এক দশকেও চালু করা যায়নি বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামের হাসাপাতাল
সাতবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও এক দশকেও শেষ করা যাচ্ছে না গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ। দীর্ঘদিন ধরে কাজ শেষ না হওয়ায় এর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে ধীরগতির কাজের কারণে ৫০০ শয্যার এ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আবারও বাড়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
গত ২৯ আগষ্ট স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের অনুষ্ঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভায় (পিআইসি) এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সভায় সভপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিন।
গোপালগঞ্জের ডিসি রোডে নির্মাণাধীণ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের মার্চে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ কওয়ার কথা ছিল।
সাতবার মেয়াদ বাড়ানোর পর সর্বশেষ গত অর্থবছরের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে গত অর্থবছরে এ প্রকল্পে পর্যাপ্ত বরাদ্দও দেওয়া হয়। কিন্ত প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে পারেনি বাস্তবায়নকানী সংস্থা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে না, এ শঙ্কায় চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৫৩১ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পটি শেষ করতে চলতি অর্থবছরে ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। ফলে চলতি অর্থবছরের এত কম বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ধীর গতির এ প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ছিল ৪৬৩ দশমিক ৬২ কোটি টাকা। পরে দুই দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ৭০৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।
মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, শুরু থেকে এ প্রকল্পে নানা ধরনের সমস্যা ছিল। এখনও ঠিকাদার নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তবে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরেই শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী।
অন্যদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দরপত্র জটিলতায় এখনও হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রায় অর্ধেক কাজই এখনও শেষ হয়নি। আবার শেষ হয়নি জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াও। ফলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া গেলেও চলতি অর্থবছরের প্রকল্পের কাজ শেষ করা কঠিন হবে।
তবে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণ কাজ ১০০ শতাংশ এবং হাসপাতাল ভবনের কাজ ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া ডাক্তারদের জন্য ডরমিটরি, ছাত্রাবাসসহ বেশ কিছু ভবনের কাজও শেষ হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, 'হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনার দরপত্রে ভুল ছিল। সে কারণে দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। আশা করা হচ্ছে জানুয়ারির মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হবে। আর এটি হলে আগামী বছরের জুন থেকে ইনডোর স্বাস্থ্য সেবা চালু করা সম্ভব হবে। তবে আগামী ডিসেম্বরে হাসপাতালের আউটডোর নির্মাণ চালু করার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে জনবল নিয়োগের কাজও শেষ হবে।'
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব পাওয়া এই পকল্প পরিচালক জানান, তার সময়ে কাজের অনেক গতি এসেছে। তবে নার্সিং কলেজের ঠিকাদার মারা যাওয়ায় জটিলতায় এ কাজ কবে শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না। মূল ঠিকাদারের দুই স্বত্বাধিকারীর মধ্যে মামলা চলছে। এ জটিলতা দূর না হলে নির্মাণকাজও শেষ হবে না।
২০১২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প নিয়ে ২০১৮ সালের জুনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, মাটি ভরাটে বিলম্বে ব্যাপক সময়ক্ষেপন হয়েছে।
দশতলা ভিত্তিসহ নয় তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্রে উল্লেখিত একক কাজের মূল্য এবং অভিজ্ঞতা-সংক্রান্ত শর্তের কারণ রেসপন্সিভ বিডার পাওয়া যায়নি। ফলে তৃতীয়বার দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত শিথিল করা হয়।
হাসপাতাল নির্মাণ করা শুরু হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আবার চুক্তি অনুযায়ী যে সময়ে কাজ শেষ করার কথা, সে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
আইএমইডি বলছে ২০১৮ সালে ইন্টার্নি ডক্টরস (পুরুষ ও মহিলা) ডরমিটরি ভবন, ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাসসহ ১৭টি ভবনের কাজ শেষ হয়। কিন্ত এসব ভবন মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এতে অনেক কাজই বিঘ্নিত হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় দশতলা ভিত্তির ওপর নয়তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ ছাড়াও ইন্টার্নি ডক্টরস (পুরুষ ও মহিলা) ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আটতলা ফাউন্ডেশনের ওপর ছয়তলা ভবন নির্মাণ এবং ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল ডক্টর আবাসন এবং নার্স এবং ইমারজেন্সি স্টাফ ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, সুপেয় পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা না করা এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপনে বিলম্ব ঘটছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল আইএমইডির প্রতিবেদনে।