সিস্টেমটাই তাদের এমন নিষ্ঠুর বানিয়েছে, জবানবন্দিতে অনীক জিয়ন
বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার অনীক সরকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ‘সিনিয়রদের নির্দেশনা মেনে কাজ করার’ কথা বললেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১২ অক্টোবর) বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনীক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে দেখা যায়, আবরারের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করছেন তিনি।
তবে আবরারকে হত্যা করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না সে কথাও জানান অনীক।
অভিযুক্ত এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরও জানান, তাদের কথা যারা মানত না তেমন শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের নিপীড়ন তারা আগেও করেছেন।
আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে ঘণ্টাখানেক নির্যাতন করার কথাও স্বীকার করে অনীক বলেন, সম্ভবত সে কারণেই তিনি মারা গেছেন।
“বুয়েট এটা নতুন কিছু নয়, সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতারা শিবির-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাদের প্রায়ই এ ধরনের কাজ করতে নির্দেশনা দেন”— জানালেন অনীক।
কান্নায় ভেঙে পড়ে অনীক বলেন, “আবরারের মৃত্যুর জন্য সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে। কিন্তু আমি তো শুধু সিনিয়রদের নির্দেশনামতো কাজ করছিলাম। সিনিয়ররা আমাকে ভয়ও দেখাচ্ছিল, ব্যর্থ হলে আমাকে এর ফল বহন করতে হবে। বুয়েটে ছাত্রলীগ এভাবেই কাজ করে।”
আবররারকে এক ঘণ্টা ধরে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানোর কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
তবে এই নির্মম প্রহারের আগে ও পরে তিনি মদ্যপান করেছিলেন। অনীক জানান, “আবরারকে ওভাবে মেরে আমি আমার রুম ৫০৭ নম্বরে যাই। সেখানে আবার একটু মদ খেয়ে শুয়ে থাকি যেন কিছুই হয়নি।”
বুয়েট ছাত্রীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিনকে এজন্য দায়ী করলেন অনীক। তিনি বললেন, “আমি তো এমন ছিলাম না। নটর ডেম থেকে যখন বুয়েটে পড়তে আসি তখন খুব হাসিখুশি ছিলাম। জানি না কীভাবে এমন হয়ে গেলাম।”
আদালতে অনীক সে রাতের ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, “সিনিয়র জুনিয়র যে-ই হোক, আমরা তাদের এভাবে পেটাতাম। আবরার মারা গেছে দুর্ঘটনাক্রমে। আমাদের মতের সঙ্গে না মিললে কাউকে পিটিয়ে বের করে দিতে পারলে ছাত্রলীগের হাই কমান্ড আমাদের প্রশংসা করত। সিস্টেমটাই আমাদের এমন নিষ্ঠুর বানিয়েছে।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, তিন জন এরই মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আরও কয়েক জন দেবেন।
তিনি বলেন, “এর বেশি কিছু বলার নেই। তদন্ত চলছে। তাই এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত শেষ হলে মিডিয়ায় ব্রিফিং করা হবে।”
অনীক ও জিয়নের জবানবন্দিতে প্রদত্ত তথ্য প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “আমরা সবসময় সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের কর্মী-নেতাদের অনৈতিক ও সন্ত্রাসী কাজকর্ম করতে বলব কেন?”
জয় আরও বলেন, “আমরা বুয়েট ছাত্রলীগকে কখনও কাউকে মারতে বা দমিয়ে রাখতে আদেশ দিইনি।”
এ প্রসঙ্গে বুয়েট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট খন্দকার জামিউস সানি জানালেন, তারাও কখনও সাধারণ ছাত্রদের নিপীড়ন করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেননি।
সানি বলেন, “আমরা বহু ধরনের রাজনৈতিক মতের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। অভিযুক্তরা পুলিশের কাছে ভুল তথ্য দিচ্ছে।”