শিক্ষাখাতে গবেষণার বিস্তৃতি ও বিনিয়োগ হতে হবে করমুক্ত
শিল্পখাতে বিদেশি কর্মী নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য শিল্পের চাহিদার সাথে সমন্বয় রেখে শিক্ষা কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যও যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়ন এবং গবেষণার উপর জোর দেয়ার পরামর্শ তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়ে, এই বিনিয়োগকে কর মুক্ত রাখার আহবান জানান তারা।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'শিল্প ও শিক্ষাখাতের সমন্বয় : শিক্ষাখাতের ভূমিকা' শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা উঠে এসেছে।
তারা বলেন, নতুন শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার সকল স্তরে গবেষণা কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গণিত-এর উপর আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুসরণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিকায়ন এবং সর্বোপরি শিল্প ও শিক্ষাখাতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সমন্বয় থাকতে হবে।
ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, 'প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠদান শেষে শিল্পখাতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকায় শিক্ষিত তরুণরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে।
অন্যদিকে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি নাগরিকদের উপর প্রতিনিয়ত নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে'।
পরিস্থিতি পরিবর্তনে শিল্প ও শিক্ষাখাতের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার ওপর জোর দেন এই ব্যবসায়ী নেতা। শিক্ষাখাতের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য শিল্পখাতের আর্থিক সহায়তা বা বিনিয়োগকে করমুক্ত রাখার আহবানও জানান তিনি।
ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) এর উপ-উপাচার্য এম আবুল কাসেম মজুমদার, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর উপাচার্য ড. কারম্যান জেড লামাগনা এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর বিশেষ উপদেষ্টা ও ডীন প্রফেসর ইমরান রহমানসহ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত যোগ দিতে পারেননি।
এআইইউবি-এর উপাচার্য ড. কারম্যান জেড লামাগনা বলেন, 'শিল্প ও শিক্ষাখাতের বিদ্যমান দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয়ের জন্য সরকারকে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে হবে'।
বিইউপি'র উপ-উপাচার্য এম আবুল কাসেম মজুমদার, শিল্প ও শিক্ষখাতের সমন্বয়ের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচনে শিল্পখাতের প্রতিনিধিদের অর্ন্তভুক্ত করার প্রস্তাব করেন।
বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, 'বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শিক্ষা ও শিল্পখাতের দীর্ঘমেয়াদী সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদেরকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং কার্যক্রম চালুর প্রস্তাব করেন তিনি'।
ওয়েবিনারে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।