শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনেশনের বিষয়ে এখনো পরিকল্পনা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
আগামী ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে হবে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। তবে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা প্ল্যান করতেছি। ভ্যাকসিন দিতে হলে তো ভ্যাকসিন পেতে হবে। আমাদের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেড় কোটি মানুষকে দেয়া হবে। ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ আছে সাড়ে চার কোটির মত। তাদের আগে ভ্যাকসিন দেয়ার অঙ্গীকার ছিলো। এখন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। স্কুল খোলার একটা ওয়ে আউট বের করার চেষ্টা করছি আমরা।"
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে ৪০ বছরের কম বয়সীদের ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা নেই। এখন ১৯ টি শ্রেণী পেশার মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবলায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে অঅগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। শিক্ষকেরা অনেকেই ৪০ বছর বয়সী। আর ৪০ বছরের কম বয়সী শিক্ষকদেরও ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। যাদের বয়স ১৮'র বেশি তাদেরকে সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সামনে ভ্যাকসিন যতটুকু সহজলভ্য হবে তার ওপর ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম নির্ভর করবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিশ্বের ৫৪ তম দেশ হিসেবে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ যা দেশজুড়ে শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রথম মাসেই দেশের ৬০ লাখ মানুষকে টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দেশে টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে।
সোমবাার এক ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, হল খোলার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, আবাসিক হলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকার ব্যবস্থা করা হবে।
দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২০টি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মোট শিক্ষক আছেন ১৫ হাজার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ২৫ হাজার। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৬টি। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে দেশের প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদেরকে হল খোলার ১ মাস আগে অর্থাৎ, আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার জন্য মঙ্গলবার সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাবি হলে ওঠার ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হলো টিকা নিতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের শারীরিক সমস্যা আছে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে এখনো শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে অফিসিয়ালি জানানো হয়নি।
জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির কোর কমিটির সদস্য ও আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পর্যায়ক্রমে ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৮০% মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে এখনই শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। আমরা তো এখনো জানি না কত স্টুডেন্ট আবাসিক হলে থাকে। আলাদা করে তাদের তথ্য পাঠালে তখন পরিকল্পনা করা হবে।"
গতকাল মঙ্গলবার দেশের ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ জনকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া হয়। টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে গত ১৪ দিনে টিকা দেওয়া হয়েছে ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৩ জনকে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ভ্যাকসিন পেতে নিবন্ধন করেছেন ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার জন।
বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ১ হাজার ৫ টি কেন্দ্রে এ টিকাদান কর্মসূচি চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যাতীত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দেশের চল্লিশোর্ধ্ব নাগরিকদের কোভিড-১৯ টিকা দিতে কাজ করছে প্রায় ২৪০০ টিম।