আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য নিয়ে কবিগানের আসর বসেছে ভোলায়
ভোলার সদর উপজেলার বাপ্তা গ্রামে আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কবিগানের আসর শুরু হয়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসীর আয়োজনে রতন মহাজনের বাড়ির উঠোনে ২ দিনব্যাপী এ গানের আসর শেষ হবে আজ শনিবার।
কবিগানের আয়োজক শ্রী শ্রী লক্ষ্মী গোবিন্দ মন্দির কমিটি সভাপতি মনরঞ্জন দে জানান, শুক্রবার সকাল থেকে পাল্টাপাল্টি যুক্তি, তর্ক আর গানে-গানে দুই কবিয়ালের লড়াইয়ে মধ্যে দিয়ে কবিগান শুরু হয়। যা হারমনিয়াম, ঢোল, বাশি, কাশা, বেহালাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার পরপরই শ্রী শ্রী লক্ষ্মী গোবিন্দ মন্দির কমিটির আয়োজনে ২৫৪ বছর ধরে এ কবিগানের আসর হয়ে আসছে। দূর-দুরান্ত থেকে আসা শত-শত দর্শক শ্রোতা এ গান উপভোগ করেন।
এবারের আসরে পালা গান পরিবেশন করছেন সাতক্ষীরা জেলার কবিয়াল বিমল সরকার ও পটুয়াখালী জেলার স্বর্ণপদক প্রাপ্ত কবিয়াল মনিলাল সরকার।
এ গানের আসরকে কেন্দ্র করে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি, বসে গ্রামীণ মেলা। আড়াইশ’ বছরের বেশি সময় ধরে লক্ষীপূজার পর স্থানীয় গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে এ কবিগানের আয়োজন করেন। তাদের আয়োজন করা কবিগানের মাধ্যমে বাঙালির লোক সাংস্কৃতি বিকাশ ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান আয়োজক মনোরঞ্জন দে।
কবিগান অনুষ্ঠানে আসা শ্রোতা সঞ্জীব কর্মকার বলেন, একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদে আসর বসতো কবি জারি, সারি আর পালাগানের। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো এসব গ্রামীণ গানের। কিন্তু বর্তমান পশ্চিমা সংস্কৃতি আর আধুনিক বিনোদনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে এ সব জনপ্রিয় গান। বর্তমান প্রজন্ম এর সাথে পরিচিত না থাকলেও প্রবীণরা আজও খুঁজে ফেরে এক সময়ের এসব গানের আসর। তাই কবিগান শোনার পাশাপাশি নিজেদের সাংস্কৃতির সাথে বর্তমান প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগও পাচ্ছেন অনেকে।
পটুয়াখালী থেকে আসা কবিয়াল মনিলাল সরকার জানান, তিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোলার বাপ্তা গ্রামের মহাজন বাড়ি কবিগান করে আসছে। বাংলার লোক সাংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখাতে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই কবিগান পরিবেশন করেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র ঘোষ জানান, আড়াইশ’ বছরের বেশি সময় ধরে এই কবিগানের আসর হয়ে আসছে। শুধু জেলার নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত-শত মানুষ মহাজনবাড়ি কবিগান শুনতে আসেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মিলে উৎব মুখর পরিবেশে কবিগান উপভোগ করেন। এই আয়োজনে তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় বলেও জানান তিনি ।