সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। টানা দুই দিন ধরে দিনে ৫ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে পালন করলে এখনো সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু এসব নির্দেশনা যদি কাগজে-কলমে থাকে, বাস্তবায়িত না হয় তাহলে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ ভয়াবহ হবে।
দেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের লকডাউনের সক্ষমতা নেই। জীবন ও জীবিকার স্বার্থে আমাদের সবকিছু খুলে রাখতে হবে। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে'।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, 'গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক করতে হবে এছাড়া সামাজিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় সব ধরণের জনসমাগম সীমিত করতে হবে। সরকারের সব সেক্টরকে সমন্বিতভাবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এবার ভুল করলে মৃত্যু বাড়বে পাশাপাশি অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্থ হবে'।
মঙ্গলবার গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে আরও ৫ হাজার ৪২ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ এ।
এছাড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও সপ্তাহজুড়ে ওঠানামা করছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবারও দেশে কোভিডজনিত কারণে ৪৫ জন মারা গিয়েছিল। গত বছরের ২৮ আগস্টের পর এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা। এ নিয়ে গত ১ বছরে কোভিডজনিত কারণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৯৯৪।
গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম পরামর্শক ডা.এম মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্দেশনাগুলো যথেষ্ট নয়, কিন্তু আমাদের এর বিকল্পও নেই। কারণ আমরা সবকিছু বন্ধ রাখতে পারবো না। আমাদের এখন দেখতে হবে, এই নির্দেশনাগুলো যেন সর্বোচ্চ উপায়ে পালন করা হয়, তাহলে ঝুঁকি কমবে। তা না হলে মহামারী মোকাবেলায় সবকিছু বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবেনা'।
তিনি বলেন, 'স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করবে নির্দেশনাগুলো কিভাবে ধাপে ধাপে পালন করা হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সরকার, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সেখানে সহায়তা করবে। এছাড়া রোগীর চাপ সামলাতে বন্ধ হাসপাতালগুলো দ্রুত চালু করতে হবে। এছাড়া হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যালুনা, অক্সিজেনের জোগান বাড়াতে হবে'।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সোমবার দুপুরে সরকারি সিদ্ধান্ত আসার পরেও রাতে এর তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। গণপরিবহণ থেকে শুরু করে ধর্মীয় উপাসনালয় সবক্ষেত্রে লোক সমাগম বেশি ছিল এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে ছিল উদাসীনতা। তবে মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকায় ঢাকার রাস্তা ও গণপরিবহনে মানুষের উপস্থিতি কম ছিলো।
পরিবহন সেক্টর ও বিমান কতৃপক্ষ ৩১ মার্চ, রেলওয়ে ৬ এপ্রিল থেকে পুরোপুরিভাবে নির্দেশনাগুলো মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার থেকে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়বে ৬০%
বুধবার থেকে সারাদেশে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের এ বিষয়ে কঠোর হবার নির্দেশনা দেন।
তবে মঙ্গলবার গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
বলাকা বাস সার্ভিস এর ড্রাইভার বাহাদুর টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে আমরা ব্যবস্থা করবো'।
রেলের টিকেট বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক সংখ্যক
এছাড়া মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আগামী ১লা এপ্রিল, ২০২১ হতে সকল ট্রেনে ৫০% যাত্রী পরিবহন করা হবে।
সেখানে আরও জানানো হয়, প্রতিটি ট্রেনের ৫০% টিকিট বিক্রয় করা হবে। যার ২৫% কাউন্টারে এবং ২৫% অনলাইনে বিক্রয় করা হবে। যাত্রীদের অযথা কাউন্টারে ভীড় করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
অধিকাংশ বিপণিবিতানগুলো ফাঁকা
মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মৌচাক, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায় বড় বড় শপিংমলগুলোর অধিকাংশই শবে বরাতের কারণে বন্ধ ছিলো। যেগুলো খোলা ছিল সেগুলোতে লোকসমাগম কম ছিলো।
মৌচাকের একটি দোকানদার শিমুল মিয়া টিবিএসকে বলেন, 'সকাল থেকেই আজ লোক সমাগম কম। দুপুরের পর দুই এক জন কাস্টমার এসেছে। একদিকে ছুটির দিন আবার করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় উপস্থিতি কম এবং আমাদের বিক্রিও নেই'।