মেঘনা গ্রুপের বহরে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী ২টি জাহাজ
দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ও শিল্পপণ্য উৎপাদনকারী মেঘনা গ্রুপের বহরে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ। 'এমভি মেঘনা প্রিন্সেস' এবং 'এমভি মেঘনা এ্যাডভেঞ্চার' নামের বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ দুটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের জন্য শিল্পের কাঁচামাল পরিবহন করবে।
আজ বুধবার (১০ মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে জাহাজ দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। এর মধ্যে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলো পরিবহন করে ১০ থেকে ১৫ ভাগ পণ্য । দেশের পতাকাবাহী জাহাজ বহরে নতুন দুটি জাহাজ যুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের অংশিদারীত্ব আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিশ্ববাণিজ্য মূলত সমুদ্র পরিবহন কেন্দ্রিক। বাংলাদেশে প্রতিবছর আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের পরিধি বাড়লেও সেই তুলনায় দেশীয় জাহাজের সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। তবে গত দুই বছরে এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে। করোনায় যেভাবে বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এমনই সময়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে মেঘনা গ্রুপের দুটি নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য মাইলফলক।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সুরক্ষা আইন ২০১৯ প্রণয়ন, নতুন আইনে ব্যবসায়ীদের ৫ হাজারের বেশি ডিডব্লিওটি ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজের নিবন্ধনের জন্য ভ্যাট অব্যাহতিসহ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে এই সেক্টরে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা।
মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশী পতাকাবাহী সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা ৬২টি। এর মধ্যে ৪৯ টি বাল্ক ক্যারিয়ার, ১১ টি ট্যাংকার এবং ২টি কন্টেইনার জাহাজ। ২০২০ সালে রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে ১৫ টি জাহাজ।
মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের তথ্য মতে, ২০১২ সালের আগে বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ছিলো ৭২ টি। ২০১২ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে ৩৫ এ। ২০১৮ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ টিতে। ২ বছরের ব্যবধানে জাহাজের সংখ্যা ৩৬ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ টি।
মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, উদ্বোধনের পর এমভি মেঘনা প্রিন্সেস সুগার পণ্যের জন্য ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। অন্য আরেকটি জাহাজ এমভি মেঘনা এডভেঞ্জার সুগার পণ্য পরিবহনের জন্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে ব্রাজিলের বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আগামী ১৫ মার্চ এর বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। ফিরতি পথে সুগার বোঝাই করে জাহাজটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। যুক্ত হওয়া সমুদ্রগামী জাহাজ দুটি মেঘনা গ্রুপের পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যও পরিবহন করবে।
মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ মেঘনা প্রিন্সেস ২০১৯ সালে নির্মিত হয়। জাহাজটির বহন ক্ষমতা ৬২৫৩৪ ডিডব্লিওটিএ। এর ড্রাফট ৭ মিটার, লেন্থ ১৯৯.৯৮ মিটার এবং ওয়াইডথ ৩২.২৭ মিটার। জাহাজটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১১ নটিক্যাল মাইল। গড় গতিবেগ ৭.৮ নটিক্যাল মাইল ।
অন্যদিকে এমভি মেঘনা এ্যাডভেঞ্চার নির্মিত হয় ২০১৮ সালে । জাহাজটির বহন ক্ষমতা ৬২৪৭২ ডিডব্লিওটিএ; এর ড্রাফট ৬.৭ মিটার। লেন্থ ১৯৯.৯৮ মিটার এবং ওয়াইডথ ৩২.২৭ মিটার। জাহাজটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১২.৭ নটিক্যাল মাইল এবং গড় গতিবেগ ১১ নটিক্যাল মাইল।
মেঘনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টইাল শিপিং এর প্রধান প্রকৌশলী মো: আবু তাহের বলেন, নতুন যুক্ত হওয়া জাহাজ দুটি জাপানে তৈরী করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে মেঘনা গ্রুপ ২০১০ সাল থেকে জাহাজ পরিচালনায় যুক্ত হয়। নতুন দুটি জাহাজসহ মেঘনা গ্রুপের বহরে আছে বাংলাদেশী পতাকাবাহী ১২ টি জাহাজ। এর মধ্যে দুটি অয়েল ও ক্যামিকেল ট্যাংকার। বাকি ১০ টি বাল্ক ক্যারিয়ার। আরো ৬ টি বাল্ক ক্যারিয়ার বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে মেঘনা গ্রুপ।