ঝর্না দেখতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লাশ হয়ে ফিরলেন ১১ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঝর্না দেখে মাইক্রোবাসে করে ফেরার পথে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে ১১ শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
নিহতরা হাটহাজারী এলাকার আরএন্ডজে প্রাইভেট কেয়ার নামের একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে মিরসরাইতে খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখে ফেরার পথে বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতীর ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে ৪ জন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক, ৬ জন শিক্ষার্থী ও একজন গাড়ির চালক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান ছিল না। এমনকি ক্রসিংয়ের থাকা প্রতিবন্ধক বাঁশটিও নামানো ছিল না। মাইক্রোবাসটি রেল লাইনে উঠে গেলে ঠিক এমন সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এর ফলে এই মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।
উপ-পরিচালক আনসার আলী বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী বড়তাকিয়া লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার মুখে পর্যটকবাহী মোইক্রোটি লাইনে উঠে পড়ে। সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে আটকে যায়, ওই অবস্থায় মাইক্রোবাসটিকে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ ছেঁচড়ে নিয়ে থামে ট্রেন।
নিহতদের মধ্যে কোচিং সেন্টারের চার শিক্ষক হলো- চট্টগ্রাম কলেজ ডিগ্রি পাস কোর্সের ছাত্র রিদোয়ান চৌধুরী (২২), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), ক্যান্টেন্টম্যান্ট পাবলিক কলেজের বিবিএর ছাত্র ওয়াহিদুল আলম জিসান (২২) ও জিয়াউল হক সজীব (২২)।
নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন- এসএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান, মোসহাব আহমেদ হিসাম (১৬), তৌহিদ ইবনে শাওন (২০), সাগর, ইকবাল হোসেন মারুফ ও আয়াতুল ইসলাম। অপরজন মাইক্রোবাসের চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬)।
আহত ৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে হৃদয় (১৫), মাহিন (১৬), তাশমির( ১৬), আয়াত (১৫), সৈকত (১৬)-কে। ইমন (১৫) ভর্তি আছেন ২৪ নং ওয়ার্ডে।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্ব অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক কমার্শিয়াল) আনসার আলীকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ায় বারবার রেল ক্রসিংয়ে মৃত্যু
আজকে মিরসরাইয়ে ১১ জন মৃত্যুর আগে চলতি মাসের ২১ জুলাই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কাঠামদরস্ত রেলক্রসিংয়ে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ভটভটিতে থাকা ৫ শ্রমিক নিহত হন।
এর আগে ১৭ জুলাই গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমির মাইজপাড়া রেলক্রসিংয়ে পোশাকশ্রমিক বহনকারী একটি বাসে ট্রেনের ধাক্কায় চারজন নিহত হন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব মতে, ২০১৪-২০ সাল পর্যন্ত রেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৫ জন। এর মধ্যে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে লেভেল ক্রসিংয়ে। রেলে দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়, তার ৮৩ শতাংশই রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু।
সনাক-টিআইবি'র চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, "রেলক্রসিংটিতে কোনো সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। লাইনম্যানও ছিলেন না। যার কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল। রেল ক্রসিং দুর্ঘটনায় বারবার এমন মৃত্যু হলেও কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা এড়াতে সুরক্ষিত রেলক্রসিং নির্মাণ ও পর্যাপ্ত গেটম্যান নিয়োগ দিচ্ছে না। অথচ প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার নতুন নতুন প্রকল্প নিচ্ছে সরকার।"
রেলওয়ে পূর্ব অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক কমার্শিয়াল) আনসার আলী বলেন, "ট্রেন আসায় গেইটম্যান সাদ্দাম বাঁশ ফেলেছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি বাঁশ ঠেলে ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে। এরপরও আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। যদি ওই সময় লাইনম্যান না থাকেন, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মহানগর প্রভাতি ফের দুর্ঘটনায় নিহত আরো একজন
মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনার পর কয়েক ঘন্টা বিলম্বে চট্টগ্রামে আসার পথে পাহাড়তলিতে ফের দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রেনটি। এই সময় ট্রেনটির নিচে পড়ে ১ জন মারা গেছে।