গাজীপুরে টিকাদান কর্মসূচিতে ভোগান্তি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে এক লাখের বেশি করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি শনিবার সকালে বোর্ড বাজারে এলাকায় স্থানীয় একটি স্কুলে স্থাপিত বুথে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, 'সিটি এলাকায় ৫৭টি ওয়ার্ডের ১৭১টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল ৯টা থেকে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। আজ এবং ৮ ও ৯ তারিখ এক লাখের বেশি টিকা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।'
'সিটি এলাকায় কোনো নাগরিক ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে থাকবে না, এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় কাউন্সিলর ও সিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সিটি করপোরেশনের বাইরে ইউনিয়নগুলোতে শুরু হয়েছে ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনা টিকাদান কর্মসূচি। সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. মো খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুর জেলার ৫টি উপজেলা , তিনটি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে সকাল ৯টা থেকে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন উপজেলাগুলোতে ৮০ হাজার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
তবে টিকাদান কর্মসূচিতে নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। অনেকে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকার নিবন্ধন করতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল, মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা তাদের পছন্দের লোকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা প্রদানের তালিকা করেছেন। ফলে প্রথম দিন ভোগান্তি নিয়ে অনেক নাগরিক বাড়ি ফিরে গেছেন।
বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা কদম আলী জানান, তিনি সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের গাছা আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে শুরুতে কিছুটা হট্টগোল থাকলেও মেয়রের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় পরিস্থিতি। কিন্তু গোল বাঁধে টিকা দিতে গিয়ে। তাকে জানানো হয়, কাউন্সিলরের দেওয়া তালিকায় তার নাম নেই। ফলে ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।
কদম আলী বলেন, 'ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে আইছিলাম। কিন্তু কাউন্সিলর তার লোকেগ দিয়ে টিকা দেয়ার তালিকা করাইছে। এহন এই তালিকায় আমার নাম নাই তাই বাড়ি ফিরছি।'
টিকা দেওয়ার তালিকা কীভাবে করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনাবাড়ি এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন খোকন বলেন, 'সিটি এলাকায় ৮টি জোন রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণায় ও সিটি করপোরেশন থেকে জোন অনুযায়ী সুরক্ষা ক্যাম্পেইন নামে অ্যাপস দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে ৬০০ টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা দেওয়ার জন্য ভোটার আইডি কার্ড দেখে আমরা নাগরিকদের মধ্যে যারা বয়স্ক, প্রতিবন্ধী এবং নারী- তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা তৈরি করেছি। পরে অ্যাপসে নিবন্ধন করে লাইনের মাধ্যমে টিকাগুলো দেওয়া হচ্ছে।'
'যেহেতু প্রথম দিন, তাই একটু ভিড় হয়েছে। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যাদের বয়স একটু কম, তাদের পরের দুদিনে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
একই কথা বলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান সেতু। তিনি বলেন, 'গত কয়েকদিন এলাকায় টিকা নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। এরপর উন্মুক্ত স্থানে সিভিল সার্জনের দেওয়া কর্মীদের উপস্থিতিতে ভোটার আইডি কার্ড দেখে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমার এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।'
এ ব্যাপারে গাজীপুর সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান বলেন, 'করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিদের রেখেছিলাম। যেহেতু টিকা নির্দিষ্ট, তাই কেন্দ্রগুলোতে ভিড় ছিল। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে জনপ্রতিনিধিরা নিজের লোকদের তালিকা আগে করেছেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা দুঃখজনক।' তবে গাজীপুরে সরকার নির্ধারিত যে টার্গেট, সেটি পূরণ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গণ টিকার দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতিটি কেন্দ্রে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। শত শত নারী পুরুষ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহণ করেন। গাদাগাদি পরিবেশে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।