প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বছর পেরোলেও জেলা হাসপাতালগুলোতে কাটেনি আইসিইউ’র সংকট
দেশের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁয় এখন করোনা সংক্রমণের হার ৩০% থেকে ৩২% এর মধ্যে ওঠানামা করছে। ব্যাপক সংক্রমণের ফলে অনেক কোভিড আক্রান্ত রোগীই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট বা কোন আইসিইউ না থাকায় এসব গুরুতর রোগীদের রাজশাহী ও বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে স্থানান্তর করতে হচ্ছে।
কেবল নওগাঁতেই যে এ পরিস্থিতি তা নয়। দেশের ৬৪টি জেলা হাসপাতালের প্রায় ৩৬টিতেই কোভিড রোগীদের জন্য নেই আইসিইউয়ের ব্যবস্থা।
অনেক ক্ষেত্রে, গুরুতর রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার উদ্দেশ্যে বিভাগীয় সদর বা টারশিয়ারী হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। বিলম্বিত চিকিৎসার ফলে অনেক রোগীকেই শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরপরই প্রতিটি জেলা শহরে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ স্থাপন করা গেলে, কোভিডে প্রাণহানির সংখ্যা কম হতে পারত।
আইসিইউ'র অভাবে এরই মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মহামারির তৃতীয় ঢেউ আঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের ৫টি জেলা, চট্টগ্রামের ৮টি জেলা, রংপুরের ৬ জেলা, সিলেটের ২টি জেলা, বরিশাল ও খুলনার ৪টি করে জেলা, রাজশাহীর ৬ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ২টি জেলাতে কোভিড রোগীদের জন্য কোন আইসিইউ নেই।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট এবং করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে কোভিডে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পৃথক সংস্থা গঠন করা উচিত"।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ জরুরী প্রতিক্রিয়া এবং মহামারি প্রস্তুতি প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলায় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি করে ৫ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ স্থাপন করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৩,৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যেন তারা রোগীদের আইসিইউ সেবা তথা নিবিড় পরিচর্যা প্রদানের দক্ষতা অর্জন করে।
এছাড়া এ প্রকল্পের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, গণপূর্ত বিভাগ ৪৩টি জেলায় আইসিইউ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
এক মাস আগেই এর ১৩টি ইউনিটের নির্মাণ নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্মাণকাজটি শেষ হতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগবে, তারপরে ইউনেস্কোর সহায়তায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে আসা হবে।
আজিজুর রহমান বলেন, "আইসিইউগুলো প্রস্তুত হয়ে গেলেই আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেব"।
জনবল সঙ্কট সমাধানে নেই কোন উদ্যোগ
ইতিমধ্যে, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো থেকে দুটি আইসিইউ বেড নওগাঁয় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাতে দৃশ্যত কোন ফায়দা নেই! অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট কিংবা ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও নার্স ব্যতীত এসব বেড অকেজো পড়ে থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনবল সঙ্কটের কারণে জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড স্থাপন করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, "আমাদের পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড এবং ভেন্টিলেটর রয়েছে। তবে দক্ষ জনশক্তির অপ্রতুলতার কারণে আমরা সেসবের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছি না। দেশে অ্যানাস্থেসিওলজিস্টের সংখ্যা কম; তাছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা তাদের নিয়োগে বিলম্ব ঘটাচ্ছে"।
বাংলাদেশ সোসাইটি অফ অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট এর সভাপতি দেবব্রত বণিক বলেন, বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট বেসরকারী খাতে কর্মরত রয়েছেন এবং সরকার গুরুতর অসুস্থ রোগীদের আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে এসব অ্যানাস্থেসিওলজিস্টদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে পারেন।
মাস তিনেক আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ৪৫০ জন অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন, তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে তা এখনও বাস্তবায়িত হয় নি।
"যারা অ্যানাস্থেসিয়ায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তাদের মাধ্যমে জুনিয়র পরামর্শক পদগুলো পূরণ করা হবে। তাদেরকে সাত দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেই, কোভিড-১৯ রোগীদের তত্ত্বাবধান করতে সক্ষম হবে তারা"।