ইউরোপে প্রবেশের শেনজেন ভিসা থেকে বাদ পড়ল বাংলাদেশ
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইউরোপের ২৬টি দেশের নাগরিকেরা একে-অপরের সীমানায় পাসপোর্ট ছাড়া চলাচলের স্বাধীনতা পান। আর ইউরোপের বাইরের দেশের নাগরিকদের এজন্য শেনজেন ভিসা নিতে হয়।
ইউরোপে মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক সফলতার পর আগামী ১ জুলাই থেকে শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ফের চলাচল শুরু হতে চলেছে। সেই প্রেক্ষিতে, প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমারসহ থেকে ৫৪টি দেশের নাগরিকেরা এবার শেনজেন ভিসার অনুমতি পেলেও, তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বাংলাদেশের নাম।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মূলত একটি দেশের চলমান সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সফলতার ওপর ভিত্তি করেই সেদেশের নাগরিকদের ভ্রমণের অনুমতি দিতে চায় ইইউ। এজন্য দুই ধরনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে উভয় তালিকায় স্থান পেয়েছে চীন, উগান্ডা, কিউবা ও ভিয়েতনাম। আর উভয় তালিকাতেই যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য যেসব রাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে কোভিড-১৯। মোট সংক্রমিত ২৩ লাখেরও বেশি।
সেই তুলনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। ৫৫ হাজার ৭২৭ জন ইতোমধ্যেই সুস্থ। আর মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৭৩৮ জন।
প্রতিবেশী ভারতে পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষের দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরপরেও, ভারতীয় নাগরিকদের শেনজেন ভিসার অনুমতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইইউ।
শুধুমাত্র সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি ইউরোপীয় আঞ্চলিক জোট বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি ভারতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল।
আরেকটি কারণ হতে পারে, মহামারি মোকাবিলায় সরকারি পদক্ষেপের নানা প্রকার ঘাটতি। সেই যুক্তিও অবশ্য জোরালো নয়।
প্রতিবেশী মিয়ানমার করোনা পরীক্ষার ব্যাপক উদ্যোগ চালু না করার পরেও দেশটিকে ভিসা তালিকায় রাখা হয়েছে।
তবে শেনজেন জোনের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে তালিকায় রাখা দেশ নির্বাচনে তিনটি শর্ত আমলে নেওয়ার কথা জানানো হয়। এগুলো হলো;
১। আলোচ্য দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং তা মোকাবিলায় সরকারি পদক্ষেপ,
২। সফরকারীরা যেন ভাইরাসের বিস্তার না করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার যথাযথ উদ্যোগ,
৩। এবং ওই দেশের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে।
চলতি সপ্তাহের শেষদিকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শেনজেন জোনভুক্ত ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে চলাচল শুরু হবে। এই জোনের সদস্য দেশগুলোর নাগরিকরা শুধু যে পাসপোর্ট ছাড়া চলাচল করতে পারেন তাই নয়, বরং সীমান্তেও কোনো বাঁধার মুখে পড়েন না। ইইউ বহির্ভূত দেশের নাগরিকেদের এ ধরনের ভ্রমণের ক্ষেত্রে শেনজেন ভিসা নিতে হয়।
আন্তঃসীমান্ত চলাচল উন্মুক্তের আগে শনিবার ইইউ কর্মকর্তারা জানান, সদস্য দেশগুলোর প্রত্যেকের মহামারি নিয়ন্ত্রণের সফলতা এবং যাতায়াত নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করেই, প্রাথমিকভাবে ভ্রমণ চালু করা হচ্ছে। এইক্ষেত্রে, সদস্য কোনো দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশ থেকে ভ্রমণ বন্ধ করবে কিনা, সেটি সংশ্লিষ্ট দেশের ওপরই নির্ভর করবে।
তবে ব্রাসেলসের সাম্প্রতিক ভ্রমণ অনুমতির সিদ্ধান্তের ভেতর দিয়ে আরেকটি বিষয় প্রতিভাত হচ্ছে। তা হলো; বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশে সংক্রমণ নিয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতা রয়েছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সেসব দেশের ভ্রমণকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে ইউরোপীয় জোটটি। এক সময় সংক্রমণ কেন্দ্র ইউরোপে থাকলেও, তা এখন অন্য মহাদেশের উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশেও স্থানান্তরিত হয়েছে- এমন বাস্তবতাও ফুটে ওঠে এর মধ্য দিয়ে।
দক্ষিণ আমেরিকায় করোনা মহামারির কেন্দ্রস্থল ব্রাজিলও তাই শেনজেন ভিসার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন সংক্রমণ হার থাকা দেশ ভূটানের নাগরিকরা ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছেন। বাদ পড়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল এবং আফগানিস্তান।