চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় চারটি বিরল সাদা শাবকের জন্ম দিলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আফ্রিকা থেকে আমদানি করা রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর ঘরে জন্ম নিয়েছে নতুন চারটি সাদা শাবক। শনিবার (৩০ জুলাই) বাঘিনী পরী এ চারটি বিরল বাঘ শাবকের জন্ম দেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নতুন জন্ম নেওয়া চারটি বাঘ শাবকই বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ। চারটিই সুস্থ আছে, মায়ের দুধই পান করছে। আপাতত শাবক ও মা বাঘকে দর্শনার্থীদের দেখানো হবে না।'
প্রতিটি বাঘশাবকের ওজন প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম। সাতদিন পরে এগুলোর লিঙ্গপরিচয় জানা যাবে। এর আগে গত ২৬ আগস্ট রাজ-পরী দম্পতির মেয়ে শুভ্রা একটি সাদা বাঘ শাবকের জন্ম দিয়েছিল বলে জানান কিউরেটর শুভ।
শাবকগুলো সাদা হলেও এগুলোর বাবা-মা সাদা রঙের নয়। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে সাদার মধ্যে কালো রঙের ডোরাকাটা এ ধরনের বাঘের জন্ম খুবই ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা।
কিউরেটর জানান, 'একমাস আগেই আমরা মা বাঘটিকে আলাদা করে ফেলেছিলাম। সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে আমাদের চিড়িয়াখানায় সাদা বাঘের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচটিতে।'
১৯৮৮ সালে চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়।
২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল এখানে। ২০০৬ সালে বাঘ 'চন্দ্র' মারা যায়। ২০০৯ সালে তার সঙ্গী 'পূর্ণিমার' ক্যান্সার ধরা পড়ে।
২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পূর্ণিমা মারা যাওয়ার পর বাঘশূন্য ছিল চিড়িয়াখানাটি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ চিড়িয়াখানায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির বাঘ-বাঘিনী রাজ-পরীকে আমদানি করা হয়।
এর আগে ২০১৮ সালে ১৯ জুলাই রাজ-পরীর প্রথমবারের মতো একটি বিরল সাদা বাঘের জন্ম দেয়। শুভ্রা নামের ওই বাঘটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সাদা বাঘ।
বর্তমানে চিড়িয়াখানাটিতে ৭২ প্রজাতির সাড়ে তিনশ'র বেশি প্রাণী রয়েছে; যার মধ্যে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৮ প্রজাতির পাখি ও চার প্রজাতির সরীসৃপ। চট্টগ্রামের একমাত্র এই চিড়িয়াখানায় বছরে প্রায় পাঁচলাখ দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় সিংহ, এশীয় কালো ভালুক, আফ্রিকান জেব্রা, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ, প্যারা হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, চিতা বিড়াল, গন্ধগোকুল (হিমালয়ান), গয়াল, খরগোশ, সজারু, শিয়াল ইত্যাদি।
চিড়িয়াখানার বিভিন্ন জাতের পাখির মধ্যে তিতির, ময়ূর, রাজধনেশ, কাকধনেশ, শকুন, মদনটাক, সাদা বক, নিশি বক, তিলাঘুঘু, ভুবন চিল, কোকিল, ময়না, খঞ্জনা পাখি, ও তার্কি মুরগি উল্লেখযোগ্য।