ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, সাংবাদিককে মারধর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বর, দোয়েল চত্বর এবং টিএসসি এলাকায় দফায় দফায় এই হামলার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তিন সাংবাদিকও ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন।
ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, এই হামলায় তাদের সাত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ, জিয়াউর রহমান হলের সদস্য কামরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু হলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম সোহেল, সূর্যসেন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ মাসুম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব শাহিন, কবি নজরুল কলেজের ফাহিম ও ঢাকা কলেজের নয়ন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ছাত্রলীগের মারধরে আহত তিন সাংবাদিক হলেন, স্টুডেন্ট জার্নালের আনিসুর রহমান, প্রতিদিনের সংবাদের রাহাতুল ইসলাম রাফি এবং বিজনেজ বাংলাদেশের আফছার মুন্না। তারা সবাই গণমাধ্যমগুলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রদলের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল তার নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে আসলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস তার সাথে কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করতে বলেন। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের একাংশ টিএসসি এলাকায় গেলে তাদের ওপর রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় সনজিতের অনুসারীরা।
ছাত্রদলের নেতারা অভিযোগ জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের স্যার এ এফ রহমান হলের আপেল মাহমুদ, জসিম উদ্দিন হলের মহসিন আলম তালুকদার, সূর্যসেন হলের যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম শপু, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাইসুল ইসলাম, সূর্যসেন হল ছাত্র সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহান, জগন্নাথ হল সংসদের জিএস কাজল দাস, জসীম উদ্দিন হল সংসদের জিএস ইমামুল হাসান, জহুরুল হক হলের সহ-সম্পাদক হাসান রাহাত তাদের ওপর চালানো এই হামলায় অংশ নেন।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এই হামলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে সরাসরি দায়ী করে বলেন, “ছাত্রলীগের সনজিতের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের মোবাইল ও বাইক ছিনতাই করে নিয়ে গেছে তারা। আমরা এর বিচার চাই।”
সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নেতারা ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে সামিতির কার্যালয়ে ডেকে আনেন। এ ঘটনায় সনজিত ও সাদ্দাম দুঃখপ্রকাশ করে সাংবাদিক মারধরে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে’ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় ছাত্রদলের ওপর হামলার বিষয়টি তারা এডিয়ে যান।
সনজিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, “এই হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমি এবং সাদ্দাম এই ঘটনার বিষয়ে ওয়াকিবহালও ছিলাম না। তবে ছাত্রলীগের কিছু অতি উৎসাহী কর্মী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। পর্যালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এ ঘটনায় ‘লজ্জিত’ উল্লেখ করে বলেন, “এই হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে জড়িত ছিল না। কিন্তু ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। যারা জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এরকম নির্দেশনা আমরা ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে দেব।”