রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের চুল কেটে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের কম্পিউটার শাখা থেকে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক ও চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল মোবাইলে বলেন, "চুল কেটে দেয়ার ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। ফুটেজে কাঁচি হাতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার সত্যতা মিলেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'তদন্ত কমিটির সদস্যরা মিলে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। আজও বৈঠক করবো। আশা করছি আগামীকালের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।'
"প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর একটি প্রেস রিলিজ গণমাধ্যমকর্মীদেরও দেয়া হবে। দেখানো হবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও,' বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের দুই কর্মচারী এবং দুই শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সজিব সরকার জানান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তাকে দিয়ে কাঁচি আনিয়ে একে একে ১৩-১৪ জন ছাত্রের চুল হাত দিয়ে টেনে ধরে কেটে দেন। সে সময় শিক্ষার্থীরা ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। কাটা চুল পড়ে থাকতে দেখা গেছে পরীক্ষার হলের বারান্দার মেঝেতে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনেও। পরীক্ষাও বর্জন করেছেন তারা।
বুধবার দুপুর থেকে রবি'র অস্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আরেকটি অংশ আজ বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় তারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবি জানান।
অনশনে অংশ নেয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নোমান সিদ্দিকী শান্ত বলেন, "আমরা অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। এ কারণে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য কয়েকটি ভবনেও তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের অনশন ও আন্দোলন চলতে থাকবে"।
এদিকে, চুল কেটে দেওয়ায় অপমান সহ্য করতে না পেরে সোমবার রাতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র নাজমুল হাসান তুহিন অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। এরপর তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে চিকিৎসা শেষে বুধবার রাতে ছাত্রাবাসে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠী তানভীর হোসেন।
আন্দোলন চলাকালে মঙ্গলবার রাতে রবি পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন অভিযুক্ত ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন।
এদিনই ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ে ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ১৬ জন শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চুল কেটে দেওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে সোমবার রাতে শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।