দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলের কাজ শুরু ডিসেম্বরে
দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল নির্মাণের তদারকির জন্য রোববার (২৩ অক্টোবর) আট কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। চলতি বছরের ডিসেম্বরে শুরু হবে প্রকল্পটির কাজ।
চুক্তি অনুসারে, জাপানি নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডের নেতৃত্বে কনসোর্টিয়ামটি রাজধানীতে ৩১.২৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ রেল প্রকল্প বা এমআরটি লাইন-১ নির্মাণের তত্ত্বাবধান করবে।
কনসোর্টিয়ামভুক্ত কোম্পানিগুলো হলো- নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেড (জাপান) জেভি, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড (জাপান), সিস্ট্রা এসএ (ফ্রান্স), দিল্লি মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড (ভারত), নিপ্পন কোই ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, কাতাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল (জাপান), ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড (বাংলাদেশ) এবং নিপ্পন কোই বাংলাদেশ লিমিটেড।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক এবং নিপ্পন কোই বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাওকি কুডো নিজ নিজ পক্ষের হয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া; আর এরজন্য প্রয়োজন একটি স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা।
২০২৮ সালের সময়সীমা নির্ধারণ করে ভূগর্ভস্থ মেট্রো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
এমআরটি লাইন-১ এর দুটি অংশ থাকবে– হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর (বিমানবন্দর রুট) পর্যন্ত ১৯.৮৭ কিলোমিটার অংশটি ভূগর্ভস্থ হবে এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল (পূর্বাচল রুট) পর্যন্ত প্রায় ১১.৩৭ কিলোমিটার অংশটি হবে এলিভেটেড লাইন।
'সরকার নেটওয়ার্ক স্থাপনে ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে,' উল্লেখ করে কাদের বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীতে মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট তৈরি করা হবে।
ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি, এখন এমআরটি-৬ বা উত্তরা-মতিঝিল মেট্রো রেলের কাজ বাস্তবায়ন করছে।
কোম্পানিটি ডিসেম্বরে পূর্বাচলে ভূগর্ভস্থ রেল ডিপো নির্মাণ শুরুর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৯ সালে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকায় এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে সরকার ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা এবং দেবে জাপান ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
তবে, কোভিড মহামারির কারণে একনেক অনুমোদনের পরেও নির্মাণ কাজ একাধিকবার বিলম্বের মুখোমুখি হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্পটিকে ১২টি প্যাকেজে ভাগ করে ভূগর্ভস্থ মেট্রো নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
নভেম্বরে কনসালটেন্সি চুক্তি স্বাক্ষরের পর, ভূমি উন্নয়নের প্রথম প্যাকেজের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমেই শুরু হবে।
লাইনটিতে ২১টি স্টেশন থাকবে- ১২টি আন্ডারগ্রাউন্ড এবং নয়টি এলিভেটেড। এই লাইনে প্রতিদিন ৮ কোচ বিশিষ্ট ২৫টি ট্রেন চলাচল করবে। একটি ট্রেনের ধারণক্ষমতা হবে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৮জন।
কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। এছাড়া, নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড এবং কমলাপুর থেকে পূর্বাচল যেতে লাগবে ৪০ মিনিট।
বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুটে প্রতি আড়াই মিনিটে একজন যাত্রী ট্রেন ধরতে পারবেন, আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল রুটে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৪ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড।
ট্রেনগুলো 'অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের' মাধ্যমে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাত্রীদের সহজে রেল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জন্য ভূগর্ভস্থ এবং এলিভেটেড স্টেশনগুলোতে থাকবে লিফট, সিঁড়ি এবং এসকেলেটর।
কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৮ সালে উদ্বোধনের পরে প্রায় ৮ লাখ যাত্রী প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেলে যাতায়াত করতে পারবেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রো রেল চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন ৫০ লাখেরও বেশি যাত্রী এই আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থায় যাতায়াত করতে পারবেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনটি মেট্রো রেল প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) কে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া, মেট্রো রেলের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ঢাকাকে সংযুক্ত করতে এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪-এর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনার জন্য আরও সহায়তার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি ঢাকায় যাতায়াতের সময় বাঁচাতে এবং রাজধানীর পরিবেশ রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড।