আধুনিকায়নের নামে উদ্যানে দোকান বানাচ্ছে চসিক
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নগরের উন্মুক্ত বিপ্লবী উদ্যানে আধুনিকায়নের নামে দোকান তৈরি করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ইতোমধ্যে উদ্যানের পূর্বপাশে প্রায় ২৫টি দোকানের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
চসিক বলছে, উদ্যানটিতে লোকজন আসলে সেখানে তাদের সুবিধা দিতে তা করা হচ্ছে। সেজন্য নির্মিত হচ্ছে ফুডকোর্টসহ কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা।
তবে, নগরের উন্মুক্ত উদ্যানটিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের সমালোচনা করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম’র সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিনোদনের জন্য ফুডকোর্ট, গেমজোন; এসব করতে হয় না। উন্মুক্ত মাঠ হচ্ছে আসল বিনোদনের জায়গা।
‘‘চসিক নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য উদ্যানটিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করছে। অথচ সেখানে কিছু গাছ লাগিয়ে, বসার জায়গাগুলো সংস্কার করে উদ্যানটির আধুনিকায়ন সম্ভব হতো। কিন্তু সংস্থাটি সেটি করেনি।’’
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র জাম্বুরি পার্ক আধুনিকায়নের কাজ শেষ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আট একর জায়গার ওপর উন্মুক্ত এই পার্কটিতে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা করেনি গণপূর্ত অধিদপ্তর। পার্কটি এখন অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামশুদ্দোহা বলেন, উদ্যানটিতে ২৫টি দোকান, গেমজোন ও ফুডকোর্ট থাকবে।
‘‘দুইটি প্রতিষ্ঠানকে এই উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে ২০ বছরের চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুইটি আধুনিকায়নের কাজ করছে।’’
গত বছরের ২৮ নভেম্বর রিফর্ম লিমিটেড ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্ট লিমিটেড নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে চসিক এ উদ্যান ২০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। প্রতিষ্ঠান দুইটি নিজেদের অর্থায়নের উদ্যানটি আধুনিকায়ন করছে। অর্থায়নের খরচ আদায় করতে দোকান নির্মাণ করে সেগুলো ইজারা দেওয়া হচ্ছে।
স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, উদ্যানটিতে আধুনিকায়নে প্রায় আট কোটি টাকা খরচ হবে। দোকানগুলো ইজারা দিয়ে সেই টাকা আদায় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে সেগুলো এই উদ্যানে ফুটিয়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। একটি ভ্রাম্যমাণ স্কুল থাকবে। সপ্তাহে একদিন অস্বচ্ছলদের জন্য গেমজোন উন্মুক্ত থাকবে। তবে উদ্যানে প্রবেশের জন্য কোনো টাকা লাগবে না।
এদিকে উদ্যানটিতে আগের মতো সময় কাটাতে পারবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। পার্ক সংলগ্ন নাসিরাবাদ আবাসিকের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা উদ্যানে হাঁটতাম। কিন্তু সেখানে অনেকগুলো দোকান করা হচ্ছে।
ফলে মানুষের আনাগোনা বাড়বে। আগের মতো শান্ত পরিবেশটা থাকবে না।
২০১৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সৌন্দর্য বর্ধনের স্লোগান দিয়ে চট্টগ্রাম নগরকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন।
প্রথমে নগরের যাত্রী ছাউনিগুলো আধুনিকায়নের কাজ শুরু করে চসিক। ছাউনিগুলো আধুনিকায়নের পাশাপাশি প্রত্যেকটাতে দোকান বরাদ্দ দেয়া শুরু করে চসিক। এরপর থেকে যাত্রী ছাউনিগুলো চলে যায় দোকানদারের নিয়ন্ত্রণে। এখন অনেক ছাউনিতে যাত্রীর দেখা না মিললেও সেখানে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ে।
১৯৭৯ সালে দুই একর জায়গার ওপর বিপ্লব উদ্যানটি চালু হয়। শুরুর পর সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা ছিলো না। কিন্তু হঠাৎ করে চসিক সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করছে।