ঢাকামুখী হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ করে দেয় সব ধরনের গণপরিবহন। তখন থেকেই কার্যত পুরো দেশে অঘোষিত 'লকডাউন' শুরু হয়ে যায়। সেই ছুটির সময় ঝুঁকি নিয়েই লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মী বাস, ট্রাক, নৌপথ ও রেলপথে গ্রামে বাড়ি ফিরেন।
গত ১ এপ্রিল সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্বিতীয় দফায় ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করে। প্রথম দফা ছুটিতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিলে দ্বিতীয় দফায় তারা ছুটি বর্ধিত করেনি। তাই বাধ্য হয়েই হাজারো গার্মেন্টস কর্মীকে এই অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ময়মনসিংহ: প্রথমে তাকালে মনে হবে এ যেন মিছিল বা কোনো বর্ণাঢ্য র্যালির দৃশ্য। যেখানে অংশ নিচ্ছে হাজারো মানুষ। ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকা থেকে পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানুষের এই সমাগম। এরা সবাই গার্মেন্টস কর্মী, সবার গন্তব্য ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
শনিবার সকাল থেকেই শহরের পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভিড়। শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছেন তারা। পায়ে হেঁটে, রিকশায়, অটোতে করে তারা পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেছেন। এখান থেকে ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ছুটি শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। তাই দলে দলে ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ছুটছেন ঢাকার দিকে। সড়কে যানবাহন না চলায় তারা পড়েছেন বিপাকে। ট্রাক, পিকআপ যা-ই পাচ্ছেন, তাতেই গাদাগাদি করে যাচ্ছেন তারা।
রোকাইয়া বেগম নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক বলেন, নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটারের বেশিরভাগ রাস্তা পায়ে হেঁটে এসেছেন তিনি, গন্তব্য গাজীপুর। তার শংকা, সময়মতো কারখানায় উপস্থিত হতে না পারলে বকেয়া বেতন পাবেন না। গার্মেন্টস কর্মী জোহরা বেগম জানান, তার বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায়। ছুটি পেয়ে স্বজনদের দেখতে গ্রামে গিয়েছিলেন। এখন ফিরতে হচ্ছে কর্মস্থল গাজীপুরে।
পরিবহন কম থাকায় এই ভিড়ের মধ্যে কোনো ধরনের করোনাভাইরাস সতর্কতাই মানা সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক, অন্যদিকে চাকরি। তাই শঙ্কায় আছেন তিনি।
জাহিদ নামে একজন বলেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। সব বন্ধ, এর মধ্যেই কর্মস্থলে পৌঁছাতে হবে। কাজে যোগ না দিলে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়ব।
ময়মনসিংহ ট্রাফিক ইনচার্জ সৈয়দ মাহবুবুল আলম জানান, হাজারো শ্রমিক আসছে। তাদের কন্ট্রোল করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। পরিবহন বন্ধ। এর মধ্যে যে কয়েকটা ছোট ছোট পরিবহন সড়কে আছে, সেখানে ভিড়ের জন্য পা ফেলা যাচ্ছে না। এর মধ্যও আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। মাইকিং করছি, হাত ধোয়ার, মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। আজকের পর ভিড় থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।
গাজীপুর: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভবানাকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন পোশাক কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক গাজীপুরে ফিরতে শুরু করেছেন। রোববার থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেঁধে ছুটছে তাদের কর্মস্থলের উদ্দেশে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা পিকআপ, ট্রাক ও রিক্সায় চড়ে বাড়ি থেকে আসছেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যে। আবার অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ড ও পয়েন্টে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন। এতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শনিবার দুপুরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা সহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভিড়। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর অঞ্চলের গ্রামের বাড়ি থেকে পিকআপ, ট্রাক ও ভ্যান গাড়িতে চড়ে যাচ্ছেন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার উদ্দেশে। বিভিন্ন স্ট্যান্ডগুলোতে যানবাহনের আশায় অপেক্ষা করছেন অগণিত শ্রমিক। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করখে পরিবহন শ্রমিকরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের চেয়ে এসব পোশাক শ্রমিকদের কাছে তাদের চাকুরি রক্ষা করাটা বেশি প্রয়োজন বলে দাবি করছেন তারা।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বড়পুটিয়া এলাকার আকরাম হোসেন গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার মণ্ডল গার্মেন্টস লিমিটেডের সুইং অপারেটর। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তাকে অফিস থেকে ফোন দিয়ে ৫ এপ্রিল কাজে যোগাদান করতে বলেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী শনিবার ভোর সাড়ে ৬টায় তিনি বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। কোথাও তিনি যাত্রীবাহী বাসের দেখা পাননি। কখনও অটোরিক্সা, কখনও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা আবার কখনও পায়ে হেঁটে দুপুর ২টার সময় মাওনা চৌরাস্তা এসে পৌঁছান।
গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার ময়মনসিংহের ফুলপুর এলাকার সহকারী অপারেটর সোনিয়া বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় স্বামী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাড়ি থেকে রওয়ানা হন কর্মস্থলের উদ্দেশে। কোনো যানবাহন না পেয়ে প্রথমে পায়ে হেঁটে আবার রিক্সায় এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে দুপুর আড়াইটায় মাওনা চৌরাস্তা এসে পৌঁছেন। ২'শ টাকা ভাড়ার জায়গায় পাঁচগুন বেশি ভাড়া দিয়ে কারখানায় যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ট্রাক পিকাপ চালকদেরকে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদেরকেও ওইসব পরিবহন থেকে নেমে যেতে বলা হচ্ছে। অনেকে দল বেঁধে পায়ে হেঁটে গাজীপুর মহানগর ও ঢাকা অভিমুখে চলছেন।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা নাসরিন বলেন, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ট্রাক পিকাপে যাত্রী বহন করায় বেশ কয়েকজন ট্রাক চালককে অর্থ দ- ও তা আদায় করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নেও তৎপর রয়েছে।
রাজশাহী: গার্মেন্টস শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ফিরছেন কর্মস্থলে। চাকরি টেকাতে এদের মধ্যে অনেকে মোটরসাইকেলে, কেউবা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে, কেউবা ট্রাকে গাদাগাদি করে কিংবা নিদেনপক্ষে হেঁটেও ঢাকায় ফেরার উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকে ঢাকায় ফিরেও গেছেন।
এদের একজন শানজিদ। তার বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়। ৫ এপ্রিল গাজীপুরে অবস্থিত তার কর্মস্থলে তাকে ফিরতেই হবে। শুধু সানজিদ না তার সঙ্গে তার স্ত্রীও গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তাকেও যেতে হবে। এর আগে ছুটির পর গত ২৭ মার্চে তারা ট্রাকে করে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে আত্রাইয়ে এসেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, কিছুই বুঝতে পারছি না কীভাবে ঢাকায় পৌঁছাব। আমাদের অনেকেই মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে ঢাকায় গেছে। আমি ও আমার স্ত্রী মাইক্রোতে জায়গা পাইনি। অথচ আমার ৫ তারিখে অফিসে যোগদান করতেই হবে। ঠিক করেছি, শনিবার বিকেল বাড়ি থেকে বের হয়ে নাটোর যাব। তারপর ট্রাক বা মাইক্রোবাস যা পাব, তাতেই চড়ব। আর যদি না পাই, তাহলে হেঁটেই পৌঁছাতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
গাজীপুরের ফায়ার সেইফটি নামের একটি অগ্নি নির্বাপন প্রস্তুত কারখানায় কাজ করেন নাজমুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়িও নওগাঁর আত্রাইয়ে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই আমাদের অফিস শুরু হয়ে গেছে। আমার মেয়ে অ্যাকসিডেন্ট করায় একদিন ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছি। কিন্তু ৫ তারিখে আমাকে অফিসে যোগদান করতেই হবে। অফিসকে বলেছিলাম, ছুটি বাড়ানোর জন্য; কিন্তু অফিস ছুটি আর বাড়ায়নি। গাড়িও চলছে না যে তাতে করে যাব। তাই অগত্যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মোটরসাইকেল চালিয়েই গাজীপুরে যাব।
রাজশাহীর বাগমারার রইস উদ্দিন নামের এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, আমরা ৯ জনের একটি টিম মাইক্রোবাস ভাড়া করেছি। প্রতিজনে ভাড়া দিতে হবে ১৩০০ টাকা। অথচ সাধারণ সময়ে জনপ্রতি রাজশাহী থেকে ঢাকা যেতে বাসে ভাড়া লাগে মাত্র ৪৫০ টাকা। এখন বাধ্য হয়েই জীবিকার প্রয়োজনে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা যেতে হচ্ছে।
করোনার এই সংক্রমণের সময়ে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উপায় তো নাই। পেটের দায়ে যেতেই হবে, না হলে চাকরি থাকবে না। তখন চাকরি কে দিবে? তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যেতে হচ্ছে।
শুক্রবার বিকেলে ট্রাকে একই উপজেলার বিউটি ও তার স্বামীসহ আরও কয়েকজন রওনা হন ঢাকার উদ্দেশ্যে। তাদের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জে রওনা দেওয়ার আগে মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তারাও জানান, যেভাবেই হোক তাদের নারায়ণগঞ্জে পৌঁছাতেই হবে। ৫ এপ্রিল থেকে অফিসে যেতেই হবে; না হলে চাকরি থাকবে না।
শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের প্রায় ২০ শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে চাকরি করেন। ছুটিতে সবাই গ্রামে এসেছিলেন। এখন ছুটি বর্ধিত হলেও তাদের অফিসের ছুটি বর্ধিত হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তাদের ঢাকা যেতে হচ্ছে।
বগুড়া: উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রাকে করে ঢাকায় যাচ্ছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। চারটি মিনি ট্রাকে করে প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।
এসব মিনি ট্রাকে অবৈধভাবে যাত্রি পরিবহনের পাশাপাশি অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখাসহ নানা অভিযোগে বগুড়া সদর উপজেলার মাটিডালী এলাকায় ৪ ট্রাকসহ ১২টি মামলা দায়ের করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক এসব মামলায় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মো. আজিজুর রহমান জানান, ঢাকামুখী ৪টি ট্রাকে ত্রিপলে ঢেকে অবৈধভাবে যাত্রি নেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার সরকারি আদেশ অমান্য করে তারা। এজন্য জরিমানা করা হয়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে ৩৫ জন যাত্রি নিয়ে গাজীপুরে রওনা হন ট্রাক চালক আব্দুর রাজ্জাক। গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া চুক্তি হয়েছে পৌঁছানোর পরে। অন্যদিকে আরেকটি ট্রাকে বগুড়ার মহাস্থান এলাকা থেকে ১৪ জন যাত্রি নিয়ে এলেঙ্গার উদ্দ্যেশে রওনা হন চালক বজলুর রহমান।
এছাড়াও অন্য দুইজন চালকও যাত্রি নিচ্ছিলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য। মো. আফজাল নামে আরেকজন ট্রাক চালক জানান, রংপুর থেকে ২৮ জন যাত্রি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। বগুড়ার মাটিডালী এলাকায় ট্রাকটি আটক করে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। ট্রাকের যাত্রি প্রকৌশলী একেএম রবিউল আহসান বলেন, ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করা ট্রাকে যাচ্ছিলেন ২৮ জন যাত্রি নিয়ে।
নারায়ণগঞ্জ: রোববার থেকে গার্মেন্টস খোলা থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক, রিক্সা ভ্যানসহ ছোট ছোট যানবাহনে করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে করে শ্রমিকরা আসছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল মোড়ে কথা হয় শ্রমিক শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাল ( রোববার) থেকে গার্মেন্টস খুলবে তাই কষ্ট করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে অনেক টাকা ভাড়া গুণে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। গত মার্চ মাসের বেতন পাইনি। এপ্রিল মাসের ৭ /৮ তারিখে বেতন দিবে। কাজে যোগ না দিলে যদি বেতন না দেয় বা ছাঁটাই করে দেয় এই ভয়ে কাজে যোগ দিতে এসেছি।
এ ব্যাপারে বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মুনসুর আহমেদ বলেন, গত ২৯ মার্চের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খোলা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, এই সময় গার্মেন্ট খোলা রাখার পক্ষে আমি নই। গার্মেন্টস মালিক হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে আরো ১০ দিন গার্মেন্টস বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কারণ করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে যে মহামারি আকার ধারণ করছে তাই সবাইকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি জানান, বিকেএমই জরুরি সভা করে গামেন্টস ৪ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্স বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই সময় আমার নোটিশে বলে দিয়েছি ৪ এপ্রিলের পর যে সব গার্মেন্টস যারা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে না তাদের গার্মেন্টস বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক গার্মেন্টসে গত মার্চ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন প্রদানের জন্যই সাময়িকভাবে গার্মেন্টস খোলা হচ্ছে। কারণে শ্রমিকদেরও তো খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবে।