আজও উদ্ধার হয়নি বেগম রোকেয়ার বেদখল হওয়া বিপুল সম্পত্তি
আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী এই নারীর জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের ছায়া ঘেরা নিভৃত পল্লী মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে। তার মৃত্যু ১৯৩২ সালে ৯ ডিসেম্বর কলকাতার সোদপুরে।
সময়ের পরিক্রমায় বেগম রোকেয়ার জমিদার পিতার বসতভিটা, জায়গা জমির এখন আর হদিস নেই। সব গেছে অন্যের দখলে চলে গেছে। স্মৃতিচিহ্ন বলতে এখন রয়েছে কেবল তার পৈত্রিক বাড়ির ধ্বংসাবশেষটুকু। কিন্তু রোকেয়া পরিবারের বেদখল হওয়া প্রায় সাড়ে তিনশ বিঘা সম্পত্তি আজও উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বছর ঘুরে ৯ ডিসেম্বর এলেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ঘটা করে পালন করা হয় এ দিনটি। রোকেয়ার জন্মস্থানে বসে তিনদিন ব্যাপি মেলা, আলোচনা। এ বছর করোনার কারণে এসব অনুষ্ঠান হচ্ছে না। রংপুর জেলা প্রশাসক জানান, করোনাজনিত কারণে এবারের বেগম রোকেয়া দিবসের কোন মেলা থাকছে না। তবে সীমিত আকারে ভার্চুয়াল উদ্বোধনসহ কিছু অনুষ্ঠান হবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ অধ্যাপক গবেষক ড.শফিক আশরাফ জানান, বেগম রোকেয়ার পিতৃ পরিবার ভারতে পাড়ি জমালে পরিত্যক্ত রয়ে যায় তার পিতার বিশাল সম্পত্তি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নিশ্চিহ্ন হয় বসতভিটা। বর্তমানে ৩০ শতক জমির উপর নির্মিত রোকেয়ার আঁতুর ঘরের ভিত ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।
বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে নানা প্রকল্প হাতে নিলেও তা বর্তমানে অবকাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোন প্রকল্পই পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। শুরুটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হলেও দিন যতই গড়িয়েছে, ততই প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। পায়রাবন্ধে কেউ ভ্রমণে এলে দেখা যায়, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট নেই। দর্শনার্থীদের প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হয় এখানে।
পায়রাবন্ধের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, রোকেয়ার বাড়ীর পৈত্রিক সম্পত্তি প্রায় সাড়ে তিনশত বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে। আজও উদ্ধার করা হয়নি। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব জমি দীর্ঘ দিন ধরে চাষাবাদ করেছেন। কিছু জমিতেই ইতোমধ্যে বাসাবাড়ীসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। মামলা হয়েছে জমির ফিরে পাওযার জন্য, কিন্তু রোকেয়ার জমি উদ্ধার হয়নি।
১৯৯৭ সালে ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৩ একর ৪৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অথচ বেগম রোকেয়ার পৈত্রিক সম্পত্তিই ছিল সাড়ে তিনশ বিঘা।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো:রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, জমি অধিগ্রহণের পর পরই গ্রহণ করা হয়েছে নানা কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্ম সর্ম্পকে গবেষণা, তার গ্রন্থাবলীর অনুবাদ, প্রকাশনা ও প্রচার, সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র নির্মাণ এবং স্থানীয় যুবক-যুবতীদেরকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান প্রকল্পসহ মান সম্মত অডিটরিয়াম, সেমিনার কক্ষ, রেস্টহাউস, পাঠাগার ও সংগ্রহশালা নির্মাণ এবং নামাজ ঘর ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণসহ নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র চত্তরে দৃষ্টি নন্দন পিতলের তৈরী বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।
চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ স্মৃতি কেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালে ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ কেন্দ্রটি ২০০৪ সালে ৪ অক্টোবর বাংলা একাডেমির কাছে হস্তান্তর করে।
বেগম রোকেয়ার সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, রোকেয়া পরিবারের রেখে যাওয়া বেদখলীয় সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন দ্রুতই এই মামলার নিষ্পত্তি হবে এবং রায় তাদের পক্ষে আসবে।