৩৬৩৪ কোটি টাকা পাচার করেছেন পিকে হালদার: বিএফআইইউ
নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগিরা জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পাচার করেছেন বলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
পিকে হালদার ছাড়াও আরও ৮২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসছে তার সহযোগী হিসেবে। আগামী ২০ জানুয়ারি বিএফআইউর প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে উপস্থাপন করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএফআইইউ পিকে হালদারের এই অর্থ আত্মসাত ও পাচারের বিষয়ে তদন্ত করে গত বুধবার তাদের প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করে।
আগামী ২০ জানুয়ারি এই প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি জানান, রিপোর্টের মাধ্যমে এই শীর্ষ অর্থপাচারকারীর পূর্ণাঙ্গ একটি চিত্র দিয়েছে বিএফআইইউ।
এই ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। তালিকায় পিকে হালদারসহ সম্প্রতি দুদকের হাতে গ্রেফতার তার 'বান্ধবী' অবন্তিকা বড়ালের নামও রয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মানিক টিবিএসকে বলেন, 'বিএফআইইউ প্রতিবেদনে বলেছে, ভারত, কানাড ও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতে আত্মসাত করা এসব অর্থ পাচার করে বাড়ি ক্রয়সহ নানা কাজে লাগিয়েছেন পিকে হালদার।'
বিএফআইইউ তার প্রতিবেদনে বলেছে, বিএফআইইউ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অফিস পরিদর্শন করে। পরিদর্শন করে দেখা যায়, ২০১৫ সালে চারটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণের পরবর্তী তিন-চার বছরে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে আত্মসাত করেন পিকে হালদার। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৪৩টি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ঋণের অর্থের গতিপথসহ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পিকে হালদার ও তার সহযোগী ৮৩ ব্যক্তি ঋণের আড়ালে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির এসব অর্থ আত্মসাত করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
বিএফআইইউর প্রতিবেদন দুদককে পাঠানো হয়েছে। দুদকও এসব বিষয়ে কাজ করছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
গত ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে 'পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক' শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুসারে ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। এরপর ৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের কাজিন পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে পিকে হালদারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল।
ধার্য তারিখ অনুসারে মামলাটির শুনানি শুরু হলে দুদক আইনজীবী আদালতের কাছে এসব আমানতকারীর কথা তুলে ধরেন এবং তারা আদালতের সামনে কথা বলার অনুমতি চান।
এরপর তারা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের আমানত ফিরে পেতে আকুতি জানান। ৫ জানুয়ারি আমানতকরীরা লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের আবেদনে ২৫ জনের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।
এদিকে ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করে ইন্টারপোল।