ছেলেকে বাঁচাতে আইসিইউ ছেড়ে দিয়ে মায়ের জীবন ত্যাগ
করোনা আক্রান্ত হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রভা রাণী পাল (৬৫)। একই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন তার সন্তান শিমুল পাল (৪৫)।
গত মঙ্গলবার রাতে ছেলের পরিস্থিতির অবনতি হলে তারও আইসিইউর প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু হাসপাতালের আর কোনো বেড খালি না থাকায় তাকে আইসিইউ সার্পোট দেওয়া যাচ্ছিলোনা। সে খবর মায়ের কানে পৌঁছাতেই ছটফট শুরু করেন তিনি। নিজের হাতে লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদের ইশারা করতে থাকেন।
এসময় শত চেষ্টা করেও মাকে বোঝাতে পারেননি কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। পরে বাধ্য হয়ে মাকে বেড থেকে সরিয়ে, সেই আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া হয় ছেলেকে।
আইসিইউ থেকে নামার একঘণ্টার মাথায় মারা যান মা। গত মঙ্গলবার রাতে ছেলের জন্য মায়ের জীবনদানের এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে।
জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ছেলের অক্সিজেন কমে যাওয়া এবং আইসিইউ প্রয়োজনের খবর শুনে মা চিকিৎসককে ইশারা করে বলেন, তার জায়গায় ছেলেকে আইসিইউতে রাখতে।
যখন চিকিৎসকেরা দেরি করছিলেন, তখন আইসিইউতে থাকা মা নিজের হাতে লাগানো লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ফেলেন। পরে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ছেলেকে আইসিইউতে আনেন চিকিৎসকেরা। মা চলে যান সাধারণ বেডে। পরে সেখানেই মা মারা যান, ছেলের অবস্থাও এখন সংকটাপন্ন।"
তিনি জানান, প্রভা পাল করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ১৫ জুন থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ছিলেন। পরে ২২ জুলাই আইসিইউ ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। এর এক দিন আগে ২১ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আসেন তার ছেলে শিমুল পাল।
ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, "শুধু প্রভা রাণী পালের আত্মদান নয়, এই হাসপাতালে প্রতিদিনই ট্রাজেডির সৃষ্টি হচ্ছে মূহুর্তে মূহুর্তে। মঙ্গলবার ও বুধবার আমাদের হাসপাতালের একই আইসিইউতে করোনা আক্রান্ত বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে করোনা মহামারির শুরুতে শিল্পপতি ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই মোরশেদুল আলমের অবস্থার অবনতি হলে ছোট ভাই রাশেদুল আলম নিজের আইসিইউ সিট ছেড়ে দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এরপরও মারা যান মোরশেদুল আলম।
করোনা মহামারি শুরুর পর এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে চট্টগ্রাম। প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু, সংক্রমণ। নগরের সব হাসপাতালের শয্যা পরিপূর্ণ করোনা আক্রান্ত রোগীতে। খালি নেই একটি আইসিইউও।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, "এই মূহুর্তে হাসপাতালের কোনো আইসিইউ খালি নেই। কিন্তু বহু রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন। তবুও যারা চলে আসছেন তাদের হাসপাতালের বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।"
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রউফ বলেন, "হাসপাতালের আইসিইউতে ১৮টি শয্যার মধ্যে ১৫টিতে রোগী ভর্তি আছে। বাকি ৩টি আইসিইউ শয্যা বর্তমানে নষ্ট।"