করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হলো দেশে
প্রতিবেশি দেশ ভারতজুড়ে সর্বনাশা বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ যে ভ্যারিয়ান্ট (ধরন), সেটি বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে বলে আজ জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে আসা আট জনের নমুনা পরীক্ষার পর তাদের ছয় জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন।
অধিদপ্তরের এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "এর মধ্যে দুই জনের নিশ্চিতভাবে এবং চার জনের মধ্যে আংশিক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিশ্চিত হয়েছে আইডিসিআর ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।"
নাসিমা সুলতানা বলেন, "নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদ্বিগ্ন। সারাদেশের মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।"
"যশোর ও বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আটজনের নমুনা পরীক্ষা করে আইইডিসিআর ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ফলাফল পেয়েছে। সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সিং এখনো শেষ হয়নি। স্পাইক প্রোটিন সিকুয়েন্সিং শেষ করেছে। সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সিং না হলে ডাবল নাকি ট্রিপল ভেরিয়েন্ট বলা যাবেনা।"
তিনি বলেন, "এ ভেরিয়েন্ট আরো ছড়িয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করবে। মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ ভেরিয়েন্টে অনেক বেশি সংক্রামক। যে কয়েকজনের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে এ ফলাফল। যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের মাধ্যমে পরবর্তী আরো বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য বিধি না মানলে এটি আরো বাড়তে পারে। সবাই আইসোলেশনে আছে, নজরদারিতে আছে।"
বাংলাদেশ সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু করে ১৪ দিনের জন্য ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে; কিন্তু তবুও কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকায় অনেক বাংলাদেশি ভারত থেকে দেশে ফিরতে পেরেছেন এবং তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায় যে ইতিমধ্যেই ডজনখানেক দেশে ভারতীয় কোভিড ভ্যারিয়ান্ট পাওয়া গেছে।
এই মুহুর্তে ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ সুনামির মত আছড়ে পড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণের নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে ভারত।
ভারতে ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ এতটাই হিংস্র রূপে দেখা দিয়েছে যে দেশটির হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন, শয্যা ও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বহু রোগীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতালগুলো।
ভারতের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ভারতে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪০১,০৭৮ জন। ফলে এখন পর্যন্ত তাদের মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২১ দশমিক ৮ মিলিয়ন।
শুক্রবার ভারতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৪,১৮৭ জন এবং সর্বমোট ২৩৮,২৭০ মৃত্যু নিয়ে তাদের মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০৯ শতাংশে।
এখনো পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন এবং ভারতে সর্বমোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৭২৩,৪৪৬ জন।
ভারতীয় ধরনটি ইতিমধ্যেই ভারতের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবেশি দেশ নেপালের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক এবং ধারণা করা হচ্ছে সেখানেও ভারতের মত বিপর্যয় ঘটতে পারে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইতিমধ্যেই ব্যাপক করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।