দেরিতে হাসপাতালে নেওয়ায় ৫৪% মাতৃমৃত্যু বাড়িতে: ওয়েবিনারে বক্তারা
প্রসবকালীন ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নেয়ায় দেশে ৫৪% মাতৃমৃত্যু হয় বাড়িতে। করোনাকালে মায়েদের সেবাকেন্দ্রে যাবার প্রতিবন্ধকতা আরো বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের এখন এক সামাজিক যুদ্ধে নামতে হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল।
সোমবার ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) যৌথ আয়োজনে 'করোনাকালে মাতৃস্বাস্থ্য এবং বাবার দায়িত্ব' শীর্ষক ওয়েবিনারে ডা. রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। 'বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ' উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ ওয়েবিনারে মিডিয়া পার্টনার ছিলো দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, আমাদের দেশে প্রথমবার গর্ভধারণ করা অধিকাংশ মা-ই কিশোরী। মা হতে গিয়ে তাদের যে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হয় তা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবেন না। অনেক মা গর্ভকালীন চেকআপ করেনা, বাড়িতে মাতৃমৃত্যু ঘটে। পরিবার ও সন্তানের বাবার সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, করোনা ও লকডাউনের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবারের উপর্জনকারী ব্যক্তি যেমন বাবারা কর্মহীন হওয়ায় তারা সন্তানের মায়ের যথাযথ যত্ন নিতে পারছেন না। মাতৃস্বাস্থ্যের গুরুত্বের বিষয়টি এই সময়ে আরও বেশি করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাবাদের উচিত মাতৃত্বকালীন সময়ে সন্তানের মায়েদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া ও মায়েদের কাজগুলো ভাগ করে নেয়া। একই সঙ্গে মা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বাবাকে ভাবতে হবে। কোভিড-১৯ এর সময়ে এ বিষয়টিও নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিএইচআরএফের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি সংস্থার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মুরাদ আহমেদ।
ড. মুরাদ আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের নারীরা গর্ভকালে এমনিতেই অপুষ্টিতে ভুগেন। এর সঙ্গে করোনাকালে যোগ হয়েছে বাল্যবিবাহের বাড়তি বোঝা। অল্প বয়সে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের ভাবতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে, মায়েরা এখন চাইলে কোভিড-১৯ টিকা নিতে পারছেন। সর্বোপরি মাতৃত্ব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া চলবে না।
ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেডের (ইউসিএল) কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের প্রধান শামীমা আক্তার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা এবং মায়েদের স্বাস্থ্যের কথা প্রচার করতে আমরা বিএইচআরএফ-এর সাথে এই ওয়েবিনারের সূচনা করেছি।
ইতিমধ্যেই হরলিক্স মাদারস প্লাস সচেতনতা বাড়াতে এবং মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোকে উৎসাহিত করতে এক মাসব্যাপী প্রচারণা শুরু করেছে।
এ সকল পদক্ষেপ দেশের মানুষের মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।