এটা ছিল অনেক টাকা। মায়ের কাছে এনে জমা রাখতাম, তবে সেটা সব সময়ের জন্যেই আমার নিজের টাকা। মানে একধরনের মালিকানার বোধ জাগত আর ঈদের সময় শাসনে বেশি কড়াকড়ি থাকত না। বড়রা তখন ছোটদের খুব মায়া করত। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, তখন ওয়ান টাইম টুপি পাওয়া যেত। কাগজ দিয়ে তৈরি, খুব সস্তা ছিল সেগুলো। লাল নীল রঙ করা থাকত। ঈদের দিন পরেই শেষ।
ঈদের পর
ঈদ মিছিল ছিল ঈদের পরের বড় আয়োজন। এর বয়স তিনশ হয়ে যাবে। ঢাকার নায়েবে নাজিমরা এর প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। সব পাড়া মহল্লা থেকে ঈদ মিছিল বের হয়ে জড়ো হতো চক বাজারে। সেখান থেকে ইসলামপুর, নবাবপুর, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া ঘুরত এ মিছিল। তবে এ মিছিল কেবল আনন্দ যাত্রা ছিল না, অভাব অভিযোগের প্রকাশও ঘটত এতে। গরুর গাড়িতে ভ্রাম্যমাণ গ্যালারি হতো। কোনোটায় দেখা যেতে একজন পিঠে থাবড়া দিয়ে চটাস চটাস আওয়াজ তুলছে মানে হলো মশা খুব বেশি ঢাকা শহরে, সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নাও। আরেকবার দেখে ছিলাম একজনকে জুতা পেটা করা হচ্ছে মানে শহরে চোর বেড়েছে। মিছিলটা দেখার জন্য ঢাকার বাইরে থেকেও প্রচুর লোক জড়ো হতো। বাড়ির বারান্দায়, ছাদে লোক উপচে পড়ত।
ঈদের পরে কাসিদা প্রতিযোগিতা হতো। আমাদের এলাকার (সূত্রাপুর-ফরাশগন্জ) প্রতিযোগিতাটি হতো ফরিদাবাদে। কেন্দ্রিয়ভাবেও একটি প্রতিযোগিতা হতো, সম্ভবত হোসেনী দালানে। বাকল্যান্ড বাঁধে মেলাও বসতো তিন চারদিন ধরে। সপ্তাখানেকের মাথায় যেতাম পিকনিকে। সাইকেল পিকনিক। একবার গিয়েছিলাম ভাওয়াল রাজবাড়িতে। হাড়ি পাতিল সব নিয়ে একেক সাইকেলে দুইজন করে গিয়েছিলাম পিকনিক করতে।
তবে এতো সব কিছু সত্ত্বেও আমার বেশি মনে পড়ে মায়া মোহাব্বতের কথাই। তখনো ঝগড়া ঝাটি হতো কিন্তু মিটেও যেত অল্পের মধ্যে। পঞ্চায়েতের সরদার ঈদের দিন দুই ঝগড়াকারীকে দুই হাতে ধরে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পেস্তার শরবত খাইয়ে শত্রুতা ভুলিয়ে দিতেন। পরের দিন থেকে তাদের গলাগলি করে হাঁটতে দেখা যেত। তখন মানুষে মানুষে মিল মোহাব্বত ছিল অনেক। এটা এখন কমই টের পাই। এর জন্যই আফসোস হয় বেশি।