কোভিড-১৯: দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা
মার্চের শুরু থেকে দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হঠাৎ করে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কারণে এসব দেশে হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ায় বিদেশ ফেরতদের আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত দশ দিনে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ, যা পুরো ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ হাজার ৭৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজার ৯৫৩ জনের শরীরে শনাক্ত হয় ভাইরাসটি, যা ২৯ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে আরও ১৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে নাম উঠল মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৫৮ জনের। খবর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংক্রমণ হার কমতে কয়েক মাস সময় লেগেছে কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে তা আগের অবস্থায় চলে গেছে। সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ সব সময় ভয়াবহ হয়, তাই এখনই সংক্রমণ রোধে কঠোর হতে হবে।'
ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের মতো ভারত, পাকিস্তানেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। দীর্ঘদিন কোন দেশেই লকডাউন পালন করা যায়না। অর্থনীতির স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে সংক্রমণ কম থাকায় বাংলাদেশ, ভারতসহ সব দেশেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি উপেক্ষিত ছিলো। এসব দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বড় পরিসরে সামাজিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলছে। ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। সহায়ক পরিবেশ পেয়ে সংক্রমণ উদ্বেকজনকভাবে বেড়ে চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণেও এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। তবে শুধু ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাড়ছেনা, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশেই সংক্রমণ হার শূন্য হয়ে যায়নি যে ভ্যারিয়েন্টের কারণে বেড়েছে। সংক্রমণ রোধে আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিন, হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও ভ্যাকসিন দিতে হবে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য খাত আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিন ভুলেই গেছে।'
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে মৃত্যুর হার গত চারদিন কিছুটা কমার পর আবার বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৬৮৬ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৬৮ জনের শরীরে শনাক্ত হয় ভাইরাসটি। এ নিয়ে মোট শনাক্ত সংখ্যা ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৬ জনে পৌঁছেছে।
শনিবার দুপুরে করোনাভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল গত বছরের জুন থেকে আগস্ট মাসে। সেটি ছিলো মূলত গ্রীষ্মকাল। শীতের আবহাওয়ায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। শীত শেষে উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ আবার বাড়ছে।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'শীতকালে আমাদের দেশে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। দেশীয় ভাইরাসগুলোর কাছে সুবিধা করতে পারেনি করোনাভাইরাস। এখন গরম চলে আসায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি বেশি। তাই সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশের মত ভারতের অনেক রাজ্যের পরিবেশ ও আবহাওয়া একই রকম হওয়ায় সেখানেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।'
সংক্রমণ রোধে এখন বড় পরিসরে কোন অনুষ্ঠান করতে না দেয়া, মাস্ক পরা নিশ্চিত করা ও হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেন ডা. নজরুল ইসলাম।