‘এসআই খায়রুলকে চিনি, ভয়ে নাম বলিনি’
যশোরের শার্শায় গণধর্ষণের অভিযোগ আনা নারী বলেছেন, পুলিশের এসআই খাইরুল ইসলামকে চিনলেও তার ভয়ে মামলায় এই পুলিশ সদস্যের নাম দেননি তিনি।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি জানান, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা প্রায়ই তার বাড়ি গিয়ে টাকা নিতেন। আতঙ্ক থেকেই খায়রুলের নাম মামলা থেকে ‘বাদ দিতে বাধ্য হন’ তিনি।
তিনি বলেন, “আমি খায়রুলকে শুধু চিনি-ই নাই, ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তিনি। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।”
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, কয়েক দফা খায়রুলকে অভিযোগকারী এই নারীর সামনে উপস্থিত করা হলেও তিনি ‘নিজেই নাম বাতিল’ করে দেন।
শার্শার এই গৃহবধূ সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে আসছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কিনা, তখন আমি বিবেচনা করে দেখলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমি পারবো না। তাছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তার চোখের ভাষায় আমি বুঝতি পারছি।”
“আমি অসহায়। খায়রুলের নাম বললে যদি আমাকে মামলায় জড়িয়ে দেয় সে কারণে আমি ভয়েতে তার নাম বলতে পারিনি। খায়রুল দারোগা এবং ওনার সাথে যারা আমার সাথে অপকর্ম করেছে, ওনাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় আমি এটাই চাই।”
মাদকের মামলায় স্বামীর জামিন পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে ওই নারীর কাছে টাকা দাবি এবং ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শার্শা থানার এসআই খায়রুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার শার্শার আমলি আদালতে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন ওই নারী। এসআই খায়রুলকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে নিলেও মামলায় আসামি করা হয়নি তাকে।
এ বিষয়ে শার্শা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, “ওই নারীর অভিযোগের পর চারজনকেই তার সামনে হাজির করা হলে তিনি এসআই খায়রুল ছাড়া বাকি তিনজনকে শনাক্ত করেন।”
ওসি মশিউর জানিয়েছেন, ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য ডিএনএ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে যশোর সদরে হাসপাতালে ৩০ বছর বয়সী ওই নারীর কাছ থেকেই ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে পারেন।
তার অভিযোগ, সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এসআই খায়রুল আরও তিনজন লোককে নিয়ে তার বাড়িতে আসেন এবং দরজা খুলতে বলেন।
তিনি বলেন, তিনি খাইরুলের সঙ্গে তার গ্রামের দুজনকে দেখে দরজা খোলেন। খায়রুল ও তার সোর্স শার্শা উপজেলার চটকাপোতা গ্রামের কামারুল ঘরে ঢোকেন। মাদকের মামলায় আটক তার স্বামীকে জামিনের বিনিময়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এস আই খায়রুল। তিনি (নারী) রাজি না হলে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে খায়রুল ও কামারুল তাকে ধর্ষণ করেন। এসময় লক্ষ্মণপুর গ্রামের লতিফ ও কাদের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন এই নারী।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি পৌঁছান তিনি। কিন্তু এরপর থেকেই ওই নারীকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। এসব বিষয়ে তার প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা ‘পুলিশের হয়রানির ভয়ে’ কথা বলতে চাননি। তবে স্থানীয় একজন বলেছেন, নির্যাতিত ওই নারীর স্বামী খুবই ‘সাধারণ’ একজন মানুষ। পুলিশ তাকে ‘অহেতুক কারণে’ ধরে নিয়ে গেছে।
ওইদিনই এসআই খায়রুলকে প্রত্যাহারের খবর জানিয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন শিকদার বলেন, “মামলার তদন্ত চলছে, অজ্ঞাত ব্যক্তিটি যদি পুলিশও হয় তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শুক্রবার সকালে ওই গ্রামে গেলে দেখা যায় পুরো গ্রামজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে। ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।