কর্মস্থলে থেকে কাজ করবেন এফএমসির এক হাজার কর্মী
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় কর্মস্থলে থেকে কাজ করবেন এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের প্রায় এক হাজার কর্মী। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কর্মীদের জন্য ডকইয়ার্ডের ডরমিটরিতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কর্মীরা যেন করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে না যেতে পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে কর্মরত প্রত্যেক কর্মীকে সুরক্ষা পোশাক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ যাবতীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে চিকিৎসা ক্যাম্প। প্রতিদিন দুইবার করে কর্মীদেও শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ডকইয়ার্ডে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডরমিটরিতে থাকাকালীন কর্মীদের যাবতীয় খরচ বহনের ঘোষণাও দিয়েছে এফএমসি শিপ বিল্ডার্স।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদণ্ডীতে এফএমসি ডকইয়ার্ড এসব সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যক্রম আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন এসব কর্মীর থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতিষ্ঠান খরচ করছে প্রায় দুই লাখ টাকা।
এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, কর্মীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উন্নতিও ধরে রাখতে হবে। তাই উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং ব্যবসা ধরে রাখতে আমাদের এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই তাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে নিতে চাচ্ছি। তবে কোনো কর্মী কাজে যোগ দিতে না চাইলে তাদের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছুটি চলাকালীন বেতন-ভাতা চলবে বলে জানানো হয়েছে কর্মীদের।
এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডে কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, আমি প্রতিদিন বাসা থেকে আসা-যাওয়া করে কাজ করতাম। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের প্রতিষ্ঠান বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। শনিবার থেকে ডরমিটরিতে উঠেছি। এখানে প্রতিদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। নির্ধারিত নিয়ম মেনে কাজ হচ্ছে। কেউ অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বিভাগের ফোরম্যান পাবেল বড়ুয়া বলেন, আমি আগে থেকেই ডরমিটরিতে থাকতাম। শনিবার থেকে এখানে কড়াকড়ি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি চিকিৎসকরা আমাদের নিয়মিত পরীক্ষা করছেন। মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে।
এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) উত্তম ঘোষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমাদের এখানে জাহাজ তৈরিতে প্রকৌশলী, ওয়েল্ডার, টেকনিশিয়ারসহ প্রায় এক হাজার কর্মী কর্মরত আছেন।
ডকইয়ার্ডের প্রায় হাজার শয্যার দুইটি ডরমিটরি রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ইয়ার্ডের ডরমিটরিতে থেকে প্রায় ৫০০ জন কর্মী কাজ করেন। বাকিরা আসা-যাওয়া করে কাজ করেন। করোনার প্রকোপ শুরুর পর ঝুঁকি মোকাবেলা ডরমিটরিতে আমরা এক হাজার কর্মীর জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছি। সুরক্ষার জন্য যাবতীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছি। ইতোমধ্যে যেসব কর্মী আসা-যাওয়া করেন কাজ করেন তাদেরকে ডরমিটরিতে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ কর্মী ডরমিটরিতে থেকে কাজ করছেন।
উত্তম ঘোষ বলেন, ইতোমধ্যে প্রত্যেক কর্মীকে সুরক্ষা পোশাক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে। ডকইয়ার্ডে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এফএমসি কেমিক্যাল ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার এফএমসির সব কর্মীদের দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক কর্মীর পরিবারের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হবে।
এ ধরনের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে কাজ করার ক্ষেত্রে কর্মীদের একে অপরের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। এবং মাস্ক পরিধান ও ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কারও উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদ-ীতে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেষে ৮০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড। কন্টেইনার জাহাজ, ট্যাংকার, যাত্রীবাহী জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, ড্রেজার, টাগ বোট, পন্টুন নির্মাণ করে এফএমসি। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও জাহাজ রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।