হেনস্তার পর নারী যাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দিলেন উবার চালক
গাড়িতে একদফা হেনস্তার পর অ্যাপে থাকা ফোন নম্বরে কল দিয়ে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাইড শেয়ারিং সেবা উবারের একজন চালকের বিরুদ্ধে।
রোববার মিরপুরের ভাসানটেক বাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
ওই নারী যাত্রী বলছেন, চালকের ‘হয়রানির’ প্রেক্ষিতে তিনি যখন উবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেবেন বলে জানান, তখন চালকের উত্তর ছিল, উবার কর্তৃপক্ষ তাকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করতে পারবে, এর বেশী কিছু করার ‘ক্ষমতা’ তাদের নেই।
নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমরা দু’জন পল্লবী থেকে ভাসানটেক থানায় যাওয়ার জন্য উবারে কল দিয়েছিলাম। শ্রী মিঠু নামে একজন চালক কল একসেপ্ট করলে আমি তাকে বলি যে, আমরা ভাসানটেক থানায় যাব। উবারের অ্যাপে থানার লোকেশান না দেখানোয় ভাসানটেক বাজারের ঠিকানা দিয়েছি। উনি আমাদের থানা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে রাজি হন।”
ভুক্তভোগী এই যাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, তারা ভাসানটেক বাজারের পৌঁছালে উবার চালকের অন্য একটি রাইডের জন্য কল আসে। তখন ওই চালক তাদের থানার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অস্বীকৃতি জানান।
“উনার অ্যাপে আরেকটা কল আসলে তিনি আমাদের বাজারের মধ্যেই নেমে যেতে বলেন। থানা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে আমি উনাকে অনুরোধ করলে উনি আমাদের বলেন, রিকশা নিয়ে যেতে। এরপর আমরা যখন তাকে বলি যে আমরা উবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবো তখন সে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে এবং বলে, উবার তাকে সর্বোচ্চ ১৬০০ টাকা জরিমানা করতে পারবে, এর বেশি ক্ষমতা তাদের নেই। আমরা যখন বলি যে উবার হেল্পলাইনে যোগাযোগ করবো, তখন সে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে, উবার তাদের হেল্পলাইন বন্ধ করে দিয়েছে।”
এসময় ওই উবার চালক গাড়ি থেকে নেমে সড়কের পাশে দাঁড়ানো এক পুলিশ সদস্যকে ডেকে আনেন এবং বলেন, এই দুই নারী যাত্রী তার গাড়িতে ‘উঠে বসে আছেন ও নামতে চাচ্ছেন না’ এবং তারা ‘ভাড়াও পরিশোধ করছেন না’। তবে পুরো ঘটনা শুনে ‘চালক মিথ্যা বলছেন’ সন্দেহ করে ওই পুলিশ সদস্য নারী যাত্রীদের পক্ষেই কথা বলেন।
পরবর্তীতে এই দুই নারী যাত্রী ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, উবার অ্যাপে প্রথমে যে ভাড়া দেখানো হয়েছিল, পরিশোধের সময় তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
“প্রথমে উবার অ্যাপে যে ভাড়া দেখিয়েছে, আমরা তা দিতে চাইলে ড্রাইভার আমাদের উপর ক্ষেপে যান। তিনি আমাদের গালি-গালাজ করা শুরু করেন আমরা প্রতিবাদ করলে, সে আমার পিঠে থাকা ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করে।”
এই নারী জানান, চালকের এমন ‘অস্বাভাবিক এবং আগ্রাসী’ আচরণে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর চালক উবার অ্যাপে থাকা ওই নারীর ফোন নম্বরে ফোন করে তাকে ধর্ষণের হুমকি দেন।
নারী যাত্রীকে দেয়া উবার চালকের ধর্ষণের হুমকির কথোপকথনের অডিও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে রয়েছে।
ভুক্তভোগী এই দুই নারী উবার আপের মাধ্যমে এই চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গিয়ে দেখেন প্রকৃতপক্ষেই উবারের কোন হেল্পলাইন বা হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।
তবে অন্য একটি মাধ্যমে তারা অভিযোগ জানান। উবার কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে অভিযোগকারী নারীর সাথে অ্যাপের মাধ্যমেই যোগাযোগ করে এবং চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে।
ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, “তারা কিসের ব্যবস্থার কথা বলছে যেখানে তারা (উবার) অভিযোগের তালিকা থেকে যৌন নিপীড়নের মতো অপশনটিকে বাদ দিয়েছে। এটা কি আসলেই সত্যি, এরকম ভয়ংকর অপরাধ করলেও উবার মাত্র ১৬০০ টাকা জরিমানা করে? আমি এটা ভাবতেও পারছি না যে, চালকরা আজকাল যাত্রীদের রেইপ করারও হুমকি দেয়!”
অভিযুক্ত উবার চালককে ফোন দেয়া হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলছেন, এই দুই নারী যাত্রী তাদের লোকেশন ভুল করেছিলেন এবং তারা দীর্ঘ সময় তার (চালক) সাথে ‘তর্ক’ করেছেন।
ধর্ষণের অভিযোগও অস্বীকার করেন ‘শ্রী মিঠু’ নামে এই চালক। তার দাবি, উবার তাকে এ ঘটনায় জরিমানা করেছে এবং সোমবারই তার অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে মাত্র একদিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার সকালেই উত্তরায় উবারের অফিসে গিয়ে অ্যাপটি চালু করেন তিনি।