বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হলে বহিষ্কার
ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ ছাড়া র্যাগিংয়ের কারণে কোনো ছাত্রের মৃত্যু হলে তা যদি প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রেও অভিযুক্তকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করবেন। এর মাধ্যমে আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সবগুলোই পূরণ হলো।
সোমবার (২ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বুয়েট।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র তিথি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তাদের সব দাবিই পূরণ করা হয়েছে। এরপর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতেও তারা প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করলে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেউ রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো মেয়াদে বহিষ্কার করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে র্যাগিংয়ের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো ছাত্রের মৃত্যুর শাস্তি বুয়েট থেকে বহিষ্কার ও থানায় মামলা করা হবে। কোনো ছাত্র গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলেও অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।
মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং মানসিক ক্ষতিসহ এ সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সিলিং করতে হবে।
গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। এই মামলায় গত ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ৷ অভিযোগপত্র জমার প্রতিক্রিয়ায় ১৪ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হলে তারা একাডেমিক অসহযোগ থেকে সরে গিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
তাদের প্রথম দাবিটি ছিল আবরার হত্যায় অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। দাবি অনুযায়ী ২৬ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৬ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় শর্তটি ছিল বুয়েটের আহসানউল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী ও তিতুমীর হলে এর আগে ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি। গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের আহসানউল্লাহ ও সোহরাওয়ার্দী আবাসিক হলের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম ৪ থেকে ৭ টার্ম পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে। আহসানউল্লাহ হলের চার ছাত্রকে সতর্ক করা হয়। আর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়।
শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দাবিটি ছিল, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে তা সংযোজন করতে হবে। সোমবার সেই দাবিটিও পূরণ হয়েছে।