খেলাপির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়ায় পূবালী ব্যাংকের তিন ডিজিএমকে তলব
ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় এবার পূবালী ব্যাংকের তিন ডিজিএমকে তলব করেছে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। একইসাথে ব্যাংকটির বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহাকে কারণ দর্শানোর দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে জারি মামলা দায়েরের পর থেকে বাদীপক্ষ (ব্যাংক) ২২টি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এই আদেশ দেন।
আদালতের তথ্যমতে, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে আরজে ফ্যাশনের দুই কর্ণধারকে বিবাদী করে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার মামলা দায়ের করে পূবালী ব্যাংক।
ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখার দায়ের করা এই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সালাম হাশেমি ও মো.মঈনুদ্দিনকে আসামি করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে অর্থঋণ মামলার রায় হয়। রায়ে বিবাদী প্রতিষ্ঠানের দুই কর্ণধারকে ব্যাংকের চলতি সুদ ও মামলা পরিচালনার খরচসহ মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেয় আদালত।
রায়ের ৯০ কর্মদিবস পার হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১ জুন একই আদালতে এই পাওনা বুঝে পেতে জারি মামলা দায়ের করে পূবালী ব্যাংক। এরপর ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিবাদীদের (দায়িকগন) আদালতে হাজির হতে পত্রিকার মাধ্যমে সমন জারি করে আদালত। বিবাদী পক্ষ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ডিক্রিদার ব্যাংকের পদক্ষেপের জন্য ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করে আদালত। কিন্তু এরপর থেকে এই পর্যন্ত ২২বার ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
আদালত উল্লেখ করেন- গত ১ ফেব্রুয়ারি তারিখের নির্দেশে ৮ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে লিখিত জবাব দাখিল করেন বর্তমান ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা। তার জবাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়- তিনি চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি এই শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাই নালিশী ঋণ আদায়ের বিষয়ে তার দায়িত্ব অবহেলা ছিল তা প্রমাণিত হয় না। সার্বিক বিবেচনায় বর্তমান ব্যবস্থাপকের জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত হওয়ায় তাকে কারণ দর্শানের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।
লিখিত জবাব থেকে আরো দেখা যায়- এই জারি মামলা দায়েরকাল থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যথাক্রমে মো. মঞ্জুরুল ইসলাম মজুমদার (বর্তমানে ডিজিএম, প্রিন্সিপ্যাল ব্রাঞ্চ ), মো. আব্দুর রহিম (বর্তমানে ডিজিএম, মতিঝিল করপোরেট শাখা) এবং মো. আলী আমজাদ (বর্তমানে ডিজিএম প্রধান কার্যালয়) আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আদালত আরো উল্লেখ করেন- বিপুল পরিমান ঋণ অনাদায়ী থাকার পরও উপরোক্ত ৩ জন শাখা ব্যবস্থাপক তা আদায়ে জারি মামলায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ব্যবস্থাপকদের এ ধরণের নির্লিপ্ততা ট্রাস্টি অব পাবলিক মানি হিসেবে দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তাই দায়িত্ব অবহেলার কারণে উপরোক্ত ৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃংঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ প্রদান করা হবে না তা আগামী ধার্য তারিখে (আগামী ২৮ মার্চ) আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ব্যাংকটির বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, 'ব্যাংকের নথি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি- ব্যাংকের প্যানেল লয়ার ও ব্যাংক কর্মকর্তা আদালতের সকল নির্ধারিত তারিখে হাজিরা দিয়েছে। এমনকি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আসামিদের বিরুদ্ধে বডি ওয়ারেন্ট দেয়ার জন্য ব্যাংক একটি পিটিশন দাখিল করে। এরপর থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মনে করেছে আদালত হয়তো আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি- এখনো পর্যন্ত আমাদের পিটিশনটিও আদালতে দাখিল হয়নি। এতে আমরা বুঝতে পেরেছি- আমাদের প্যানেল লয়ারের ইচ্ছেকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে'।