জঙ্গিবাদে তরুণদের টানতে ইন্টারনেটে আকর্ষণীয় প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে: মনিরুল
জঙ্গিবাদে তরুণদেরকে টানতে এর নিয়োগদাতারা প্রতিনয়ত ইন্টারনেটে বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্যাকেজ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
‘ঢাকা পিস টক’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “এখন যারা (জঙ্গি) গ্রেপ্তার হচ্ছে তারা কেউ কেউ আগে থেকেই ছিল। আবার কেউ কেউ নতুন করে র্যাডিকালাইজড হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। প্রতিনিয়িত জঙ্গিবাদের রিক্রুটা, মোটিভেটররা ইন্টারনেটে লুকরেটিভ ও এট্রাকটিভ প্যাকেজ দিচ্ছে। এসব ভিডিও দেখে ২৫ থেকে ৩০ বছরের তরুণরা জঙ্গিবাদে বেশি জড়াচ্ছে।”
হলি আর্টিজান হামলার পর এখন যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে তারা কে কিভাবে র্যাডিক্যালাইজড হচ্ছে, আগেই হয়েছে নাকি এখন হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “জঙ্গিবাদের যারা রিক্রুটার, মোটিভেটর তারা ইন্টারনেটে লুকরেটিভ এন্ড এট্রাকটিভ প্যাকেজ দিচ্ছে। যাদের ভেতরে এন্টিবডি কম, মানসিকভাবে দুর্বল ও দেশপ্রেম নাই, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ নাই, মতাদর্শিক জায়গায় ধারণা নাই, টলারেন্স নাই, জীবনের যে বাস্তবতা যারা মেনে নিতে না পেরে শর্টকাট পথ খুঁজছে তারাই র্যাডিক্যালাইজড হচ্ছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, “হলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিবাদ বিরোধী কাজ বেশি হচ্ছে যা আগে খুব একটা ছিল না। আমাদের এটা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের একটি জঙ্গিবাদ বিরোধী এন্টিবডি তৈরির কাজ করতে হবে।”
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সিসার্ফের নির্বাহী পরিচালক শবনম আজিম বলেন, “গবেষণার ফল বলে, উগ্রবাদের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কেননা একেক পরিস্থিতিতে এককভাবে উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো ছকেই এই উগ্রবাদকে সরলীকরণ করা যাবে না। সহিংস উগ্রবাদ বা এর ঘনীভূত রুপ সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো একটি দীর্ঘমেয়াদী জটিল কাজ কোনো সুনির্দিষ্ট বাহিনী, সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব না। এজন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “শুধু যে ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে সহিংস উগ্রবাদের ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু নয়। নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মূল্যবোধ এরকম নানান বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। কী কারণে আমাদের তরুণরা সহিংস উগ্রবাদী কর্মকান্ডে জড়াচ্ছে তা নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণাই আমাদের লক্ষ্য।”
সাংবাদিকতার এই শিক্ষকের মতে, তরুণরাই বেশি সহিংস উগ্রবাদে ঝোঁকে। ফলে ক্ষতি পুরো জাতির।
“কোন শিক্ষার্থী যাতে উগ্রবাদে না জড়ায়, সেজন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দরকার পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা। এরপর সামাজিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্রবাদ ও মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সিসার্ফ সচেনতামূলক কাজটিই করতে চায়। যে কাজগুলো মানুষকে জঙ্গিবাদে নিয়ে যায় সিসার্ফ ‘ঢাকা পিস টক’ এর মাধ্যমে সেগুলো শনাক্ত করবে ও সমাধানের পথও দেখাবে।”
তিনি জানান, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দক্ষ সাংবাদিকের সমন্বয়ে গড়ে ওটা সিসার্ফ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি কৌশলগত চিন্তক, শিক্ষাবিদদের প্ল্যাটফর্ম। সমাজের ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করা হবে। তারা ঢাকায় ১২টি রাউন্ড টেবিল বৈঠক করবেন। এর সাথে ১২টি আলাদা আলাদা গবেষণাও হবে বলে জানান তিনি।