চাঁদার দাবিতে থানায় আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ
আটক করে থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন ও চাঁদা দাবির অভিযোগে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর উপজেলার গুজিরকোনা গ্রামের যুবলীগ কর্মী আলম তালুকদার বাদী হয়ে নেত্রকোনার দ্রুত বিচার আদালতে অভিযোগটি দায়ের করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করলেও অভিযোগটির পরবর্তী ব্যবস্থা সম্পর্কে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো নির্দেশ দেননি।
অভিযুক্ত অপর দুই আসামি হলেন, একই থানার সাবেক এসআই আব্দুল হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল রানা।
বাদী আলম তালুকদার দুর্গাপুর-কলমাকান্দা আসনের সাবেক এমপি জালাল উদ্দিন তালুকদারের ভাতিজা এবং একজন বালু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে, অভিযুক্ত ওসি মিজানুর রহমান বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় বরিশাল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া এসআই আবদুল হালিম নেত্রকোনার মদন থানায় এবং কনস্টেবল জুয়েল রানা খালিয়াজুরী উপজেলার লেপশিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এসআই আব্দুল হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল রানা গত ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় আলম তালুকদারকে দুর্গাপুরের মাছমহাল থেকে ধরে থানায় নিয়ে যান। এরপর ওসি মিজানুর রহমান তার কাছে বালু বেচার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
আলম তালুকদার চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অভিযুক্তরা তাকে একটি রুমে আটকে রেখে এলোপাথারি পিটিয়ে আহত করেন। এ ছাড়া মাথায় ধরে জোরে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ সময় আলম তালুকদার গুরুতর অসুস্থ হয়ে বমি করতে থাকলে পুলিশ সদস্যরা তাকে দ্রুত দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
প্রাথমিক চিকিৎসা ও অক্সিজেন দেওয়ার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার পর অভিযুক্তরা আবার তাকে দুর্গাপুর থানায় নিয়ে আসেন এবং কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর রেখে আদালতে চালান দেন। ওই রাতেই জামিন পেয়ে তিনি আবার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন এবং এক পর্যায়ে সুস্থ্য হন।
এদিকে আলম তালুকদারকে আটক ও নির্যাতন করার পরদিন (১১ আগস্ট) উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওসি মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার এবং এসআই আব্দুল হালিমকে নেত্রকোনার মদন থানায় ও কনস্টেবল জুয়েল রানাকে খালিয়াজুরী উপজেলার লেপশিয়া ফাঁড়িতে বদলি করেন।
মিজানুর রহমানকে পরবর্তীকালে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বরিশাল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। ময়মনসিংহ রেঞ্জ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত একটি বিভাগীয় তদন্ত দল ইতিমধ্যে বিষয়টির তদন্ত করেছেন।
আলম তালুকদার বলেন, 'থানায় অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে ন্যায় বিচারের আশায় আমি আদালতে মামলা দায়ের করেছি।'
আলম তালুকদারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহবুব জানান, মামলার অভিযোগ দায়ের করার পর আদালত বাদীর (আলমের) জবানবন্দি নিয়েছেন। তবে অভিযোগটির ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিকেল পর্যন্ত কোনো নির্দেশ দেননি।
এ ব্যাপারে ওসি মিজানুর রহমান বলেন, 'অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছাড়া এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।'
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েল বলেন, 'মামলার বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে খোঁজ নেব।'
এর আগে, ৮ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে একই থানায় (কেন্দুয়া) আদালতের নির্দেশে একটি মামলা দায়ের হয়। কেন্দুয়ার চিরাং ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা তাকে বেআইনিভাবে আটক করে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে ওই মামলা দায়ের করেন।