মন্দিরে হামলায় নেটিজেনদের নিন্দা
বিগত কয়েকদিনে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে পুজা মণ্ডপ ও মন্দিরে হামলাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশি নেটিজেন ও সেলিব্রেটিদের অসংখ্য পোস্ট দেখা যাচ্ছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার- এ হামলার ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছেন। এসব ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি জানান তারা।
জনপ্রিয় পরিচালক মোস্তফা সারয়ার ফারুকী এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, এসব ঘটনার ঠিকঠাক তদন্ত করে সবার সামনে তুলে ধরা ও দ্রুততার সাথে এই হামলার ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার কর্তৃপক্ষের।
"আগামীতে যেনো এইরকম কিছু না ঘটে তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা নেওয়া," লিখেছেন তিনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার মানুষের প্রতিক্রিয়ার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
"আমার বন্ধু তালিকায় এতো সংখ্যক সাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলো ভাবতেই পারিনি। এদেরকে দেখামাত্র বিদায় করছি," নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন তিনি।
জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ধর্মীয় উগ্রবাদ বিসর্জন দিয়ে শান্তি নিশ্চিত করতে মানবতাবাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সঙ্গিতশিল্পী আসিফ আকবর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজের একটি গানের লিরিকস পোস্ট করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন লিখেছেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
"সুস্থ সমাজে ধর্মান্ধদের কোনো দরকার নেই," লিখেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের উচিত এইসব নারকীয় ঘটনার বিচার চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
"জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের উচিত এইসব নারকীয় ঘটনার বিচার চাওয়া। এই বিচার চাইতে গিয়ে কোন if কিংবা but থাকতে পারেনা। কোন ষড়যন্ত্র খোঁজার বাহানা থাকতে পারেনা," নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন তিনি।
মোটিভেশনাল স্পিকার ও নগদের চিফ পাবলিক এফেয়ারস অফিসার সোলায়মান সুখন ব্যাঙ্গাত্মকভাবে লিখেছেন, এবার নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সমস্যার জন্য নয়, বরং গুজব ঠেকাতে ৪জি ও ৩জি সার্ভিস বন্ধ আছে।
সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আরিফ আর হোসেন তার প্রোফাইলে লিখেছেন শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে কোনো মুসলিম বা হিন্দু অন্য ধর্মকে অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক হামলা করতে পারে না।
"কেউ এটা তার বিশ্বাস থেকে করছে না, একটা দাঙ্গা লাগানোর অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই করেছে,"
পাবলিক স্পিকার ও র্যাংকস এফসি প্রোপার্টিজের সিইও তানভির শাহরিয়ার রিমন লিখেছেন, "একটা জাতীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই,"
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা লোকজনের অপচেষ্টা যেন সফল না তা নিশ্চিত করতে সবাইকে সাবধান থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেছেন,
"আমি আমার হিন্দু বন্ধুটির কাছে কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবো? আমি কি তবে ওকে বলবো যে বন্ধু, যেখানে পারিস চলে যা, বাংলাদেশে আর থাকিস না। এই দেশে কি তবে হিন্দুদের বসবাসের অধিকার নাই?"
এদিকে, দেশজুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও বরিশালে মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে র্যালি ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন কবি, লেখক ও সাহিত্যিকসহ দেশের ৩১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে তারা এসব ঘটনাকে 'নজিরবিহীন ও নিন্দনীয়' বলে উল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে ইমতিয়াজ শামীম, শাহনাজ মুন্নী, আহমাদ মোস্তফা কামাল, কবির হুমায়ূন, শামীম রেজা, আলফ্রেড খোকন, টোকন ঠাকুর, রাজীব নূর, পিয়াস মজিদসহ আরও অনেকে স্বাক্ষর করেছেন।
এর আগে, গত বুধবার কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে 'কুরআন অবমাননা'র অভিযোগে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ, মন্দির, বাড়িঘর এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চাঁদপুর ও নোয়াখালিতে অন্তত ছয়জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশসহ আহত হয়েছেন অনেকেই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের ২২টি জেলায় বিজিবি সহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।