‘হীরার রাজ্য’ মোগল ভারতে আওরঙ্গজেবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উৎসুক ছিল রাশিয়ান জাররা
১৬৯৮ সালের জানুয়ারি মাসের এক সকালে পারস্যের বন্দর আব্বাস থেকে সুরাটের ব্যস্ত বন্দরে পণ্যবাহী একটি জাহাজ এসে পৌঁছে। জাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ভারতীয় ও পারসিয়ানদের সঙ্গে ছিল রাশিয়ানদের ছোট একটি দল। ১৫ শতকে আফাসানি নিকেতিন চাউলে আসার পর এই প্রথম রাশিয়ানদের কোনো দল ভারতে আসল। রাশিয়ান দলটির নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ ব্যবসায়ী ও পরিব্রাজক সেমিয়ন ম্যালেনকি (বা ম্যালেনকভ)। ম্যালেনকির পরিকল্পনা ছিল কয়েক বছর ভারতে থেকে প্রচুর পণ্য সমারোহ নিয়ে দেশে ফিরবেন।
১৬৯৫ সালের জুন মাসে ম্যালেনকি আস্ত্রাখান থেকে যাত্রা শুরু করেন। আস্ত্রাখান সেই শহর যেখানে ভোলগা ক্যাস্পিয়ান সাগরে পড়ার আগে শেষ ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। সুরাটে যাত্রা শুরুর আগে ভারত সম্পর্কে ম্যালেনকি স্রেফ এইটুকু জানতেন যে, দেশটি গ্রেট মোগলদের দ্বারা শাসিত। রাশিয়ায় মোগলদের এই নামেই ডাকা হতো।
ম্যালেনকির এই যাত্রা ছিল মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে পৌঁছাতে রাশিয়ান জারদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এর আগে তারা শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ১৭ শতকে রাশিয়ানদের কাছে ভারত ছিল রুবি, হীরা ও সূক্ষ্ম কাপড়ের সমৃদ্ধ এক দেশ। ভারত সম্পর্কে তাদের তথ্যের প্রধান উৎসের মধ্যে ছিল নিকিতিন এবং মার্কো পোলোর লেখা। "ইন্ডিয়া ইন রাশিয়ান লিটারেচার বইয়ে রবার্ট এইচ স্ট্যাসি লিখেন, "মার্কো পোলোর লেখা ছাড়াও অনেক বিবরণেই ভারতে রুবি ও হীরার ইঙ্গিত মিলত। এর কিছু যেমন সত্যি ছিল, কিছু ছিল কল্পিত"।
১৬০০ শতকের গোড়া থেকেই জাররা মোগল সাম্রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের উপায় খুঁজছিলেন। ততদিনে অবশ্য পরোক্ষ বাণিজ্য চালু হয়েছিল। ভারতীয় তুলা, রঙ ও পোশাক মধ্য এশিয়া ও আস্ত্রাখান হয়ে রাশিয়ায় যাচ্ছিল। ভারতীয় এক গোষ্ঠীই এই বাণিজ্য সব তদারকির দায়িত্বে ছিল।
'আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া: রেটরিক অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি বিটুইন মাস্কভি অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া ইন সেভেনটিনথ সেঞ্চুরি'- শীর্ষক লেখায় মধ্য এশিয়া বিশেষজ্ঞ উলফাত আবদুল-রাসুলভ লিখেছেন, "এসময় রোমানভ প্রশাসন ভারত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, মোগল শাসকদের সম্পর্কে তথ্যের পাশাপাশি কীভাবে ভারতে পৌঁছানো সম্ভব সেই পথ খুঁজে বের করাই ছিল উদ্দেশ্য।"
১৬৪০-এর দশকে জার আলেক্সেই মিখাইলোভিচ বেশ কয়েকবার মধ্য এশিয়া হয়ে ভারতে রাশিয়ার প্রতিনিধি পাঠানোর চেষ্টা করেন। শুধু শাহজাহানের কাছেই তিনবার প্রতিনিধি পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে দুটি দল স্থলপথে মধ্য এশিয়া এবং একটি দল ইসফাহান হয়ে যাত্রা করে। কিন্তু সফবীয়দের সঙ্গে মোগলদের আঞ্চলিক বিরোধের পাশাপাশি মধ্য এশিয়ায় সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল রুশদের যাতায়াতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথম যাত্রা
১৬৭৫ সালে জার আলেক্সেই মিখাইলোভিচ পুনরায় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। এরমধ্যে আওরঙ্গজেব মোগল সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যায় তার পুরোটাই রাশিয়ার বিখ্যাত ইন্দো-ভারত বিশেষজ্ঞ কোকা আন্তনোভার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সংগৃহীত তথ্য হতে প্রাপ্ত। আন্তনোভার সম্পাদিত ১৯৫৮ সালের বই 'রুশো-ইন্ডিয়ান রিলেশনস ইন দ্য সেভেটিন্থ সেঞ্চুরি'তে ১৬৭৫ সালের যাত্রার পূর্ণ বিবরণ মিলে।
জারদের একটি প্রতিনিধি দল বুখারা হয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ যাত্রার নেতৃত্ব দেন আস্ত্রাখানের তাতার মুহাম্মদ ইউসুফ কাজিমভ। তার সঙ্গে ছিলেন পারস্য বংশোদ্ভূত ভাসিলি দাউদভ। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন বহু ভাষাবিদ।
খিভা ও বুখারায় গিয়ে স্থানীয় খানদের হাত থেকে কয়েকজন রাশিয়ান বন্দিকে মুক্ত করে আনার দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছিল। কাজিমভ এরপর বলখ হয়ে কাবুল এবং তারপর আওরঙ্গজেবের দরবারে যাবেন এমনটাই পরিকল্পনা ছিল। দলটি আস্ত্রাখান থেকে যাত্রা শুরু করে ভোলগা থেকে কাস্পিয়ান সাগর হয়ে বর্তমান তুর্কমেনিস্তানে এসে পৌঁছে। সেখান থেকে উটে চড়ে কয়েক মাস ভ্রমণের পর খিভা ও বুখারা গিয়ে পৌঁছায় তারা।
কাজিমভসহ অন্য চারজন বুখারা থেকে বলখের দিকে অগ্রসর হন। অন্যদিকে দাউদভের দায়িত্ব ছিল মস্কো ফেরার আগ পর্যন্ত মধ্য এশিয়ায় থেকে বাণিজ্যের সুযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করা। জার আওরঙ্গজেবকে ব্যক্তিগতভাবে লাতিন, তাতার ও রাশিয়ানদের তরফ থেকে উপহার দেওয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে জরুরি আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন কাজিমভকে। মোগল সাম্রাজ্য ও রাশিয়ার জারডমের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব রাখাই ছিল আলোচনার মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও, নথি অনুসারে জার চেয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত রত্ন কারিগররা যেন রাশিয়ায় আসেন।
আওরঙ্গজেবের চিঠি
১৬৭৬ সালে তখন শরৎকাল। কাজিমভ ও তার প্রতিনিধিরা কাবুলে পৌঁছে গভর্নর মুকাররম খান মীর ইসহাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে রাশিয়ানরা যেরকম আশা করেছিলেন, কূটনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে তেমন সাড়া পাননি। আওরঙ্গজেব তখন শাহজাহানবাদে। তিনি কাবুলের গভর্নরের কাছ থেকে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের বার্তা পেলেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে মানা করে দেন।
আওরঙ্গজেব কাবুলের গভর্নরকে পাঠানো চিঠিতে লিখেন, "আর কাবুলের গভর্নর, আপনি আমাকে, মহান ভারতীয় সার্বভৌমের কাছে লিখেছেন যে রাশিয়ান রাষ্ট্র থেকে একজন দূত আপনার কাছে এসেছেন এবং এখন তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চান। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, কাবুলের খান, আপনার প্রতি আমার আদেশ নিম্নরূপ: এর আগে কখনও রাশিয়ান দূতরা আমাদের ভারতীয় রাজ্যে আসেনি। তাই এখন আপনাকে অবশ্যই তাদের রাজকীয় পরোয়ানা ও যথাযথ উপহারসহ রাশিয়ান রাজ্যে ফেরত পাঠাতে হবে, যেন তারা অক্ষতভাবে ফিরে যেতে পারে।" কোষাগার থেকে কাজিমভকে দুই হাজার রুপি টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেন বাদশাহ।
কাজিমভ ও তার প্রতিনিধিদলের রাশিয়ায় ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কয়েকজন রাশিয়ান ইতিহাসবিদের মতে, প্রতিনিধি দলটিকে আওরঙ্গজেবের অধীনে নিয়োগদানের আহ্বান জানানো হলেও তারা তা প্রত্যাখান করে।
দেখা না হওয়ায় মোগল সম্রাটের জন্য নিয়ে যাওয়া উপহারগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেই অর্থ দিয়ে মধ্য এশিয়ায় বন্দি রাশিয়ানদের মুক্ত করা হয়েছিল। কাজিমভ ১৬৭৭ সালে বালখ, খিভা ও চার্দঝো (বর্তমানে তুর্কমেনাবাত) হয়ে রাশিয়ায় ফিরে আসেন।
সেমিয়ন ম্যালেনকির যাত্রা
পরের দশকগুলোতেও ভারত নিয়ে রাশিয়ানদের আগ্রহ কমেনি। রাশিয়াকে যিনি বদলে দেন, সেই মহান শাসক পিটার দ্য গ্রেট ১৬৯০ সাল নাগাদ নিজের ৪৩ বছরের শাসনকালের প্রায় এক দশক পার করে ফেলেছেন।
সৎভাই পঞ্চম ইভানের সঙ্গে শুরুর দিকে যৌথভাবে রাশিয়ার শাসনকার্য চালাতেন পিটার। ভারত নিয়ে তার গভীর আগ্রহ ছিল। আস্ত্রাখানের ভারতীয় বণিকদেরও তিনি প্রচুর ছাড় দিয়ে রেখেছিলেন। সেমিয়ন ম্যালেনকিকেও পিটার ভারতে যেতে বলেন।
যেহেতু মধ্য এশিয়া অস্থিতিশীল ছিল, ম্যালেনকি সমুদ্রপথে ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত নে। ১৬৯৫ সালের মে মাসে মস্কো থেকে যাত্রা শুরু হয়। দলটি মস্কভা নদী থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে ভলগার বৃহত্তম উপনদী ওকায় গিয়ে পৌঁছে। নিজনি—নোভোগোরদ থেকে তারা বড় জাহাজগুলোয় পণ্য তুলে নেয়। ১৬৯৫ সালের জুনে ভোলগা ও আস্ত্রাখান হয়ে কাস্পিয়ান সাগরের দিকে যাত্রা করে ম্যালেনকির দল।
পারস্য উপকূলে পৌঁছানোর পর দলটি ঘোড়া ও উটে চড়ে শামাখি (বর্তমান আজারবাইজান) শহরে আসে। সেখান থেকে রাশিয়ানরা সফবীয় শাসকের সঙ্গে কথা বলতে ইসফাহান যান। ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে সফবীয় সাম্রাজ্যে বাণিজ্য করার অনুমতি পায় ম্যালানকিরা। ১৬৯৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পার্সিয়ায় থাকার পর বন্দর আব্বাস থেকে সুরাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় রাশিয়ানরা। এই যাত্রায় সময় লেগেছিল মাত্র ২০ দিন।
আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে বাণিজ্যের অনুমতি লাভ
১৬৯৮ সালে সুরাটে বিদেশি বণিকদের আনাগোণা ছিল পড়ার মতো। আর তাই রাশিয়ানদের আগমণ কারও মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়নি। কিন্তু তারপরও ম্যালেনকি সতর্ক ছিলেন। কাজিমভের গল্প শুনেছিলেন তিনি। তাকে কাবুলের বেশি যেতে দেওয়া হয়নি। ম্যালেনকি ও তার দল ঠিক করেন তারা কাউকে জানাবে না যে রাশিয়ার জার তাদের পাঠিয়েছেন। সুরাটে তারা এক সরাইখানায় থাকল তিন মাস। এরপর গেল বুরহানপুর, যেখানে আওরঙ্গজেবের সেনা ক্যাম্প আছে।
কাজিমভের চেয়ে তাদের ভাগ্য ভাল ছিল। ম্যালেনকি আওরঙ্গজেবের কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাকে নিজের শংসাপত্র দেখালেন। এরপর ম্যালেনকিকে আওরঙ্গজেবের সঙ্গে দেখা করতে তার তাঁবুতে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
কয়েক দশক আগের থেকে বদলে গিয়েছিলেন সম্রাট। তিনি এক রাজ ফরমান দিলেন যার মাধ্যমে রাশিয়ার বণিকরা কোনো কর ছাড়াই মোগল সাম্রাজ্যের যেকোনো জায়গায় বাণিজ্য সুবিধা লাভ করল।
বুরহানপুরে থেকে রাশিয়ানরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করলেন। বিনিময়ে পেলেন রৌপ্য মুদ্রা।
আন্দ্রেই সেমিয়েনভ ম্যালেনকির প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য ছিলেন। ভারতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন তিনি। আওরঙ্গজেবের বর্ণনা দিয়ে সেমিয়েনভ লিখেন, "আপাদমস্তক সাদা পোশাকের ধূসর দাড়ির এক বৃদ্ধ। মাথায় সাদা পাগড়ি"। শুক্রবার বাদশাহ কীভাবে বহর নিয়ে নামাজের জন্য প্রধান মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেন সেই বর্ণনাও দেন তিনি।।
বাদশাহর যাত্রা বহরের সামনে থাকত যুদ্ধের হাতিরা। হাতির ওপর বসে সানাইবাদকরা সানাই ও তাম্বুরা বাজাতেন। রঙিন পতাকা উড়াতো পতাকাবাহীরা। হাতির পিছে থাকত ঘোড়া আর তার পিছে সুসজ্জিত ঝকমকে এক পালকিতে আটজন পালকিবাহক মিলে সম্রাটকে নিয়ে যেতেন মসজিদে। সম্রাটের পেছনে থাকত তার পুত্ররা, সভাসদসহ অন্যান্য অভিজাত সদস্যরা। পুরো বহরের সঙ্গে পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনীও থাকত বলে জানিয়েছেন সেমিয়েনভ।
ভারতের জীবন
বুরহানপুরে কয়েক মাস কাটানোর পর রাশিয়ার বণিকরা আগ্রায় যান। আন্দ্রেই সেমিয়েনভের বেশ পছন্দের একটি শহর ছিল আগ্রা। আগ্রার দুর্গ বা লালকেল্লা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, 'শহরের মতো জায়গাটি তিন দেয়ালের মাঝে অবস্থিত। সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো বাড়িঘর নেই। শুধু বিশাল একটি প্রাসাদ, বিভিন্ন দপ্তর আর একটি মসজিদ রয়েছে। দেয়ালগুলোর চারপাশে বড় খাদ খনন করা হয়েছিল। সেখানে পান যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সেই পানিতে বড় মাছ আর কচ্ছপ থাকে।" ভবনগুলো বেলেপাথরে নির্মিত জেনে রাশিয়ানরা যে বিস্মিত হয়েছিল সেকথাও তিনি উল্লেখ করেন।
শাহজাহানবাদে রাশিয়ান বণিকদের কাটানো সময় সম্পর্কেও লিখেছেন সেমিয়েনভ। লেখা থেকে অনুমান করা যায় রুশরা ভারত ও এখানকার মানুষদের পছন্দ করেছিল। ভারতীয়দের সম্পর্কে সেমিয়েনভ লিখেন, "তারা শান্ত ও স্নেহপরায়ণ মানুষ।" ভারতীয়দের 'ভদ্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতে থাকাকালে ম্যালেনকির দল প্রচুর পরিমাণে মসলিন, ক্যালিকো কাপড় ও শুকনো রঙ কিনে নেয়। পরিশেষে তারা সুরাটে ফিরে যায় এবং মালসমেত বন্দর আব্বাসে ফেরার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করে।
রাশিয়ায় ফিরতে পারেননি ম্যালেনকি
তখন ১৭০১ সাল। তবে সব পণ্য নিয়ে ফিরতে পারেনি ম্যালেনকির দল। ওমানের কাছে মালবাহী একটি জাহাজে জলদস্যুরা আক্রমণ করে সব লুটে নেয়।
বন্দর আব্বাস থেকে তারা যায় ইসফাহানে। সেখান থেকেই সবাই আলাদা হয়ে যে যার পথ দেখে। কোনো কারণে সেমিয়েনভ পারস্যেই থেকে যান। পরবর্তীতে তিনি শামাখিতে গিয়ে জানতে পারেন ম্যালানকি ও তার সহযোগী বণিকরা প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ম্যালেনকির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল আস্ত্রাখান ছেড়ে যাওয়ার পর জার সরকারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না। ধারণা করা করা হয় ১৭০২ সালে রাশিয়ার দূত ও বণিক দলের সবাই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পারস্যের শাহ সরকার তাদের পণ্যগুলো রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়।
এরপর কেটে যায় বহু বছর। ১৭১৬ সালে রাশিয়ার সিনেট এক ঘোষণায় জানায়, পিটার দ্য গ্রেট 'ভারতীয়দের জীবন' সম্পর্কে জানে এমন লোকদের সন্ধান করছেন এবং তাদের মোটা অঙ্ক দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। খবর পেয়ে সেমিয়েনভ নতুন রুশ রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গে হাজির হয়ে ম্যালেনকির প্রতিনিধি দলের করুণ পরিণতি বর্ণনা করেন।
ম্যালেনকি ও তার দলের গল্প ভারত সম্পর্কে রাশিয়ানদের আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলে। আর সেখান থেকেই রাশিয়ানদের ভারতে এসে এখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার প্রচেষ্টাও এক নতুন মোড় নেয়।
- লেখক: অজয় কমলাকরণ একজন লেখক ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিক।
- সূত্র: স্ক্রল ডট ইন