গাজীপুরে সিটি হাসপাতালে টাস্কফোর্সের অভিযান
গাজীপুর প্রতিনিধি
নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাস্থ সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্স র্যাবের সহায়তায় এ অভিযান পরিচালনা করে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীরের এই প্রতিষ্ঠানে চালানো অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে সালমা তানজিয়া, র্যাব-১-এর পোড়াবাড়ি ক্যাম্প কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে জানানো হয়, ওই হাসপাতালের যে ল্যাব রয়েছে তার অনুমোদন নেই। এ ছাড়া নানা অব্যবস্থাপনাসহ অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া যায়। এ ছাড়া ল্যাব টেস্টের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত মানা হয়নি।
এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা বা সিলগালা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাচ্ছি, আমাদের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠু নিয়মে চলুক। আইনের মধ্যে থেকে সেবা নিশ্চিত করুক।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা বিভাগ একটি চিঠি দেয়, যেটাতে মিডিয়ায় দেখেছি ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধি হিসেবে আমি এটা ক্লিয়ার করে বলতে চাই, অভিযান বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মিডিয়া বলেছে বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু আপনারা দেখেছেন অভিযান বন্ধ হয়নি।
এ সময় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজাতে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য চেয়ে সহযোগিতা কামনা করেন।
তানজিয়া আরও বলেন, এই হাসপাতালে কিছু সমস্যা পাওয়া গেছে। সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আসতে বলেছি। তারা এলে যে অব্যবস্থাপনাগুলো পেয়েছি, সেগুলো বলব।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটিতে যে অনিয়ম পেয়েছি তা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশেষ করে অপারেশন থিয়েটারে যে সার্জিক্যাল আইটেম ও ওষুধ পাওয়া গেছে সেগুলো ৫-৬ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলো ব্যবহার করা হলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। এখানকার চিকিৎসক এবং আমাদের সঙ্গের চিকিৎসকরাও মত দিয়েছেন- এটি কাঙ্ক্ষিত নয়।
তিনি বলেন, এখানে যে প্যাথলজিক্যাল ল্যাব রয়েছে সেখানে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়া ব্লাড ট্রান্সমিশন করা হচ্ছে। রক্ত পরিসঞ্চালন করতে গেলে রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অনুযায়ী লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু এদের কোনো লাইসেন্স নেই, লাইসেন্স ছাড়াই রক্ত পরিসঞ্চালন করেছে। এখানে যে ব্লাড কালচার করা হচ্ছে তা মানুষের কাছ থেকে নেওয়া, যদিও এগুলো শিপ (ভেড়া) থেকে নেওয়ার কথা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, হাসপাতালটির কোনো লাইসেন্স নেই। যেহেতু মন্ত্রণালয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দিয়েছে, সে কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন সিলগালা করছি না। এই সময়ে লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ হলে আমরা অবশ্যই এটি বন্ধ করে দেব। আমরা চাই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চলুক। যারা ভালো চালাবেন তাদের আমরা ধন্যবাদ দেব।
তিনি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ২৩ আগস্টের মধ্যে অনুমোদনহীন হাসপাতালগুলো লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব। কারণ স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে প্রতারণা বা ছিনিমিনি করা হোক তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন আলমগীর হাসপাতালটির চেয়ারম্যান- এই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার আলম বলেন, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে না, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আইন সবার জন্য সমান। আমি যদি কোনো অন্যায় বা অপরাধ করি, আমি সরকারের কোনো দায়িত্বে আছি বা ম্যাজিস্ট্রেট আছি বলে আলাদা কোনো বিধান নেই। এক্ষেত্রে সবাই সমান। তবে আমরা আশা করি যারা দায়িত্বশীল তারা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
রোববার দুপুর ১টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম অপারেশন থিয়েটার, ফার্মেসি, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব পরিদর্শন করেন, কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেন।
অভিযানের বিষয়ে সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. ইউনুছ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাইসেন্সের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের উল্লেখ করে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।