ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধি, শপিংমলগুলো খোলা থাকছে রাত পর্যন্ত
রাত তখন ৯ টা বেজে ২৫ মিনিট। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের প্রধান ফটক দিয়েই কয়েকজন প্রবেশ করছেন কেনাকাটা করার উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে মার্কেট থেকে বের হওয়ার পথে দুই হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন অনেকেই। মার্কেটের মধ্যে দোকানগুলোতে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। মার্কেট কতৃপক্ষ কিংবা দোকানী কারো মাথায়ই নেই দোকান খোলা রাখার সময়সীমা দেড় ঘন্টা আগেই পেরিয়ে গিয়েছে; শপিংমলগুলো রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এসময়ে শপিং করতে আসা সুমি আক্তার টিবিএসকে জানান, গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ অন্যান্য শপিংমলগুলো রাত ১০ টার পরেও খোলা থাকার কারণে ইফতার শেষেই কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন তিনি। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৮ টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে এটাও জানা তার।
সুমি টিবিএসকে বলেন, 'দিনে রোদের মধ্যে বের হইনি তাই সন্ধ্যার পরে এসেছি কেনাকাটা করতে। এখন শপিংমল খোলা থাকলে আমাদের কেনাকাটা করতে সমস্যা হওয়ার কথা না। এছাড়া ভেবেছি গেইট বন্ধ থাকলেও ভিতরে দোকান তো খোলা থাকবে'।
শুধু বসুন্ধরা সিটি শপিং মলই নয়, এটি ঢাকার বিভিন্ন স্থানের অধিকাংশ শপিংমলেরই বর্তমান চিত্র।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এর সংক্রমণ ও ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে শপিংমল ও দোকানপাট সকাল ১০ থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না শপিং সেন্টারগুলো ও দোকানীরা। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে রাত দশটা থেকে এগারোটা, এমনকি মধ্যরাত পর্যন্তও খোলা রাখা হচ্ছে রাজধানীর ছোট বড় প্রায় সব শপিংমল।
গত মঙ্গলবার ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউসিয়া, নূর ম্যানসন, চন্দ্রিমা মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি শপিং সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, দোকান খোলা রাখার নির্দিষ্ট সময় রাত ৮ টা পার হয়ে গেলেও কোন শপিং মল ও দোকানপাট বন্ধ করা হয়নি। শপিং সেন্টারগুলোর মধ্যে অবস্থান করা ক্রেতারা ভিতরে বসেই কেনাকাটা করছেন এমনকি রাত ১০ পর্যন্তও অধিকাংশ শপিং সেন্টারে ক্রেতারা প্রবেশ করছেন।
ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের দাবি, দিনে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকায় এবং সন্ধ্যার পরে কিছু ক্রেতা আসায় তাদের দোকানগুলো কিছু সময় খোলা রাখা হয়। রাত ৮ টার পরে শপিংমলগুলোর সেন্ট্রাল এসি, চলন্ত সিঁড়ি, লিফট বন্ধ হয়ে যায় বলে দাবি করলেও সেন্টারগুলোতে তেমনটা চোখে পড়েনি। এমনকি কিছু শপিং সেন্টারে রাত ৮ টার দিকে চলন্ত সিঁড়ি কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে আবার কিছুক্ষণ পরেই সচল করা হয়।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের 'শাড়ি বাজার'র সেলস ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'এ বছরের ঈদ বাজার আমাদের জন্য খারাপ যাচ্ছে। রাত ৮ টায় দোকান বন্ধ করার নিয়ম থাকলেও আমাদের বন্ধ করতে করতে এক ঘন্টার মতো সময় লাগে। দোকানে যেসব ক্রেতারা থাকেন তাদের তো হুট করে বের করে দেওয়া যায় না'।
পরিবারসহ কেনাকাটা করতে আসা তাসলিমা আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'রাত ৮ টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে এটা জানি কিন্তু মার্কেটে ঢুকলে তো সময়ের দিকে খেয়াল থাকে না। যতক্ষণ মার্কেট খোলা থাকে ততক্ষণ তো আমাদের কেনাকাটা করতে সমস্যা নেই'।
সরকারের নির্দেশনা থাকার পরও কেন রাত ৮ টা পর দোকান বন্ধ করছেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে নিউমার্কেটের দোকানদার আল-আমিন হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'করোনাভাইরাস ও লকডাউনের কারনে বিগত বছরগুলোর মতো এবার বেচাবিক্রি নেই। কাস্টমার অনেক কম। ভাইরাসের আগে এই দোকানে ঈদ মৌসুমে কম করে হলেও দৈনিক বিক্রি ১লাখ টাকা থাকত সেখানে আজ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা। তাই একটু বসে আছি আরো কিছু কাস্টমার পাওয়ার জন্য'।
চাঁদনী চকের দোকানী আনিসুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'লকডাউনে ব্যবসায়ীদের যে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে তা তো আর কাটিয়ে ওঠা যায় না। তারপরও কর্মচারীদের বেতন-বোনাস যাতে ঠিকমতো দিতে পারি তাই একটু বাড়তি সময় বসে আছি'।
আনিসুর রহমান আরও বলেন, 'সরকারের উচিত শপিংমলগুলো রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখা, তাহলে মানুষের ভিড় কম হবে, অনেক মানুষ ইফতারের পর স্বাচ্ছন্দ্যভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করতে পারবেন'।
রাত ৯টায় গাউসিয়া মার্কেটে কেনাকাটা করা শাহিনা আক্তার টিবিএসকে বলেন, 'দিনের বেলায় অনেক রোদ, গরম তাই তখন আসিনি। শুনেছি রাত ১০-১১ পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকে এবং ইফতারে পরে মানুষও একটু কম থাকে তাই এখন এসেছি'।
এ ব্যাপারে চাঁদনী চক দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দীন টিবিএসকে বলেন, 'এখন ব্যবসায়ীরা মূলত পেটের দায়েই রাত ৮ টার পরও শপিংমল খোলা রাখছে। পেটে ভাত না থাকলে তো মানুষ চুরি করতেও বাধ্য হয়। দীর্ঘ লকডাউনে আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি, অন্তত ঈদের আগের এই কয়েকটি দিন রাত ১১ টা পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়ে দিক'।
এদিকে শপিংসেন্টারগুলো নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরে খোলা রাখা ব্যতীতও মার্কেটগুলোতে অনেক দোকানী ও ক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। মার্কেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং কেনাকাটা করার সময় সামাজিক দূরত্বের কথা ভুলেই যান তারা। মার্কেটগুলোতে মাইকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে বারবার নির্দেশনা দিলেও মানছেন না অনেকেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে আমরা সবসময় সচেতন। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি না মানায় আমরা পল্টনের চায়না মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছিলাম পরবর্তীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় আবার চালু করা হয়েছে'।
নির্দিষ্ট সময়ের পরেও শপিংমলগুলো খোলা রাখার বিষয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'আমরা জানি না যে রাত ৮ টার পরেও মার্কেট খোলা থাকছে। হয়তো বাহিরের কিছু দোকান কিংবা ফুটপাতে হকার্স মার্কেট খোলা থাকতে পারে'।