শেখ হাসিনা নারীনেত্রী হওয়ায় বারবার জঙ্গিদের হত্যাচেষ্টা: হাইকোর্ট
শেখ হাসিনা নারীনেত্রী হওয়ার কারণেই বারবার জঙ্গিদের এমন হত্যাচেষ্টার মুখে পড়তে হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, এ ধরনের সংঘটিত অপরাধকে শুধু চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হলে, তা অযৌক্তিক বলে বিবেচিত হবে। কারণ, মূল উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আসামীরা তাঁদের লক্ষ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
আদালত বলেছেন, 'ষড়যন্ত্রকারী সব আসামি তালেবানি কায়দায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটনের জন্য মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য আসামিদের দায়িত্ব দিয়েছিল।'
২০০০ সালের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
আলোচিত এই মামলায় ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া ৮৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
এই রায়ে বলা হয়েছে 'আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামীরা দেশের প্রচলিত আইন মান্য করতে নারাজ। তারা জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে তাদের নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে চায়। কিন্তু তাদের এই ধরনের চিন্তা দেশের প্রচলিত আইন কখনো সমর্থন করে না। কারণ, তারা সকলেই জন্মগতভাবে এ দেশের নাগরিক। ষড়যন্ত্র করে ও দুটি বোমা পোঁতার মধ্য দিয়ে যে অপরাধ তারা সংগঠিত করেছে, তা অত্যন্ত ভয়ংকর ও জঘন্য। এ অবস্থায় কয়েকজন কয়েদির (দণ্ডিত আসামী) দীর্ঘ হাজতবাসে তাদের দণ্ড লঘু করার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।'
রায়ে আরো বলা হয়েছে, 'আসামীরা তাদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন যে একটি নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করবেন মর্মে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিস্ফোরকদ্রব্যের সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে দুটি বোমা তৈরি করে ঘটনাস্থালে স্থাপন করেছিলেন তাঁরা। ষড়যন্ত্র অনুযায়ী কাজ সম্পাদনের জন্য আসামীরা বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দুটি বোমা তৈরি ও তা মাটির নিচে পুঁতে রাখার মধ্য দিয়ে, যাতে ধ্বংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত হয়।'
এছাড়া হাইকোর্ট এই পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেছেন যে, 'এ ধরনের সংঘটিত অপরাধকে শুধু চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হলে তা অযৌক্তিক বলে বিবেচিত হবে। কারণ, মূল উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আসামিরা তাঁদের লক্ষ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন।'
কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (৭৬ কেজি ওজনের বোমা মামলা হিসেবে পরিচিত) ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন ও একজনের ১৪ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ে নিম্ন আদালতে ১৪ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সরোয়ার হোসেন মিয়াকে খালাস দেওয়া হয়। ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স এবং কারাবন্দি আসামিদের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই রায় দেন হাইকোর্ট।
মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা আসামিরা হলেন ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, মো. রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে শিমন খান, মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন ওরফে মোসাহাব মোড়ল, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর।
এ ছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে গাজী খান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন এবং আনিসুল ওরফে আনিস ও মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানকে দেওয়া ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে কারাবন্দি এই দুজনের এরই মধ্যে সাজাভোগ করা হয়ে গেলে তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে। আর নিম্ন আদালতে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সরোয়ার হোসেন মিয়াকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
এই মামলায় হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, আসামীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো: নাসিরউদ্দিন। এছাড়া পলাতক আসামীর পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন আমূল্য কুমার সরকার।