উন্নয়ন প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ডিএনসিসি মেয়র
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজধানীতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রোববার (২১ আগস্ট) নগর ভবনে এক মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, "নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বারবার বলা হলেও কেউই বিষয়টিতে কর্ণপাত করছে না। ক্রেন দিয়ে যখন মালামাল তোলা হচ্ছে, তখন নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এখানে নিরাপত্তা কোথায়?"
"এটি কেবল কথায় নয়, কগজপত্রেও এটি নিশ্চিত করতে হবে, ঠিকাদারদের অবশ্যই সমস্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে", বলেন তিনি।
মেয়র আরও বলেন, "আমরা ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে যেকোনো সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করবো। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
"এই বিষয়টি (নিরাপত্তা) ডিএনসিসি দ্বারা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর লঙ্ঘন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে", যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে ঢাকায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হায়দার প্রমুখ।
গত সোমবার উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার গাড়ির ওপর চাপা পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, "ঘটনার পরদিন আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং সেখানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে পাইনি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কবে সচেতন হবে?"
মেয়র আতিক ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করেন যাতে দেখা যায়, রাজধানীর শেওড়া এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ক্রেন দিয়ে ভারি জিনিস তোলা হচ্ছে। একই সময়ে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই যথারীতি ক্রেনের নিচে যানবাহন চলাচল করছে।
তিনি জানান, শনিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভিডিওটি করে তার কাছে পাঠিয়েছেন।
শনিবার গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের একটি স্থানে গাড়ির ওপর রড পড়ার আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এসব ঘটনায় সরকার বিব্রত।
"সরকারের এমন বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়। জনগণের এভাবে কষ্ট পাওয়াও উচিত নয়," দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
মেয়র আতিক বলেন, পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এন. সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
"আমাদের কাজ পর্যালোচনার জন্য বিদেশি ইঞ্জিনিয়াররাও আমাদের সাইটগুলো পরিদর্শন করেন। সেখানে সেফটির বিষয়গুলো সবার আগে দেখেন তারা", বলেন তিনি।
এ.এন. সিদ্দিক আরও জানান, বিআরটিতে একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেসব ঠিকাদারের কাজে দূর্ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঠিকাদারদের বিষয়ে তাদের দেশকে জানানো দরকার।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক আরমানা সাদিয়া হক বলেন, শহরে উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোতে সবচেয়ে বেশি দরকার এনফোর্সমেন্ট। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অনেক পিছিয়ে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সরকারি ছুটির দিনে কোনো কাজ সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন না। এমনকি ঠিকাদারও কনসালটেন্টদের অবহিত করেননি এবং তারা এটিকে অত্যন্ত নগণ্য বিবেচনা করে কাজ চালিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর পেছনে আরও কিছু আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেহেতু শোক দিবসের দিন ঘটনাটি ঘটেছে, সেহেতু বিষয়টি কেউ ঘটিয়েছে কিনা সেটাও খোঁজা হচ্ছে।
"দরকার হলে চীন সরকার ও অ্যাম্বাসাডরকে বিষয়টি জানানো হবে", যোগ করেন তিনি।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়া বলেন, রাজউক যেকোনো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরাপত্তা বিধি মেনে চলে। বিআরটি প্রকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা থেকে গাজিপুর যাওয়ার রাস্তায় কিছু স্থানে গার্ডার বসানো হচ্ছে এবং কিছু স্থানে খোড়া হচ্ছে। আগামী ৫ বছর হয়তো আরও ভোগান্তি পোহাতে হবে। এ বিষয়টির কোনো সুরহা আছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন রাখেন রাজউক চেয়ারম্যান।