গ্যাস সংকটে বন্ধ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিইউএফএল
গ্যাস সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিসিএল) গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিন গড়ে পৌনে দুই কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে।
অথচ একই এলাকায় অবস্থিত কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে কেজিসিএল। এতে কোম্পানিটির উৎপাদন চলছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে কাফকোতে সরবরাহ চালু রাখায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিইউএফএল কর্মকর্তারা।
স্বাভাবিক সময়ে সিইউএফএল প্রতিদিন গড়ে ১২৫০-১৩০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে। প্রতি টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে কারখানাটির খরচ হয় মাত্র ৫ হাজার ৭০০ টাকা। যা সরাসরি সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বিসিআইসি)-কে সরবরাহ করে।
অপরদিকে কাফকো থেকে বিসিআইসিকে প্রতি টন ইউরিয়া কিনতে হয় ১ লাখ ৩ হাজার টাকায়।
সিইউএফএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাইনুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কারখানার। গ্যাস–সংকটের কারণে এমনটি হয়েছে।
সর্বশেষ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে আড়াই মাস কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ ছিল। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবার চালু হয়।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, সচল থাকলে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদিত হওয়ার কথা। বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া এবং ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার।
সিইউএফএলের সিবিএ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নুরুল আমিন বলেন, 'সংকটের কথা বলে কেজিসিএল সরকারি প্রতিষ্ঠান সিইউএফএল'র গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ তার চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। এটি সরকারি কারখানা বন্ধ রাখার একটি ষড়যন্ত্র।'
সিইউএফএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাইনুল হক বলেন, 'বিসিআইসি নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিইউএফএলের বছরে উৎপাদিত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন ইউরিয়া সরবরাহ হয় বিসিআইসিতে। সিইউএফএলে প্রতি টন ইউরিয়া উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ৫ হাজার ৭০০ টাকা। যা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে কিংবা আমদানিতে লাখ টাকার উপরে খরচ পড়ে। সেই হিসাবে, গ্যাস সরবরাহে সিইউএফএলকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। কিন্তু কেজিসিএল সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলেও পাশ্ববর্তী কাফকোতে ঠিকই চালু রেখেছে। যা বৈষম্য।'
সনাক-টিআইবি'র চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, 'গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের এই সময়ে সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সিইউএফএল স্বল্প খরচে বিসিআইসির মাধ্যমে দেশের কৃষককে সার সরবরাহ করে থাকে। অন্যদিকে কাফকো থেকে চড়া দামে সার কিনতে হয় বিসিআইসিকে। এই অবস্থায় সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিইউএফএল বন্ধ করে কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।'
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ টন। বাকি সার আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার থেকে আমদানি করা হয়।
দেশের মোট উৎপাদিত ইউরিয়ার সাড়ে ৫ লাখ টনের বেশি সরবরাহ করে সিইউএফএল। কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারকে সার আমদানি বাড়াতে হবে অন্যথায় দেশের কৃষিতে সার সংকট তৈরি হবে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক যৌথ উদ্যোগে নির্মিত সার কারখানা কাফকো প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন এমোনিয়া এবং ১৭৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। বছরে উৎপাদিত প্রায় ৬ লাখ টন মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কাফকো থেকে বিসিআইসি কিনে নেয়।
তবে এই বিষয়ে কেজিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম মাজেদ বলেন, 'গ্যাস সংকটের কারণে সরকারি নির্দেশনায় আমরা সিইউএফএলে সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। অন্যদিকে কাফকো বাংলাদেশ সরকার সহ যৌথ উদ্যোগে নির্মিত সার কারখানা। কারখানাটিতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগে সরকারের চুক্তি রয়েছে। ফলে এসব কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ দিতে হচ্ছে।'